আমার এক ছোট ভাইয়ের একটা গল্প বলি তার ভাষায়-
আমার এক ছোট ভাইয়ের একটা গল্প বলি তার ভাষায়-
আমি তখন কুমিল্লা জিলা স্কুলে পড়ি। স্কুলের প্রধান ফটকের ডান পাশের দুতলায় ছিলো আমাদের ক্লাসরুম। তখন ক্লাস ৭ বা ৮ এ পড়ি। আমাদের স্কুলে ক্লাস টাইমে খুব জরুরী বিষয় ছাড়া অভিভাবকদেরও প্রবেশ অধিকার দেয়া হতোনা। একদিন টিফিন পিরিয়ডের পর কোন কারণে টিচার আসতে দেরি হচ্ছে। ভয়াবহ বাদরামির জন্য আমাদের স্কুলের সব ছাত্রদের খুব সুনাম আছে। টিচার আসতে দেরি মানেই কাবঝাব শুরু। এর ফাকেই দেখি একজন বড় ভাই ক্লাসের সামনে একজনের সাথে কথা বলছে। মনে করলাম হয়তো তার বড় ভাই। একটু পর আমাকে ডাক দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো। ভাইজানের কথায় খুব আকর্ষিত হইলাম। খুব সুন্দর করে কথা বলে। এতো ভালো লাগলো। এর মাঝে দেখি টিচারের আগমন দেখা যাচ্ছে। ভাইটি চলে যেতে উদ্দত হইলো। যাওয়ার আগে শিশু কিশোর সংগঠনের দাওয়াত দিয়ে গেলো যাতে ছুটির পর যাই। সংগঠনটি আমাদের স্কুলের ঠিক সামনেই ছিল। স্কুল শেষে ওই ক্লাসমেটের সাথে ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলাম। অনেক ভালো ব্যবহার ও সাথে ভালো নাস্তা খেয়ে ব্যপক খুশি হয়ে বাসায় ফিরে এলাম। এভাবে বেশ কয়েকদিন গেলাম। ভালোই লাগতো। পরের সপ্তাহের কথা, আমার ক্লাসমেটটি আমাকে একটি ফরম ধরিয়ে দিলো। ফরমটির শিরোনাম ছিলো –
“বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থক ফরম।”
বয়সটা খুব ছোট ছিলো তাই প্রতিবাদটাও ছোট ছিলো। শুধু যাওয়া আসা ও মেলামেশা বন্ধ করে দিলাম। তাছাড়া ওই বয়সে ছাত্রশিবির কি জিনিস বুঝতাম না যা বুঝতাম তা হচ্ছে আমার মায়ের নির্দেশ ভার্সিটির আগে রাজনীতিতে যাওয়া যাবেনা। শুধু এই কারণেই ছেড়ে দেয়া। এরপরও অনেকবার ডেকেছে কিন্তু যাই নাই কখনো।
শিবির ঠিক এমনই সাপ। মিস্টি মিস্টি কথা বলে কচি মাথাতেই ছলেবলে বিশ দিতে থাকে। ভয়ংকর এক বিশ। নিজের জীবন, সমাজ, পরিবার ও ধর্মের জন্য ভয়ংকর এক বিশ। কিন্তু শুধু স্কুল নয় প্রতি ধাপেই তাদের ছলচাতুরি। কলেজ, ভার্সিটি সবখানে।
কেন শিবিরের মতো দলে ছেলেপেলে যাচ্ছে? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যে কারণগুলো দেখতে পেয়েছি:
১- ধর্মের নামে বাট্রা।
২- স্কুল থেকেই সাংস্কৃতিক সংগঠন নামে বেনামে দলে ভেরানো।
৩- গরীব ছাত্রদের বৃত্তি দেয়ার নাম করে দলে নেয়া।
৪- যেখানে অন্য দল সন্ত্রাস ও চাদাবাজিতে ব্যস্ত সেখানে স্লো পয়জন দেয়া হয় মসজিদে, হলে, ম্যাসে।
৫- শুধু ভর্তি করেই শেষ না। দিনের প্রতি মুহূর্তের রুটিন দিয়ে দেয়া হয়, যাতে ভর্তি হয়ে না বের হয়ে যেতে পারে।
মোটকথা ভয়াবহ মাস্টার প্ল্যান নিয়ে নেমেছিলো স্বাধীনতার পর থেকেই।
কিন্তু এতোদিনেও কোন ধরনের বাধা ছাড়াই দেশের প্রত্যেকটি রন্ধ্রে ঢুকে গেছে এই বিশ। আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে বেশ কয়েকটি ভার্সিটি ও বড় বড় কলেজ দখল করে তাদের ক্ষমতা দেখিয়েছিলো।
এখন যখন জেগে উঠেছে প্রজন্ম তখন দেখা গেছে যে আসলে তাদের অবস্থা এখন কোথায়?
ফুলে ফেপে এখন দেশের মানচিত্র খামচে ধরেছে। রগকাটা দল হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই দলটা যেকোন সময় খুব ভয়ংকরভাবে খুন খারাবি করতে পারে। যতটুকু আমি দলটাকে দেখেছি আমার মনে হয় শিবির তার ক্ষমতার নগন্যই ব্যাবহার করেছে।
তাই জোট বাধো, তইরি হও।