হিয়াকে মনুর দোকানের সামনে দাঁড়াতে বলেছিল নীল । কিন্তু ও এই মোড়ে কি করছে নীল সেটা না বুঝতে পারলেও এটা বুঝতে পারছে যে,আজ ওর খবর আছে,তবে ক’টার খবর তা জানে না । কারণ,গুণে গুণে ৩৭মিনিট লেট! নীল ভাবল,ওকে ধরতেই এখানে দাড়িয়ে আছে বোধহয় । রিকশা থেকে নেমে কোন মতে পালানোর চেষ্টা করল নীল,উদ্দেশ্য হিয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে মনুর দোকানে পৌঁছানো। কপাল খারাপ,পারল না। ডাক পড়ল পেছন থেকে।
-এই নীল!
না শোনার ভান করে এগুতে থাকল নীল। আবার ডাকল!
-এই নীল! কই যাও?
হিয়াকে মনুর দোকানের সামনে দাঁড়াতে বলেছিল নীল । কিন্তু ও এই মোড়ে কি করছে নীল সেটা না বুঝতে পারলেও এটা বুঝতে পারছে যে,আজ ওর খবর আছে,তবে ক’টার খবর তা জানে না । কারণ,গুণে গুণে ৩৭মিনিট লেট! নীল ভাবল,ওকে ধরতেই এখানে দাড়িয়ে আছে বোধহয় । রিকশা থেকে নেমে কোন মতে পালানোর চেষ্টা করল নীল,উদ্দেশ্য হিয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে মনুর দোকানে পৌঁছানো। কপাল খারাপ,পারল না। ডাক পড়ল পেছন থেকে।
-এই নীল!
না শোনার ভান করে এগুতে থাকল নীল। আবার ডাকল!
-এই নীল! কই যাও?
এবার কিছুটা রেগেছে হিয়া ,বুঝতে পারল নীল। এবার পেছনে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই খোঁজার ভান করতে লাগল । হঠাৎ হেটে আসার একটা শব্দ ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে লাগল ওর কাছে। কাঁধে একটা হাত পড়তেই সোজা হয়ে গেল । পেছনে ফিরে তাকাল, দেখল হিয়ার সেই পুরনো রাগি চেহারাটা। আজ ওকে একটু বেশিই কিউট লাগছে বলে মনে হচ্ছে নীলের।
– কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
-কোথায় যাব আর,মনুর দোকানে।আমাদের তো সেখানেই দেখা করার কথা । আর তুমি এভাবে কথা বলছ কেন?
-কিভাবে কথা বলেছি আপনার সাথে?
-দেখ ঠিক হচ্ছে না কিন্তু!
-কি ঠিক হচ্ছে না? ওহ আপনার মত ব্যস্ত মানুষের সাথে তো আমাকে অন্য ভাবে কথা বলতে হবে। তা শিখিয়ে দিন। কিভাবে বলব।
-ইয়ে মানে…সরি। একটু লেট হয়ে গেছে।
-একটু লেট মানে? ৩৮ মিনিট লেট! আর তুমি বলছ একটু!
-কি করব। জ্যাম ছিল। তাই…
-জ্যাম থাকতে পারে তো তুমি সময় নিয়ে আগে বের হতে পারো না? আর এট্টুক পথ রিকশায় আসার কি দরকার হেটে আসবে। স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
-আচ্ছা আচ্ছা এর পর হেটেই আসব।
-মানে? জ্যাম না থাকলেও হেটে আসবা নাকি?
-না না। আবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা নেব। ওকে?
-হুম।
-এবার চল,লোকজন দেখছে।
হাটতে লাগল ওরা। হঠাৎ হিয়া নীলের দিকে তাকিয়ে বেশ রেগে গেল।
-উফ, আবার কি? বললাম তো আর লেট হবে না।
-এই,বাসায় চুল আচড়ানোর জন্য কিছু নাই?
-আছে তো।
-আয়না নাই?
-থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে।
-তাহলে মাথার চুলগুলো অমন পাখির বাসা করে রাখছ কেন?
-সত্যিই পাখির বাসার মত লাগছে? একটা ছবি তোল তো দেখি। ওদের বাসা কি সুন্দর থাকে। গোল করে গোছ গাছ করা। আহ।
– (রেগে গিয়ে) আমি সেটা বলি নাই।
– তো?
– তোমার চুলগুলো এমন অগোছালো কেন?
– ওহ তাই বল।
-তাই বল মানে? জানো তোমাকে বানরের মত লাগছে ।
– তুমি একটা বানরকে ভালোবাসো। ছি ছি!!!
– দেখো কথা ঘুরাবা না।
– কই ঘোরালাম?
– এই যে। তুমি নিজেকে বানর বললে।
-আগে কে বলল?
– দেখ ভালো হচ্ছে না কিন্তু। তুমি চুপ করবা?
-ওকে, এই চুপ করলাম । খুশি?
-মানে? এখানে আমার খুশির কি হল?
– না না। ঠিক আছে,আমিই খুশি। এবার চলো তো।
কিছুটা নীরবতা এসেছে হিয়ার মধ্যে। কিন্তু নীলের মধ্যে না । নীল তো চিন্তায় পড়ে গেল। কখন না আবার শুরু করে দেয়। ও তো এখনো নীলের পায়ের দিকেই তাকায় নি। আজ ও কনভার্স পড়ে এসেছে। কিন্তু হিয়ার বিশ্বাস,সব বখাটে ছেলেরা কনভার্স পড়ে।কে যে এই কথা ওকে এটা বুঝিয়েছে আল্লাহ জানেন। ওর জোরাজুরি তে যে জুতোটা কিনেছিল নীল, সেটা আবার জাহিদ কে দিয়েছি দুদিনের জন্য। নীল মনে মনে শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছে যাতে না দেখে । ঠিক দোকানের সামনে গিয়েই অঘটন ঘটল।
-এই,তোমাকে এক কথা কতবার বলতে হয় হ্যাঁ? তোমাকে না বলেছি এইসব আজে বাজে জিনিস পায়ে দেবে না।
-এটা আজেবাজে হবে কেন? এটা আমার ফেভারিট। আমার ভালো লাগে। আর জুতোটা জাহিদকে দিয়েছি,ও নাকি কোথায় যাবে তাই ওর লাগবে।
– তোমার তো এইসব আজে বাজে জিনিসই পছন্দ হয়।
– আমি খারাপ তো তাই সব আজে বাজে জিনিস পছন্দ করি।
– কি? তার মানে আমিও আজে বাজে?
– ছি ছি, কি বল? আমি সেটা কখন বললাম?
-এই যে তুমি সব আজে বাজে জিনিস পছন্দ করো। আমাকে কে পছন্দ করেছিল?
– অবশ্যই আমি।
– তাহলে? তাহলে এর মানে কি দাড়ালো? আমি আজে বাজে।
– ওহহো…তুমি একটু বেশিই বোঝো…আমি জুতার কথা বলছি। তোমার না।
– আমি বেশি বুঝি? আচ্ছা…আমি বেশিই বুঝি। তখন তো খুশি হতে চাই নাই। এবার তোমার হ্যাপি হতে তো কোন আপত্তি নেই,ঠিক না?
– দেখো হিয়া। খামোখা রাগ কোরো না। ওটা আমার কাছে থাকলে আমি পড়েই আসতাম।
– আমি খামোখা রাগ করি? কোন কারণ ছাড়াই? ভালো। আমার কোন কথারই তো দাম নাই তোমার কাছে।
নীলের মেজাজ এখন খারাপের দিকে যাচ্ছে বেশ ভালোভাবেই। আজ হিয়া একটু বেশিই রেগে গেছে। অতি তুচ্ছ সব বিষয় নিয়ে। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। এমনিতে নীলই হিয়াকে মাঝে মধ্যে একটু আকটু রাগাতো…আবার শান্ত করে ফেলত। কারণ ওর বিশ্বাস,রাগলে হিয়াকে অন্যরকম ভালো লাগে ওর । চোখ দুটো বাকিয়ে যখন নীলের দিকে চায়,নীল তখন অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে। দেখতে পায় গাল আর ঠোট দুটোতে কেউ যেন লাল রঙ মেখে দিয়েছে। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। তবে যে শুধু রাগায় ঠিক তা না। হিয়ার প্রত্যেকটা আবদার পূরণের কাজটিও বেশ সফলভাবে করে আসছে নীল। তাই হিয়ার বুঝতে বাকি নেই নীল ওকে কতটা ভালোবাসে। আর হিয়া,নীল মনে করে হিয়ার মত লাইফ পার্টনার ও আর কখনোই পাবে না। আর এর কারণ যতই বলা হোক ততই কম হবে।
কিন্তু আজকের ব্যাপারটা অন্যরকম। আজকের দিনটাই ওদের কাছে খুব বিরক্ত লাগছে। কি থেকে যে কি হয়ে যাচ্ছে। প্রথম থেকেই রেগে আছে হিয়া । তবে আজকের টা ভেজালহীন । চট করে একটা বুদ্ধি খেলে গেল নীলের মাথায়।
– হিয়া এখানে একটু দাড়াও,আমি আসছি।
– আমি কি বসে আছি?
নীল হিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে একটা নি:শ্বাস ফেলে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ফোনটা বের করে একটা ফোন করল। কথা শেষ করে হিয়ার সামনে দাড়ালো ক্লান্ত ভঙ্গিতে। হিয়ার প্রশ্ন-
– কার সাথে কথা বললে ?
– জাহিদ এর সাথে।
– কেন?
– একটু পড়েই বুঝতে পারবে।
হিয়া নীলের এই বন্ধুটাকেই ভালো চেনে। খুব শ্রদ্ধাও করে। নীলের প্রতি জাহিদের আর জাহিদের প্রতি নীলের এই বন্ধুত্বের টানটা হিয়া খুব ভালো করেই বুঝতে পারে। তাই জাহিদের সামনে হিয়া নীলকে তেমন কিছুই বলতে পারে না। হিয়া ভেবেই বসল নীলকে যাতে কিছু না বলতে পারে তাই শিল্ড হিসেবে জাহিদকে আসতে বলেছে।কিন্তু এই দিনে ওদের মাঝে জাহিদের আবির্ভাব, ব্যাপারটা অস্বস্তি মত লাগছে হিয়ার কাছে।
জাহিদ নীলকে ওর কথা মতো মনুর দোকানের সামনেই খুজে পেল। নীলকে দেখতে পেয়েই জাহিদ-
– কিরে বাই,এইখানে আইতে কইলি ক্যান? হুদাই আমারে দোকান থেকে নিয়া আইলি।
জাহিদ খেয়ালই করে নি হিয়াকে। দেখতে পেয়েই থতমত খেয়ে গেল। গলার স্বরও বদলে গেল ।
– আরে ভাবীও আছেন দেখি এখানে। তা কেমন আছেন?
– এই তো ভাই আছি কোন রকম। আপনার বন্ধু কি আর ভালো থাকতে দেয়?
– কেনো? কি করেছে ও?
এবার মুখ খুলল নীল।
– আরে ভাই, আর বলিস না। তুই না সেদিন আমার কাছ থেকে একজোড়া জুতা নিলি কোথায় যাবার জন্য ?
– কবে?
– কবে মানে?? পরশু না নিলি?
– কই না তো, আমি তোর জুতা নিতে যাবো কোন দু:খে।
– তুই কি বলছিস এসব? তোকেই তো দিলাম। দেখ…ভালোয় ভালোয় বল…নইলে…!!!
– আরে, আজব তো…আমি না নিয়েও কি বলব নাকি যে নিয়েছি??
– তবে রে শালা…তোকে আজ খবর আছে…
শার্টের হাতা গুছিয়ে জাহিদের দিকে এগুতে যাবার আগেই জাহিদ দৌড় শুরু…ওকে আর কে পায়? নীল ব্যর্থ চেষ্টা না করে দাড়িয়েই রইল। এবার হিয়ার বলার পালা…
– কি, নীল সাহেব? ভালো আছেন?
– আরে জুতো ও নিয়েছে।
– ও…তাই না? তা ভাইয়া তা স্বীকার করল না কেন?
– ও শা* একটা বাটপার…দেখো না কথা শেষ করার আগেই কেমন দৌড় দিলো।
– দারোগা কে দেখলে সাধারণ মানুষও ভয় পায়।
– আমি দারোগা?
– যেভাবে হাত গুছিয়ে রেডি হচ্ছিলে…দেখে তো তাই মনে হচ্ছিল। আমাকে না আবার কবে তোমার ধাওয়া খেতে হয়!
– উফফফ…তুমি প্লিজ একটু থামবে? আমি না…আর পারছি না।
– আমি তো থেমেই আছি।
– আমি কথা থামাতে বলেছি।
– ও…আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি তাহলে চলে যাই?
– মানে?!!! পাগল নাকি…থুক্কু…পাগলী নাকি? যাবে কেন?
– আমার কথা আর তোমার ভালো লাগছে না। তো চলে যাওয়াই বেটার।
– আচ্ছা যাও…একদম বাসায় যাবে। ঠিক আছে।
– বাহ বাহ…সাহেব দেখি আমার ভালোই খেয়াল রাখেন । তা আজ পৌঁছে দেয়ার কথা ভুলে গেলেন দেখি।
– ওহ…সরি, চলো।
– থাক…আমি একাই যেতে পারব। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না।
নীল কিছু বলার আগেই চলে গেল হিয়া। নীল বসে পড়ল একটা ছোট্ট বেঞ্চে,দোকানের সামনেই। রাগে ক্ষোভে মনে তার একটাই চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল…জাহিদকে যেখানেই পাবে খুন করবে। ও এই কাজটা করতে পারল? জুতা নিয়েও স্বীকার করল না । কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে নিল দোকান থেকে। তবু ঠাণ্ডা হতে পারল না। নাহ কাজ হচ্ছে না। মাথার চুল গুলো হাত দিয়ে ধরে মাথা নিচু করে বসে রইল।
হঠাৎ চুড়ির ঝুন ঝুন শব্দ হতে লাগল। শব্দটা ওর সামনেই হচ্ছে। আজই এরকম শব্দ কোথায় যেন শুনেছে। মাথাটা নিচু করেই ভাবছে নীল। শব্দটা কেউ ইচ্ছে করেই করছে। তবে ওর কাছে ভালো লাগছে না…ভেবে নিল মাথাটা উচু করে একটা ধমক দেবে। মাথাটা উচু করে কিছু বলতে যাবে,দেকল হিয়া দাড়িয়ে আছে। হাতের চুড়িগুলো ইচ্ছে করেই ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে শব্দ করছে। আর মুচকি মুচকি হাসছে। দেখা হওয়ার সময় যখন একসাথে হাটছিল চুড়ির শব্দ তখনই শুনতে পেয়েছিল। নীল বেশ অবাক হল। মুখ খুলল হিয়া।
– হাত ধরো।
– কেন? আর তুমি বাড়ি যাও নি কেন?
– হাত ধরতে বলেছি ধরো।
– তুমি বাড়ি যাও নি কেন,সেটা বলছ না কেন?
– ইচ্ছা হয়নি তাই যাইনি। হাত ধরতে বলেছি হাত ধরো…আর চলো।
– কোথায় যাবো? আমার পায়ে তো জুতা নেই। আর ওটাই তো তোমার বেশি দরকার ।
-জুতা লাগবে না, যা আছে তাতেই চলবে এবং সামনেও চলতে থাকবে। আর তুমি না থাকলে কি আমি জুতার সাথে ঘুরে বেড়াবো নাকি?
– ও আল্লাহ, আমার সামনে এ কে কথা বলছে। এইযে…আপনি কি হিয়া বলছেন, নাকি কোন এলিয়েন? রূপ বদলে এসেছেন?
-হুহ…এলিয়েনের আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই…এমন কুমড়া ছেলের সাথে কথা বলতে আসবে।আর তুমি উঠছ না কেন?
– ওহ…আমি কুমড়া? ধন্যবাদএটা বলার জন্য। তা এই কুমড়া কে হাত ধরতে বলছেন কেন? যান না…কোন রাজকুমার খুঁজে আনুন।
– আমার কুমড়াই পছন্দ। তাতে তোমার আপত্তি থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না। আর শেষ বারের মত বলছি…হাত ধরো।
অনেক হয়েছে আর না …হিয়াকে চলে যেতে বলে ওর ও যে খুব ভালো লাগছিল তা না। তবে যে রাগ উঠেছিল …সেটা একটু গলিয়ে নিল আরকি।
হিয়ার হাত ধরে হাটা শুরু করল ।
– দেখো হিয়া,জুতাটা…
– থাক আর বলতে হবে না। এই জুতার কথা বাদ দাও। আর তুমি শুধু জাহিদ ভাইয়া আর শ্রেয়া আপুর মাঝে কিছু করতে যেও না। ঠিক আছে?
– মানে? বুঝলাম না….ও….এবার বুঝলাম। আমি ওদের মাঝে একটু…ইয়ে করে দিয়েছিলাম। ও তার …. কিন্ত আমি তো ওর সাথে বাজি ধরেই করেছিলাম। ও কেন…?
– আসলে সেই ঘটনার পর আপু ভাইয়ার সাথে টানা ১৭দিন কথা বলে নি। তাই ছোটখাট কিছু করতে চেয়েছিলেন আমাদের মধ্যে। কিন্তু বেশি হয়ে গেছে, আর এটা তিনি চান নি। তাই ক্ষমাও চাইলেন।
– কি?!! ও তো আমাকে কিছুই জানায় নি।
– থাক বাদ দাও তো।
– আচ্ছা, কিন্তু তুমি জানলে কিভাবে?
– জাহিদ ভাইয়া দৌড় দিয়েছে ঠিকই কিন্তু চলে যায় নি। দূরে দাড়িয়ে ছিল। আমাকে চলে যেতে দেখে ডাক দিল। তারপর সব বলল। আর খুব করে সরিও বলল।
– ও আচ্ছা,এই কথা?ও ব্যাটাকে না কতই অভিশাপ দিলাম। ও ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।
– তুমিও আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর আমিও…তোমার ওপর কোনদিন রাগ করব না। ঝগড়াও করব না । প্রমিস!
– ঝগড়া করবে না? কেন?
– আহ, করব না,কেন করব কারণ ছাড়া?
– করণ করে নিলে?
– তাও করব না।
– না না,প্লিজ….করতে হবে। একটু হলেও করবে। প্লিজ…
– আচ্ছা ঠিক আছে আমার পিচ্চি বাবুটা করব। তোমার বায়না আমি রাখবো না??
– কি? পিচ্চি বাবু? তোমার? না না …আমি তো শুধু আমার মায়ের পিচ্চি । তোমার হতে যাবো কেন?না না…
– নীল …তুমি না দিন দিন আনরোম্যান্টিক হয়ে যাচ্ছো ।
– ওহ আচ্ছা, সেই পিচ্চি। তাহলে সমস্যা নেই।
– হুম…আর আরেকটা কথা শুনে রাখো, ভুলেও কখনো দেরি করবে না দেখা করার কথা বলে। মনে থাকে যেন?
– আরে…তাইতো,মনে করিয়ে দিয়ে ভালোই করেছ । এটা তো আমার কাজে লাগবে।
– মানে? কি কাজে?
– কিছু না। এমনি বললাম । মনে থাকবে।
– হুম…
– হুম …
এভাবেই হু হা চলতে লাগল দু’জনের মধ্যে। আসল কথাটা বের হল হিয়ার মুখ থেকেই।
– হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন’স ডে মাই পিচ্চি বাবু। আই লাভ ইউ সো মাচ।
– লাভ ইউ ঠু…আমিও খুব ভালো পাই তোমাকে?
– মানে? এটা আবার কি?
– মানে ভালোবাসি…শুধু তোমাকে…একটু বেশিই। মেপে দেখতে পারো।
– থাক…আর মাপামাপি করতে হবে না। চলো তো…দেরি হয়ে যাচ্ছে।
নীলের হাতটা খুব শক্ত করে ধরে আছে হিয়া। আর মাথাটা নীলের কাধে, হালকা হেলানো । ওরা দু’জন চলছে, এভাবেই চলতে চায় সারাজীবন । একসাথে…পাশাপাশি। উঁচু নিচু সকল পথে। তাতে আসুক না বাধা। একে অপরের সাথী হবে ওরা নির্ভয়ে।
কিন্তু….
-এই, দাড়াও! আমার ফুল কোথায়? তোমার তো দেখি কমন সেন্সও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
– কেন? আবার কি করলাম?
– তুমি এইদিনে আমার সাথে দেখা করতে আসছ …কিন্তু একটা ফুল আনো নাই? কি কি…এসব কি?
– আরে বাবা, সকালে তো দেখলেই দেরি হয়ে গেছে আসতে, আর আসার পর থেকে তো…
– কি? আসার পর থেকে কি?
– যাও, আমার জন্য একটা ফুল নিয়ে আসবে,এখন,যেখান থেকে পারো ।
– কি? এখানে আমি ফুল পাবো কোথায়?
– আমি জানি না। আমার ফুল চাই। এই আমি এখানে দাড়ালাম, ফুল না পাওয়া পর্যন্ত এখান থেকে নড়ছি না।
– এটা কেমন আবদার হল? আচ্ছা তোমার ফুল চাই তো চলো…এক সাথে খুঁজে দেখি কোথায় পাওয়া যায়।
– না আমার চাই…এখন…
নীল এখন আর রাগতে পারছে না। সকালে যা হয়ে গেল, তারপর এখন আর…ভাবতেই পারছে না কিছু । ভাবতে পারছে এও…যে এখন ফুল পাবে কোথায়…