সামুদ্রিক এক চ্যাটালো জন্তু তার চ্যাপ্টা ডিম্বাকৃতি শরীরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গুঁজে থাকা লম্বা লম্বা সামনের দিকে সরু হতে থাকা, হাতের মত- অনেকগুলো- অঙ্গ দিয়ে আমার বহিরাবরণটাকে আগাপাছতলা সাপটে ধরে আছে আঁটসাঁট। আমার মুখটা তার কাদার মত পিচ্ছিল, সামান্য একটু চাপেই দেবে যাওয়ার মত নরম, হলদেটে শরীরে লেপ্টে থাকায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে তার শরীরময় লেগে থাকা খান্ডা খান্ডা সিকনির মত আঠালো ঘন বাদামী জলো পদার্থ নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করে গলার সরু নালিতে আটকে গিয়ে এমন একটা ঘেন্না ঘেন্না ভাব, যেন এখনি খুলির ভেতরকার স্তুপীকৃত নরম পদার্থ গলে গিয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে ঘন বমির আকারে।
সামুদ্রিক এক চ্যাটালো জন্তু তার চ্যাপ্টা ডিম্বাকৃতি শরীরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গুঁজে থাকা লম্বা লম্বা সামনের দিকে সরু হতে থাকা, হাতের মত- অনেকগুলো- অঙ্গ দিয়ে আমার বহিরাবরণটাকে আগাপাছতলা সাপটে ধরে আছে আঁটসাঁট। আমার মুখটা তার কাদার মত পিচ্ছিল, সামান্য একটু চাপেই দেবে যাওয়ার মত নরম, হলদেটে শরীরে লেপ্টে থাকায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে তার শরীরময় লেগে থাকা খান্ডা খান্ডা সিকনির মত আঠালো ঘন বাদামী জলো পদার্থ নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করে গলার সরু নালিতে আটকে গিয়ে এমন একটা ঘেন্না ঘেন্না ভাব, যেন এখনি খুলির ভেতরকার স্তুপীকৃত নরম পদার্থ গলে গিয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে ঘন বমির আকারে।
বহিরাবরণটার উপর সে ক্রমান্বয়ে চাপের পরিমাণ ও আওতা এমনভাবে বাড়িয়ে চলে যে মনে হয়ঃ ধীরে ধীরে পুরোপুরি তার ভেতরে ঢুকে যাওয়াতেই আমার নিয়তি সুনির্দিষ্ট। শিরা-উপশিরার উপর, প্রায় সর্বত্র, তার হাতের মত অঙ্গগুলোর ভয়ানক শক্তিতে চেপে বসার কারনে রক্ত চলাচলের গতি থেমে গেছে পুরোপুরি; বহিরাবরণটা তাই, সম্পূর্ণ বোধহীন, নিজের বলেই অনুভূত হচ্ছে না আর। অথচ ভেতরটা ক্ষুদ্র কৃমির মত সরু সরু সাদাটে কীটের ঢেউ খেলানো অবিরত চলাফেরায় অধিক অস্থির। অস্থিরতাটি আমার অন্তরতরটাকে বারবার এমনভাবে উলট-পালট করছে, কোন ফাঁপা কৌটার ভেতরে মার্বেল রেখে প্রচন্ড ঝাঁকালে যেমন। তবে তা বহিরাবরণটার, পাথরের দেয়ালের মত শক্ত, অসারতায় বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে পিচ্ছিল সামুদ্রিক জন্তুটাকে স্পর্শও করতে পারছেনা; সামান্য মাত্রায় ছুঁয়ে গেলেও- আমি নিশ্চিত- জন্তুটাকে মিহি গুড়ো গুড়ো করে লবনাক্ত পানির সাথে মুহূর্তে মিশিয়ে দিতে পারত। আর যদি সম্ভব হত- ভেতরের অস্থিরতাটাকে গভীর থেকে খুড়ে এনে পানির মধ্যে ছেড়ে দেওয়া, তাহলে তার সূক্ষ্ম অতিদ্রুত কম্পনে পুরো সমুদ্র ক্ষণিক সময়ের মধ্যেই ঝড়ের কবলে পড়ার মত ফুঁসে উঠত।
বহিরাবরণের অসারতায় অসহায় আমি জন্তুটির জোরালো আলিঙ্গনের চাপে ক্রমে তার ভেতরের অবরুদ্ধতার দিকে অনুপ্রবিষ্ট হতে থাকি। তবে এটাও ভাবি, সে হঠাৎ ছেড়ে দিলে আমার মরণ নির্ঘাত, সমুদ্রের পানিতে ভেসে বেড়ানো তার ঘিনঘিনে শরীরের সাথে লেপ্টে থাকার ফলে বেশ কষ্ট করে হলেও ভেতরের দিকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস টানা যাচ্ছে। হঠাৎ ছাড়া পেয়ে গেলে, সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালিত হয়ে সাঁতার কাটার মত কিছুটা শক্তি অর্জন করার আগেই অসার বহিরাবরণটা লোহার ভারী পিণ্ডের মত তলিয়ে যাবে ভেতরটাকে অভ্যন্তরে রেখেই। ডুবে গিয়ে কিছুক্ষণ টিকে থাকতে পারলে, যদিও বা ধীরে ধীরে কিছুটা শক্তি সঞ্চিত হয়, তাহলে কতক্ষণই বা ভেসে থাকা যাবে! তীক্ষ্ণ দাঁতওয়ালা মাংস খেকো আজব জন্তু আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশালাকার পুচ্ছ নাড়াতে নাড়াতে, অতিকায় গহ্বরের মুখের নাগালে পেলেই ভেতরটা অভ্যন্তরে রেখেই নিমিষে খেয়ে নেবে, ফিনকি দিয়ে উঠা রক্তের ধারা মিশে গিয়ে- অসীমের মত বিশালতার মধ্যে সামান্য একটু জায়গায়- গাঢ় নীল হয়ে উঠবে হালকা লাল।
কোন ধরনের গল্প রে ভাই এটা?
কোন ধরনের গল্প রে ভাই এটা?
ভিন্ন ধরনের গল্প।
ভিন্ন ধরনের গল্প।