তোমাদের নিশ্চই সেই বোকা ছেলেটার কথা মনে আছে, ওই যে শুকনো চেহারার ছেলেটা। সাধারণত বোকা মানুষরা মোটা হয়, দেহের আকৃতি বাড়ার সাথে বুদ্ধির পরিমাণ কমতে থাকে। এই ছেলেটি তার ব্যতিক্রম ছিল। আমরা তাকে ‘ ডায়েট হাবু ‘ বলেই ডাকতাম। তোমরা লক্ষ্য করে থাকবে, হাবু নামটা কেমন যেন মোটা মোটা লাগে। আমাদের পরিচিত বিশাল ভুড়িওয়ালা লোকের নাম ছিল হাবু। তাই আমাদের হাবুর নামের আগে ডায়েট শব্দটা লাগিয়ে নিয়েছিলাম। এবার নিশ্চই হাবুকে মনে করতে পারছ। ওহ কি বলছ, মনে পড়েনি? তাহলে সেই ডায়েট হাবুর গল্পটা খুলেই বলি।
তোমাদের নিশ্চই সেই বোকা ছেলেটার কথা মনে আছে, ওই যে শুকনো চেহারার ছেলেটা। সাধারণত বোকা মানুষরা মোটা হয়, দেহের আকৃতি বাড়ার সাথে বুদ্ধির পরিমাণ কমতে থাকে। এই ছেলেটি তার ব্যতিক্রম ছিল। আমরা তাকে ‘ ডায়েট হাবু ‘ বলেই ডাকতাম। তোমরা লক্ষ্য করে থাকবে, হাবু নামটা কেমন যেন মোটা মোটা লাগে। আমাদের পরিচিত বিশাল ভুড়িওয়ালা লোকের নাম ছিল হাবু। তাই আমাদের হাবুর নামের আগে ডায়েট শব্দটা লাগিয়ে নিয়েছিলাম। এবার নিশ্চই হাবুকে মনে করতে পারছ। ওহ কি বলছ, মনে পড়েনি? তাহলে সেই ডায়েট হাবুর গল্পটা খুলেই বলি।
বোকা ছেলেটির জন্ম হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের আগেই। মায়ের গর্ভে যখন আটমাস তখনই একদিন হাবুর ইচ্ছে হল পৃথিবীর আলো দেখার। তো আর করবে কি? সমানে তার মায়ের পেটে লাথি মারতে থাকল। মা বেচারা তো ব্যাথায় অস্থির। বাপ ভয়ে অস্থির। হাসপাতাল অনেকদূর। এক ধাই মা কে ডেকে আনা হল। ধাই ধারালো ব্লেড দিয়ে কাটাছেড়া শুরু করল। ঘন্টাখানেক যমে মানুষে টানা হ্যাচড়া চলল। অবশেষে বের করা গেল মহাশয়কে। তোমরা বিশ্বাস করবেনা, ছেলেটি প্রায় কাঠির মতোই ছিল। আকার আকৃতিতে হাতের তালুর সমান।
পাচ বছর বয়েস পর্যন্ত ডায়েট হাবু কথা বলল ন। সবাই ধরেই নিল, জমিরুদ্দি মিয়ার একমাত্র ছেলেটা বোবা। তারপর একদিন এলাকার ছেলেপেলের সাথে সে যখন খেলতে গেল, তখন সবাই তাকে বোবা বলে খেপাতে লাগল। এসময় ঘটল এক অলৌকিক ঘটনা। হাবু বলে উঠল, ‘ বোবা কালে কয়? ‘ (বোবা কাকে বলে)
তোমরা জেনে অবাক হবে, এটাই ছিল বোকা ছেলেটির জীবনের প্রথম কথা।
তাকে যেদিন স্কুলে ভর্তি করা হল, সেদিন হেডমাস্টার জিজ্ঞেস করলেন,
– নাম কি?
– হা হা হাবু !
– ভাল নাম?
হাবু কান্না জুড়ে দিল। কান্নার কারণ, সে তার ভাল নাম ভুলে গেছে। হেডমাস্টার তাকে সান্তনা দিয়ে বললেন যে, ভাল নাম ভুলে যাওয়ার জন্য কান্না করার দরকার নেই কারণ তার মতো খারাপ আর দুষ্ট ছেলের জন্য ভাল নাম ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
সেদিন বাড়ি ফিরে যখন জানতে পারল তার আসল নাম মোঃ হাবিবুর রহমান, তখন সে নামটা মুখস্ত করে নিল এবং মনে করল, ভাল নাম মুখস্ত করার মাধ্যমে সে ভাল ছেলেতে পরিণত হতে যাচ্ছে।
সে আদৌ ভাল ছেলে হতে পেরেছিল কিনা জানা নেই, তবে বোকা ছেলে হতে পেরেছিল সেব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। সে অন্যসব বোকার মতই হাফপ্যান্টের চেন লাগাতে ভুলে যেত, দু টাকার লজেন্স কিনে দোকানিকে বিশ টাকার নোট দিয়ে আসত। একদিন তার সাতার কাটার ভীষণ শখ হল, যদিও সে সাতার জানত না। তথাপি এটাকে খুবই সহজ কাজ ধরে নিল এবং বীরদর্পে নদীতে ঝাপিয়ে পড়ল। যথারীতি হাবুডুবু খেতে লাগল। যদি সে সেদিনই মারা যেত, তাহলে সে হয়ত পরবর্তী অদ্ভুত ঘটনাবলি ঘটাতে পারত না। নদীর পানি পেটে পড়ে যখন ফুলে ঢোল হয়ে গেল, তখন সে এক মাঝির দৃষ্টিগোচর হল। ভালমানুষ মাঝিটি নৌকা নিয়ে এসে যখন বলল, ‘তোমার হাতটা দাও খোকা’ তখন সে কিছুতেই রাজি হলনা। কারণ তার মতে, হাত একটু অমূল্য সম্পদ, তা ওই মূর্খ মাঝিটিকে দিয়ে দেয়া যায়না। যাহোক ভালমানুষ মাঝিটি বহুকষ্টে মাছ ধরার জাল দিতে তাকে টেনে তুলেছিল। এযাত্রায় সে ও তার হাত দুটোই বেচে যায়।
ক্লাস সেভেনে থাকতে সে এমন এক কাজ করল, যাতে তার মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে গুরুতর সন্দেহ দেখা দিল। তার একটি পোষা নেড়ি কুকুর ছিল। সে যেখানে যেত কুকুরটিও যেত। কুকুর মহাশয় তার সাথে স্কুলেও গিয়ে হাজির। সে কোনমতেই কুকুরটাকে ক্লাসরুমে নিয়ে আসার অনুমতি পেলনা। অগত্যা কুকুরটাকে নানাপ্রকারে বুঝিয়ে বারান্দার একপাশে বসিয়ে দিল। টিফিন পিরিয়ডে সে প্রাকৃতিক কাজ সারতে টয়লেটে গেলে কুকুরটিও সাথে গেল। সে টয়লেট থেকে বের হয়ে মনে করল, কুকুরটিরও হয়ত প্রাকৃতিক বেগ পেয়েছে এবং স্কুলের এই পবিত্র অঙ্গনে সে যদি কাজটি সারে তবে সেটা বেজায় অপ্রীতিকর ব্যাপার হবে। তাই সে খানিক ইতস্তত করল এবং তারপর কুকুরটিকে টয়লেটে ঢুকিয়ে দিল। ইতোমধ্যে স্কুলের সবচেয়ে কড়া শিক্ষকটিকে যখন একই কাজ সারতে টয়লেটের দিকে এগুতে দেখা গেল, তখন ছেলেটি বিশ্বস্ত কুকুরকে টয়লেট থেকে বের করার কথা ভুলে গেল। টয়লেটের সামনে অযথা হাটাহাটি সমীচীন মনে না করে সে দ্রুত স্থানত্যাগ করল। যখন কড়া শিক্ষকটি টয়লেটের দরজা খুলে ধরল, তখন কুকুর এবং শিক্ষক উভয়েই এমন জোরে চিতকার ছাড়ল, তা অফিসরুম থেকে শোনা গেল। কুকুর বেচারা ভড়কে গিয়ে হালকা আচড় কেটে, ঝাপিয়ে পড়ে শিক্ষকের গর্বের ধন মোটা ফ্রেমের চশমাটার যথাসাধ্য ক্ষতিসাধন করে বেরিয়ে গেল এবং তার বিশ্বস্ত মনিবের সান্নিধ্যে চলে গেল।
তদন্তে এই বেয়াদব কুকুরের সাথে বোকা ছেলেটির সংশিষ্টতা বেরিয়ে এল। ছেলেটি প্রাণপণ প্রমাণ করতে চেষ্টা করল যে, তার উদ্দেশ্য মহত ছিল, সে কেবল একটি অসহায় কুকুরের জন্য স্বাস্থ্যকর শৌচকাজের ব্যবস্থা করছিল এবং স্কুলের পবিত্র আঙিনাকে দূষণের হাত থকে রক্ষা করছিল। তার বক্তব্যে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি হল। হেডমাস্টার তাকে যথাসম্ভব তিরস্কার করলেন। ছেলেটির সরলতার জন্যই বড় কোন শাস্তি আসলনা।
ক্লাস টেনে পড়ার সময় লিজা ছিল ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার নাম। আমাদের এই বোকা ছেলেটা তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল ক’বছর ধরেই। কিন্তু বলার সাহস করে উঠছিল না। সে যখন একটা চিরকুটে তার সুগভীর ভালবাসা এবং অদম্য আবেগের বৃত্তান্ত লিখে লিজার দিকে ছুড়ে মারল, তখন তা গিয়ে পড়ল ক্লাসের সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান মেয়েটির পায়ের গোড়ায়। নিরাপত্তার স্বার্থে চিঠিতে কারো নাম ছিলনা। তবে সম্বোধনটা ছিল, আমার জানের পাখি। আবেগাপ্লুত স্বাস্থ্যবান মেয়েটি যখন আমাদের গল্পের কাঠি সাইজের নায়কের দিকে তাকাল তখন সে দৃষ্টির মানেটা বোধগম্য হবার মতো সহজ ছিলনা। তবে ক্লাস থেকে বেরুনোর সময় গালে স্বাস্থ্যবান একটি হাতের থাপ্পড় খাওয়ার পর ব্যাপারটা পানির মতো সহজ হয়ে গেল।
বোকা ছেলেদের ভাগ্য নাকি ভাল হয়। ঈশ্বরের সমতাবিধান – লোকে বলে। আমাদের এই নায়কটির বেলায়ও তাই। আমরা যখন পড়াশোনা করে মরছি, তখন এই বোকা ছেলেটা তা বাদ দিয়েছে। বাবার জমিজমা পানির দামে বিক্রি ভালই চলছিল। এরমধ্যে অবশ্য বাবা মা দুজনেই পরলোকে গমন করেছেন।
সম্পদে যখন টান পড়ল, তখন সে ভবঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়াতে শুরু করল।
আমাদের সিনেমার প্রযোজক পরিচালকদের রুচি সম্পর্কে আপনাদের ধারণা থাকার কথা। একদিন যখন ছেলেটি এফডিসির আশেপাশে ঘুরছিল তখন এমন সময় এক প্রযোজকের নেকনজরে পড়ে গেল সে। সে প্রযোজকটির পাজেরোর দরজা খুলে দিয়ে দু এক পয়সা বখশিশের আশায় এগুচ্ছিল। দরজা ছিল ভেতর থেকে বন্ধ। ফলে তার টানাটানিতে লাভ হলনা। প্রযোজক সাহেব নিজে যখন দরজা খুললেন তখন বোকা মানুষটি ছিটকে পড়ল। প্রযোজক দুঃখিত হলেন। চেহারাসুরত দেখে তিনি আগ্রহী হলেন। প্রত্যেক সিনেমায় দুয়েকটা জোকার রাখলে দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখা যায়।
– সিনেমা করবেন?
– জি না স্যার। সিনেমা করার টাকা আমার কাছে নাই।
– আমি বলছি সিনেমায় অভিনয় করবেন নাকি?
– জি স্যার।
প্রযোজক তাকে তার পরবর্তী সিনেমায় নিয়ে নিলেন। তারপর সেই বোকা ছেলেটাকে প্রায়ই সিনেমার পর্দায় দেখা যাতে লাগল। তোমরা খেয়াল করলে দেখবে, যারা সিনেমায় জোকারের চরিত্রে অভিনয় করে, তারা বাস্তব জীবনে খুব বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন।আমাদের হাবু তার ব্যতিক্রম। তিনি বাস্তব ও সিনেমা দুটোতেই বোকা। আজও তিনি সিনেমার সংলাপ বলার সময় মনের ভুলে পিথাগোরাসের উপপাদ্য বলে ফেলেন। পরিচালককে চিতকার করতে হয়, কাট, কাট। বাংলা সিনেমার সিংহভাগ দর্শক রিকশাওয়ালা শ্রেণীর। তাদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় এই হাবু ওরফে মোঃ হাবিবুর রহমান।
তোমরা কি খেয়াল করেছ, হাবুর প্রতি সম্বোধনটা আমি কৌশলে ‘ আপনি ‘ তে নিয়ে এসেছি। বুঝতেই পারছ বোকা ছেলেটি এখন বড় হয়ে গেছে।
যা বলছিলাম, রিকশাওয়ালা শ্রেণীর কাছে আমাদের হাবু জনপ্রিয়। তোমরা স্মার্ট ছেলেপেলে। তাকে নাও চিনতে পারো।
তোমাদের দোষ দেয়া যায়না।
(No subject)
:তালিয়া: :তালিয়া: :তালিয়া:
(No subject)
:গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ: