বৈশাখের কোন এক সন্ধ্যা।
আকাশটা কেমন জানি লাল হয়ে আছে। কালবোশেখি ঝড় উঠেছে। অল্প না, ভাল রকমই ঝড় হচ্ছে। কালবোশেখির সময়গুলো বেশ সুন্দর। বছরে ক’টা দিনই বা এমন দেখা যায়!!!
ক্লাস শেষে ওরা কয়েকজন বন্ধু একসাথে আড্ডা দিচ্ছে ক্যাম্পাসে।
: তুই কি তাহলে ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে নিয়েছিস?
: হুম
: অনন্য, এখনও সময় আছে, আরেকটু ভেবে দেখ। তোর এত ঠেকা পড়েনি যে তোকে দেশের বাইরে যেতেই হবে।
: আমি আর ভাবতে চাচ্ছি না।
: কেন?
: সুমন দেখ, আমি এই অবস্থায় থাকতে পারছি না। আমি পারব না।
বৈশাখের কোন এক সন্ধ্যা।
আকাশটা কেমন জানি লাল হয়ে আছে। কালবোশেখি ঝড় উঠেছে। অল্প না, ভাল রকমই ঝড় হচ্ছে। কালবোশেখির সময়গুলো বেশ সুন্দর। বছরে ক’টা দিনই বা এমন দেখা যায়!!!
ক্লাস শেষে ওরা কয়েকজন বন্ধু একসাথে আড্ডা দিচ্ছে ক্যাম্পাসে।
: তুই কি তাহলে ফাইনাল ডিসিশন নিয়ে নিয়েছিস?
: হুম
: অনন্য, এখনও সময় আছে, আরেকটু ভেবে দেখ। তোর এত ঠেকা পড়েনি যে তোকে দেশের বাইরে যেতেই হবে।
: আমি আর ভাবতে চাচ্ছি না।
: কেন?
: সুমন দেখ, আমি এই অবস্থায় থাকতে পারছি না। আমি পারব না।
: আমরা তোর কাছে কিছুই না? ওই মেয়েটা… কি যেন নাম… ও হ্যাঁ শুভ্রা। ও ই তোর কাছে সব??? – ওপাশ থেকে নাহিদ বলে উঠল।
: ব্যাপার সেটা না।
: তাহলে কি? সমস্যাটা কোথায়? আমাদের ছেড়ে ওখানে কিভাবে থাকবি? – কিছুটা ইমোশনাল হয়ে কথাটা বলল দিয়া।
: আমি ভাল থাকব।
: ওহ… তাহলে তুই যাচ্ছিসই!
: হ্যাঁ
: ফ্লাইট কবে?
: ১৯ তারিখ।
: তাহলে বেশিদিন নেই।
: শুভ্রার সাথে কথা হইসে? – এতক্ষন পর মুখ খুললো সুমন। অনন্যর সবথেকে কাছের বন্ধু।
: যাওয়ার আগে দেখা করব।
: যাবিই যখন, যা। তোকে খুব মিস করব।
অনন্য কিছু বলতে পারল না। ও পারবেও না। সেও সবাইকে খুব মিস করবে। বাইরে যাওয়াটা তার খুব জরুরি কিছু না। কিন্তু ও এদেশে থাকতে চাচ্ছে না আর। শুভ্রা চাইলেই ওকে এক্সেপ্ট করতে পারত।
অনন্য ছেলেটা ভাল। দেখতেও স্মার্ট। বাবা ধনীই বলা চলে। শুভ্রার অন্যকারো সাথে সম্পর্কও নেই। তবুও অনন্যকে গ্রহণ না করার কারণটা অজানা।
**************************
যাওয়ার আগেরদিন।
রাতে অনন্য একটু দেরিতেই এল। যাওয়ার আগে প্রিয় শরটা একটু ঘুরে-বেড়ালো। সোডিয়ামের বিষন্নতায় একটু হাঁটা। হাতিরঝিলে ওর প্রিয় জায়গাটায় বসে ছিল অনেকক্ষণ।
বাসায় আসার একটু পর অনন্যর মা ওর রুমে এল।
: মা, এসো।
: সব ঠিকমত গুছিয়ে নিয়েছিস বাবা!
: হ্যাঁ মা নিয়েছি। তুমি চিন্তা করিও না। ওখানে তো মামা আছেই। আপুও আছে।
: তুই এখনই না গেলেই পারতি।
: ওসব কথা বাদ দাও তো মা। থাক না!
: সুমন এসেছিল সন্ধ্যায়।
: সুমন!!! কখন? কি বলল।
: বাইরে যাচ্ছিস, ভালভাবে থাকিস বাবা। তিন্নিও অস্ট্রেলিয়ায়, তুইও চলে যাচ্ছিস। তোর জীবন, তুই ই ভাল বুঝবি।
অনন্য চুপ করে আছে। মা উঠে চলে যাচ্ছে।
: বেশি রাত জাগিস না। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়িস।
মা চলে যাবার পর অনন্য অনেক্ষণ ভাবল। তবুও চলে যাওয়াটাই ভাল মনে করল।
বেশ রাত হয়েছে তখন। রাতজাগা পাখিরা ডাকছে। শহরটা চুপচাপ। সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে বারান্দায় গেল অনন্য। ল্যাপটপে গান বাঁজছে…
” হে সখা, মম হৃদয়ে রহো,
সংসারে সব কাজে, ধ্যানে জ্ঞাণে,
হৃদয়ে রহো…”
*************************
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগেরদিন ক্যাম্পাসে।
অনন্য অনেক্ষণ থেকে লক্ষ্য করছে শুভ্রাকে। ডাকছে না। কি দেখছে সে- ঈ ভাল জানে। পাশে সুমন বসা।
অনন্য এবার শুভ্রার কাছে গেল।
: শুভ্রা…!
শুভ্রা এগিয়ে এল।
: হুম বল
: আমি আজকে অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি।
: হুম শুনেছি।
: তোমার কি আর কিছুই বলার নেই?
: না নেই। আমার পক্ষে এখন সম্ভব না। সরি।
: কিন্তু কেন?
: তোমার ফ্লাইট কখন?
: সন্ধ্যায়। সাড়ে ছ’টা। তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না…
: ওকে। ভালমত যেও। ভাল থেকো।
আই এ্যাম সরি।
শুভ্রা চলে গেল। অনন্য কিছু বলতে পারল না। তাকিয়ে আছে। মেয়েটা একবারো পিছনে ফিরে তাকাল না।
***************************
শুভ্রার সাথে অনন্যর পরিচয় বেশিদিন হয় নি। এইত কিছুদিন আগের কথা। দু’জনই ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে। মাস তিন-চারেকের পরিচয়। পহেলা বৈশাখে প্রথম দেখা। কিছুদিন পর অনন্য আবিষ্কার করল মেয়েটি ওরই ডিপার্টমেন্টের। অনন্য আগে দেখেইনি। তারপর হঠাৎ কথা। হঠাৎ শুভ্রাকে অনন্যর ভাল লেগে যাওয়া। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে সবকিছু। কিন্তু ভাল লাগাটা মিথ্যে না। “ভালবাসা” টাইপ ই বলা চলে।
অনন্যর ফ্লাইট সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায়।
ওর বন্ধুরা এসেছে। মা এসেছে। বাবা আসতে পারেনি। অফিসে জরুরি মিটিংয়ে আটকা পড়েছে।
: তোরা এভাবে মুখ গোমড়া করে বসে আছিস কেন?
: তোকে খুব মিস করব রে দোস্ত
: আরে ধুর… ফেসবুক, স্কাইপি তো আছেই। কথা হবে নিয়মিত। আর তিন-চারটা বছর দেখতে দেখতেই চলে যাবে।
: তিন-চারটা বছর অনেক সময় রে…
: আমিও তোদের খুব মিস করব।
অনন্য মার কাছে গেল।
: মা তুমি কাঁদছ কেন!!!
: তুই এখনই না গেলেই পারতি।
: মা তুমি আবার শুরু করলে? আমি তো সারাজীবনের জন্য যাচ্ছি না। আবার তো আসব।
: নিজের খেয়াল রাখিস বাবা।
: তুমি তোমার খেয়াল রেখো, বাবাকে দেখো।
অনন্যর ফ্লাইটের সময় হয়ে এসেছে। উঠে দাঁড়াল। শেষ মোড়টা ঘুরার সময় দেখল তখনও সবাই হাত নাড়ছে। অনন্য হাত নাড়ার শক্তিটুকু পেল না। শুধু মুখে ছোট একটা হাসি দিল…
*************************
প্রায় চার বছর পর ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে পা রাখল অনন্য।
সুমনরা এসেছে।
: কিরে! তোরা সব তো দেখি আগের মতই আছিস।
: তুইও পাল্টাইসনি বেটা
: দিয়া, দেখি বিয়ের পর আরো সুন্দর হয়ে গেছিস!
: কেন আগে হইলে কি আমার সঙ্গে প্রেম করতি নাকি!!!
: হেহ… আইসে দেড়ফুট। কমপ্ল্যান খাওয়া ছাড়ে দিসিস???
: চুপ তালগাছ। আমি কমপ্ল্যান খাইতাম না কখনো।
: ওই ঝগড়া থামা। বাসা চল…
*************************
: বাবা আসব?- রাতের বেলা অনন্যর রুমে মা।
: এসো মা
: “তোর শরীরের অবস্থা এমন হয়েছে কেন! খাওয়া-দাওয়া করিস না ঠিকমত?” – অনন্যর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন মা
: ওসব খাবার পছন্দ হয় না মা। কিসব দেয়…
: হু হু। আচ্ছা শোন, ওই মেয়েটা, কি যেন নাম ছিল…
: কে শুভ্রা?
: হ্যাঁ। ওর সাথে কথা হয়েছে?
: না।
: তুই কি আবার চলে যাবি?
: জানি না মা। যেতেও পারি।
: এখানেই থেকে যা না
: পরে দেখা যাবে।
মা তোমার সাথে কাল কথা বলি??
: আচ্ছা বাবা। বেশি রাত জাগিস না।
চার বছরে বাসাটার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। আগের মতই আছে ওর রুমটা, প্রিয় বারান্দাটা, গাছগুলো। বারান্দাটা থেকে আকাশটা আগের মতই দেখা যায়। কোথা থেকে জানি আকাশে ফানুস ওড়াচ্ছে। অনন্য গুনলো। প্রায় ১০-১৫ টা। আকাশটা দেখতে অসাধারণ লাগছে। লাল…
বাইরে সুন্দর মাতাল হাওয়া বইছে। “হুমায়ুন আহমেদ”এর লেখা ছোট্ট একটা কবিতার লাইন আওড়ালো ও-
” দিতে পারো এনে একশ ফানুস?
আজন্ম লালায়িত সাধ,
একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই…”
না, অনন্য শুভ্রাকে ভুলে যায়নি। একদিনের জন্যও না, এক মুহূর্তের জন্যও না। শুভ্রার জন্যই এসেছে আবার ফিরে। পরে কি হবে তা এখনি ভাবেনি। পরেরটা পরে হবে। অস্ট্রেলিয়া থাকার সময় অনন্য শুভ্রার খোঁজ নিয়েছে সুমনদের কাছে। শুভ্রা আগের মতই আছে। কারো সাথে সম্পর্কে জড়ায়নি। শুভ্রার সাথে অবশ্য ওর কথাও হয়েছে দু’তিনবার। যদিও তেমন কিছু না। স্বাভাবিক কথাবার্তা। কাল শুভ্রার সাথে দেখা করবে ক্যাম্পাসে। জানে না কপালে কি আছে।
গান ছেড়ে দিয়ে বরাবরের মত সিগারেট ধরালো অনন্য…
“এক বৈশাখে দেখা হল দু’জনার
জ্যৈষ্ঠিতে হল পরিচয়,
আসছে আষাঢ় মাস, মন তাই ভাবছে,
কি জানি কি হয়…”
***********************
ভার্সিটি ক্যাম্পাসটা পাল্টায়নি। আগের মতই আছে। পরিচিত বন্ধুদের সাথে দেখা হল। কিন্তু ক্যম্পাসের ভিতরে শুভ্রার কোথাও দেখা পেল না।
তখন ক্যাম্পাসের বাইরে টং দোকানে সবাই আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ চোখ আঁটকে গেল রাস্তার ওপাশে একটা মেয়ের দিকে।
শুভ্রা…
যার জন্য আবার সে ফিরে এসেছে, চলে গিয়েও। আগের চেয়ে আরো সুন্দর হয়েছে যেন। চুলগুলো আরো বড় হয়েছে। হাসিটা আরো সুন্দর।
: “অনন্য যা…। ” পিছন থেকে বন্ধুরা।
: হুম।”- অনন্য বাস্তবে ফিরে এল।
শুভ্রা রাস্তার ওপাশে। অনন্য ডাকল,
: শুভ্রা…!
ডাক শুনে শুভ্রা দেখল অনন্যকে। হঠাৎ চমৎকার একটা হাসি দিল। কিন্তু সাথে সাথে হাসিটা মলিন হয়ে গেল।
: অনন্য……….!!!
***********************
প্রায় চারঘন্টা পর হাসপাতালের বেডে থাকা অবস্থায় অনন্য চোখ খুলল। চোখ খুলেই সামনে সেই পরিচিত মুখটি দেখতে পেল।
“শুভ্রা…”
শুভ্রা অনন্যর হাত ধরে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। অনন্য কিসু বুঝতে পারতেসে না। একটু পর মুখ খুললো শুভ্রা। ছোট্ট একটা প্রশ্ন-
: তুমি কি আবার চলে যাবে?
:না।
কিছু না বুঝে ছোট্ট করে উত্তরটা দিয়েই আবার চোখ বন্ধ করল অনন্য।
শেষ
সুন্দর বর্ণনা
:গোলাপ: সুন্দর বর্ণনা
সুন্দর বর্ণনা
:গোলাপ: সুন্দর বর্ণনা
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ