মৌলবাদ শব্দের অর্থ হচ্ছে মূলের প্রতি আনুগত্য। আমি মনে করি মৌলবাদের ধারনাটি সময়ের কিংবা মানুষেরই চাহিদাবিরুদ্ধ। কারণ এটি বর্তমান বা সমকালকেই উপেক্ষা করে, এটি অতীত বা ঐতিহ্যের প্রতি নিষ্ঠার আবেগ থেকে প্রসূত। কিন্তু মানুষতো অতীতে বাস করেনা, করে বর্তমানে। ধর্ম ঠিক ভাষার মতই বহমান। এর একটি সামনের দিকে ধাবমান স্রোত আছে। বর্তমানে বাস করেও অতীতকে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা নদীর স্রোতকে উল্টো দিকে ফিরিয়ে দেয়ার মতই, বৈজ্ঞানিক ভাবে যেটা অসম্ভব। জোর করে করতে গেলে নদীর, প্রকারান্তরে ধর্মের মৃত্যুই অবশ্যম্ভাবী।
মৌলবাদ শব্দের অর্থ হচ্ছে মূলের প্রতি আনুগত্য। আমি মনে করি মৌলবাদের ধারনাটি সময়ের কিংবা মানুষেরই চাহিদাবিরুদ্ধ। কারণ এটি বর্তমান বা সমকালকেই উপেক্ষা করে, এটি অতীত বা ঐতিহ্যের প্রতি নিষ্ঠার আবেগ থেকে প্রসূত। কিন্তু মানুষতো অতীতে বাস করেনা, করে বর্তমানে। ধর্ম ঠিক ভাষার মতই বহমান। এর একটি সামনের দিকে ধাবমান স্রোত আছে। বর্তমানে বাস করেও অতীতকে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা নদীর স্রোতকে উল্টো দিকে ফিরিয়ে দেয়ার মতই, বৈজ্ঞানিক ভাবে যেটা অসম্ভব। জোর করে করতে গেলে নদীর, প্রকারান্তরে ধর্মের মৃত্যুই অবশ্যম্ভাবী।
৯০ এর দশক থেকে ধর্মের স্রোতকে উল্টোপথে ফেরাতে গিয়ে ইসলামী মৌলবাদীরা সম্ভবত ইসলামকে হত্যার চেষ্টাই করছে, অন্তত আমি তাই মনে করি। মৌলবাদ বা মৌলবাদী সব ধর্মেই আছে, কিন্তু ৯০ দশক পরবর্তী ইসলামী মৌলবাদীদের বেপরোয়া নীতি মৌলবাদ শব্দটিকে ইসলামেরই প্রতিশব্দ ভাবতে পৃথিবীকে বাধ্য করছে। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রসারের সাথে সাথে প্রজন্মান্তরে মানুষের চাহিদারও পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক। ধর্মতো মানুষের জন্যই, আর মানুষের এই চাহিদা পূরণের প্রয়োজনে একেবারে মুখ্য বিধানগুলো বাদে আনুষঙ্গিক বিধি-বিধান গুলোর পরিবর্তন বা পরিবর্ধন সময়ের সাথে সাথে সব ধর্মেই প্রযোজ্য হয়ে এসেছে। ইসলামও এর বাইরে নয়, আর বড় কথা হল ইসলাম একে অস্বীকারও করেনি। পৃথিবীর কোন শাস্ত্রিক ধর্মই আর মুলানুগত নেই, সম্ভবও না। স্ব-ধর্মীয় পণ্ডিতদের ব্যাখ্যায়,বিশ্লেষণে,অনুসারীদের প্রয়োজন অনুসারে মূলের অনেক বিধিবিধান পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে এটা হয়েছে সময় ও মানুষের প্রয়োজনে। কাজেই ইসলামও গত ১৪০০ বছর ধরে অগণিত ইমাম, আলেম, মাওলানা, মোজাদ্দেদ, ফকিহ, পীর, আউলিয়া, মৌলবি, সূফীর অবদান এবং ইজমা, কেয়াজ, ফেকাহ, ফতোয়া আর অজস্র গ্রন্থ বা কিতাবের জ্ঞানকে অস্বীকার করে মূলে ফিরে যেতে পারবেনা, এটা অসম্ভব। কোনটা তারা গ্রহণ করবে বা কারটা তারা বাদ দেবে! সুতরাং ইসলামী মৌলবাদীরা যে চেষ্টাটা করছে তা ইসলামকে হত্যারই নামান্তর।
খিলাফতের ধারণাটি ইসলামের প্রাথমিক যুগের রাষ্ট্র পরিচালনার একটি সরল ব্যবস্থা। সে সময়ের বাস্তবতায় রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধর্মের ভিত্তিতে সরলীকরণ করা সম্ভব হলেও বর্তমানে তা কল্পনাতীত। ইসলামের প্রথম চার খলীফার পরে খিলাফত ব্যবস্থাটি আর মোটেই প্রশ্নাতীত ছিলোনা, ইসলামী কোন পণ্ডিত বা ঐতিহাসিকও একে নিখুঁত রাষ্ট্রব্যবস্থার তকমা দেননি। সে সময়ের বংশভিত্তিক ইসলামী খিলাফতের সাম্রাজ্যে অত্যাচার, অনাচার অন্য কোন সাম্রাজ্যের চেয়ে কোন অংশেই কম ছিলোনা, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক বেশি ছিল তা ইতিহাস ঘাঁটলে সহজেই জানা যায়। শুধুমাত্র একটি একক ধর্মকে আশ্রয় বা কেন্দ্র করে তার অনুসারীদের নিয়ে আধুনিক বিশ্বে একটি একক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নিতান্তই উন্মাদীয়। সেই উন্মাদের কাজটি ৯০ এর দশকে করেছিল তালেবান, আল-কায়েদা সহ কিছু মৌলবাদী চরমপন্থি গুষ্ঠি। আর অতি সাম্প্রতিক সেই দলে যুক্ত হয়েছে ISIS নামের একটি সংগঠন। তাদের মূল লক্ষ্যই নাকি খিলাফতের আদি ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া, আদি খিলাফতের রাষ্ট্রকাঠামোর পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এটা অনেকটা ইসলামী ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার মতই মনে হচ্ছে আমার। সেই চেষ্টার নমুনা দেখলাম তাদের দ্বারা ইরাক আর সিরিয়ার কিছু অঞ্চলে নির্বিচার গণহত্যা আর এক সাংবাদিকের শিরচ্ছেদের ভিডিও ফুটেজ দেখে। গণহত্যা আর শিরচ্ছেদ দিয়ে তারা কোন রাসুলের শরিয়ত বাস্তবায়িত করতে চাচ্ছে তা তারাই ভাল জানে, আমার অন্তত বোধগম্য হচ্ছেনা। আমেরিকা বা কতিপয় অ-ইসলামী পশ্চিমা শক্তি ইসলামের ক্ষতির মূল কারণ এটি আমি মনে করিনা। আমি মনে করি ইসলামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে ও করছে কিছু মুসলমান। জর্জ বুশ বা টনি ব্লেয়ারের চেয়ে বিন-লাদেন আর মুল্লা ওমরই মুসলমানদের অনেক বেশি ক্ষতির কারণ। সমস্ত বিষয়টি নিয়ে আমি বলতে পারি, শিকড় বা মূলের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা জরুরী। কারণ বৃক্ষের সূচনা হয় শিকড়ে। কিন্তু শিকড়কে আঁকড়ে থাকা ক্ষতিকর। কারণ ফল কখনোই শিকড়ে ধরেনা, ফল ধরে কাণ্ডে, শাখা-প্রশাখায়। বিগত ১৪০০ বছর ধরে ইসলাম অগণিত জ্ঞানী-গুণী, মহামানবদের চেষ্টায় আর অবদানে কাণ্ডে, শাখাপ্রশাখায়, ফুলে, ফলে সুশোভিত। ISIS, তালেবান বা বোকোহেরেমের মত মৌলবাদীরা ইসলামের সেই সমৃদ্ধ বৃক্ষের গোরা কেটে বৃক্ষটিকে হত্যা করে শুধু মৃত মূলের উপাসনা করতে চাইছে এতে আমার সন্দেহ নেই।
কোন ধর্মই মানুষকে মানুষ
কোন ধর্মই মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে শেখায়না। ধর্মগুরুরা তো আরো এককাঠি বাড়া, তারা অন্য ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে তো বটেই, নিজ ধর্মের ভিন্ন গোত্রকেও বিধর্মী আখ্যা দিয়ে লেলিয়ে দেয়। ধর্মান্ধতা নয় শুধু, ধর্মগুলোর বিলুপ্তি হওয়া উচিত। ধর্ম মানুষের মন-মানসিকতা মুক্ত জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে ব্যর্থ।
ভুল কথা, ধর্ম না ধর্মগুরা
ভুল কথা, ধর্ম না ধর্মগুরা ধর্মীয় সিষ্টেমের সুজোগ নিয়ে নিজেদের লাভের জন্য।
ধর্মের ফাঁক ফোকর আছে বলেই
ধর্মের ফাঁক ফোকর আছে বলেই ধর্মগুরুরা সেটার ফায়দা লোটার সুযোগ পায়।