১ .
তাহিন ফুটপাতে বসে সিগারেট জ্বালালো। সাধারণত এই শীতের সকালে এই রাস্তায় তেমন লোকজন চলাফেরা করে না। এখন সে খুবই খুশি তাই মনের আনন্দে ধোঁয়া ছাড়ছে।
প্রায় আধঘণ্টার সে একই জায়গায় বসে আছে। বামে ঘাড় ঘুরাতেই সে একটু দূরের পার্কে লোকজনের জটলা দেখতে পেল। একটু পর এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন।
তাহিন উঠে দাড়ালো এবং বাসার দিকে হাটতে শুরু করলো। আরো ৪০ মিনিট লাগবে তার বাসায় পৌছাতে। সে জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেলেদুলে হাটছে।
সকাল ৮.৩০,
তাহিনের মোবাইলে আশেকের কল আসলো। আশেক তার অনেক পুরোনো বন্ধু।
সে কল রিসিভ করলো,
আশেক : দোস্ত, মাহির খবর জানিস?
তাহিন : না তো।
১ .
তাহিন ফুটপাতে বসে সিগারেট জ্বালালো। সাধারণত এই শীতের সকালে এই রাস্তায় তেমন লোকজন চলাফেরা করে না। এখন সে খুবই খুশি তাই মনের আনন্দে ধোঁয়া ছাড়ছে।
প্রায় আধঘণ্টার সে একই জায়গায় বসে আছে। বামে ঘাড় ঘুরাতেই সে একটু দূরের পার্কে লোকজনের জটলা দেখতে পেল। একটু পর এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন।
তাহিন উঠে দাড়ালো এবং বাসার দিকে হাটতে শুরু করলো। আরো ৪০ মিনিট লাগবে তার বাসায় পৌছাতে। সে জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেলেদুলে হাটছে।
সকাল ৮.৩০,
তাহিনের মোবাইলে আশেকের কল আসলো। আশেক তার অনেক পুরোনো বন্ধু।
সে কল রিসিভ করলো,
আশেক : দোস্ত, মাহির খবর জানিস?
তাহিন : না তো।
: সকাল ৭টার দিকে মেমোরিয়াল পার্কে ওর লাশ পাওয়া গেছে। কে নাকি পিঠে ছুরি দিয়ে এফোঁড় ওফোড় করে ফেলে রাখছে।
(একটু কান্নার ভান ধরে) : বলিস কি!!
: সত্যি ঘটনা।
: আচ্ছা, রাখি।
মাহি, একটি ভার্সিটিতে ১ম বর্ষের ছাত্রী আর তাহিন যাকে পাগলের মতোই ভালবাসে।
তাহিন ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো । তার মুখে এক পৈশাচিক হাসি। এবার সে তার জ্যাকেটের ভিতর থেকে ছুরি টা বের করলো। খাপছাড়া করে রক্ত মাখা ছুরি টা ধুয়ে ফেললো।
এখন তাহিন এক পৈশাচিক আনন্দ নিয়ে ঘুমুতে যাচ্ছে। আজ অনেক দিন পর সে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে।
২.
মহুয়া, একটি ভার্সিটির ১ম বর্ষের ছাত্রী। নিজের পরিবারের সাথে থাকে।
আজ ১লা এপ্রিল । তারা তাদের নতুন বাসায় উঠেছে। এই বাসা নেয়ার কারন হলো তার ভার্সিটি। এইখান থেকে ভার্সিটি কাছেই।
৩ এপ্রিল ,
মহুয়া অগোছালো খুবই অপছন্দ করে। তাই, তার সব জিনিসের একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে। আজ পুরো সকাল জুড়ে মহুয়া তার নিজের রুম সাজিয়েছে। একেবারেই তার মনের মতো। এইক্ষেত্রে সে অন্যের বাধা মানতে আগ্রহী না।
আজকে বিকেলে তার টার্গেট স্টোর রুম।
মহুয়া স্টোর রুমের এটা সেটা নাড়াচাড়া করছে। এমন সময় হঠাৎ তার চোখ আটকে গেল রুমের এক কোনায়।
একটা লাল মাঝারি আকারের ডায়েরী। অনেক আগ্রহ নিয়ে সে এটা হাতে নিলো। কিন্তু অনেক ধুলাবালি জমে ছিলো ডায়েরির উপরে। তাই সে এটা একটা কাপড় দিয়ে মুছে তার বইয়ের তাকের মাঝে রেখে দিলো।
এরপর সে অন্যান্য কাজ করতে লাগলো।
রাত ১.৩০,
মহুয়া নিজের বিছানায় শুয়ে আছে। হাতে স্টোর রুমে পাওয়া সেই ডায়েরি। ডায়েরি শুরুতেই পরিচয়। একটি ছেলের ডায়েরি।
নাম : আহসানুল হক তাহিন
শিক্ষাগত যোগ্যতা : ১ম বর্ষ, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
লিখার স্টাইল টা মহুয়ার খুবই পছন্দ হলো। তাই, সে অনেক আগ্রহ নিয়ে ডায়েরীটা পড়তেছে।
হঠাৎ ডায়েরী নাড়তে গিয়ে ভেতর থেকে একটি কাগজ বের হলো। সেটা খুলতেই মহুয়ার চোখ কপালে উঠে গেল। কারন ওই কাগজে তার চাচাতো বোন মাহির স্কেচ করা ছবি।
স্কেচের উপরে লিখা ছিলো “nightmare of life ”
লিখা আকাবাকা আর শুকনো রক্তের গন্ধ আসছে লিখা থেকে।
কিন্তু তার এটা অবাক লাগলো কারন তার চাচাতো বোন মাহির ১বছর আগে খুন হয় এবং সেই খুনী কে এখনো জানা যায় নি।
৩.
মহুয়া আজ সকালে জলদি বাসা থেকে বের হলো। উদ্দেশ্য ভার্সিটি গিয়ে সামিয়ার সাথে দেখা করা।
একটু পর নকিবও তার সাথে যোগ দিলো। নকিব মহুয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। তাই সে নকিব কে আগে সবকিছু জানিয়ে রেখেছে। মহুয়ার হাতে তাহিনের ডায়েরি।
ভার্সিটি শহীদ মিনারের নিচে বসে আছে মহুয়া আর নকিব। নকিব তাহিনের ডায়েরি উল্টিয়ে দেখছে।
কিছুক্ষণ পর সামিয়া তাদের সাথে যোগ দিলো।
সাধারণ কুশলাদি বিনিময়ের পর মহুয়া সামিয়ার কাছে মাহির ভার্সিটি জীবন সম্পর্কে জানতে চাইল। কারন সামিয়া মাহির খুব ভালো বন্ধু ছিলো।
প্রথমেই শুরু করলো তার প্রেমের নিয়ে।
মহুয়া : আপু, মাহি আপুর কয়েকজনের সাথে রিলেশন ছিলো?
সামিয়া : আমার জানা মতে ৩ জনের সাথে।
: তাদের মধ্যে তাহিন নামের কেউ ছিলো?
: না তো।
তখন নকিবও তাদের সাথে যোগ দিলো
নকিব : বয়ফ্রেন্ড গুলোর নাম মনে আছে?
সামিয়া : রাব্বি, ইমন আরেকজনের নাম এখন মনে পড়ছে না।
মহুয়া : ধন্যবাদ আপু।
সামিয়া : কেন? কি হয়েছে? ওর খুনি কে পাওয়া গেছে নাকি?
মহুয়া : নাহ্। এমনিতেই জানতে ইচ্ছে হলো তাই।
সামিয়া : তাহলে আজকে উঠি।
এখন নকিব আর মহুয়া বসে আছে।
মহুয়া : দোস্ত, কি করতে পারি?
নকিব : আমার সম্পূর্ণ সন্দেহ কিন্তু তাহিনের উপরে।
: আমারও
: দোস্ত, আমরা আশেকের সাথে দেখা করতে পারি।
:আশেক কে?
তখন নকিব ডায়েরিটা এগিয়ে মহুয়া কে দেখালো।
লিখা আছে :
আশেক, আমার বন্ধু কিন্তু বেইমান।
নকিব আর মহুয়ার কাছে এটা আশ্চর্যজনক মনে হলো যে ডায়েরি তে সব কথাই খুবই সংক্ষিপ্ত ভাবে লিখা। এমনকি মাহিকে নিয়ে একটা শুধু মাত্র এক লাইন :
মাহি, একগুচ্ছ কলাবতী ফুল হাতে দাড়িয়ে থাকা অস্পৃশ্য এক ছায়া।
তাদের পরবর্তী প্লান ঠিক হলো তাহিন কে খুজে বের করা।
পরদিন সকালে মহুয়া তাদের বাড়িওয়ালার কাছে গেল।
উদ্যেশ্য তাহিনের সম্পর্কে জানা।
বাড়িওয়ালার কাছ থেকে জানতে পারলো তাহিন তাদের পুরোনো ভাড়াটিয়া। গতমাসে বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে।
মহুয়া কারণ জানতে চাইলে বাড়িওয়ালা বললো যে তাদের ছেলে তাহিন জানালার সব কাচ ভেঙে দিচ্ছিলো।
এরপর সে তাদের বর্তমান ঠিকানা চাইলো কিন্তু দিতে পারলো না। শুধুমাত্র নাম্বার টা দিতে পারলো।
মহুয়া আপন মনে বললো, আজকাল সবাই যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। সম্পর্ক শুধুই টাকার। তাইতো বাড়িওয়ালারা পুরাতন ভাড়াটিয়ার বর্তমান ঠিকানাও রাখে।
এরপর মহুয়া নকিব কে কল দিলো :
: দোস্ত, তাহিনের আম্মুর নাম্বার পাইছি।
: ঠিকানা নাই ?
:নাহ্। পাইনি।এখন কি করবি বল?
: আগে তাহিনের বাসায় যাবো তারপর আশেকের কাছে।
:ওকে। তুই ১১টায় **** জায়গায় আয়।
কিছুক্ষণ পর নকিব আর মহুয়া একই জায়গায় আসলো।
তারপর নকিব বাড়িওয়ালার দেয়া নাম্বারে ফোন দিলো। অপরপ্রান্তে এক মহিলা ফোন ধরলো।
নকিব : স্লামালিকুম, আপনি কি তাহিনের আম্মু?
অপরপ্রান্ত : জ্বি, কিন্তু আপনি কে?
: আপনি আমাকে চিনবেন না। আপনাদের পুরাতন বাসার নতুন ভাড়াটিয়া। আপনাদের ঠিকানা টা দিতে পারবেন?
:কেন?
: আসলে তাহিনের সাথে কিছু কথা ছিলো তাই। কিন্তু ওর নাম্বার তো নাই।
: কিন্তু সে তো এখন আর আমাদের সাথে থাকে না। আর সে তো এখন মোবাইল ব্যবহার করার অবস্থায় নেই।
: কেন?
: সেটা অনেক গল্প।(কথাটা বলতে বলতে তাহিনের আম্মুর গলা ভারী হয়ে আসলো)
: আন্টি, আপনার ঠিকানা টা দেন। আমি আজ বিকেলে আপনার সাথে দেখা করতে চাই।
তিনি ঠিকানা দিলেন।
তারপর নকিব ফোন কেটে দিলো।
এরপর তাদের উদ্দেশ্য তাহিনের বাসা।
৪.
আগের প্লান অনুযায়ী নকিব আর মহুয়া তাহিনের বাসায় গেল, তাহিনের আম্মুর সাথে কথা বলার পর জানতে পারলো গত ছয়মাস ধরে তাহিন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে আছে।
বাসার কারো সাথে কথা বলতো কাচ দেখলেই ভেঙে ফেলে। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ব্যালকনিতে বসে খালি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো।
তারপর তারা মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখালো।
এরপর ডাক্তারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো।
তারপর নকিব তাহিনের আম্মুকে মাহির নামের কাউকে চিনে কিনা জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু উত্তর আসলো চিনে না।
তারা হতাশ হয়ে আশেকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো এবং তার ঠিকানা নিলো।
এবারের উদ্দেশ্য আশেকের সাথে দেখা করা।
নকিব : আপনি আশেক?
অপরপ্রান্ত : হ্যাঁ, বলুন।
এইভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে আশেকের সাথে দেখা করা হলো।
আশেক : কি প্রয়োজন ছিলো?
মহুয়া : তাহিন কে চিনেন?
: জ্বি, চিনি। আমার খুব ভালো বন্ধু।
: মাহি কে?
: সে তো আমার গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু তার এক বছর আগে খুন হয়ে গেছে।
মাহি আশেকের গার্লফ্রেন্ড এটা জেনে মহুয়া আর নকিব যেন আকাশ থেকে পড়লো।
তারপর, নকিব তাহিনের ডায়েরি থেকে মাহির স্কেচ টা আশেক কে দেখালো। এটা দেখে আশেক স্তম্ভিত হয়ে গেল।
নকিব : তাহিন আপনার কেমন বন্ধু? খুব ক্লোজড?
আশেক : খুব কাছের বন্ধু। আমার সব কথাই সে জানতো।
: আচ্ছা, মাহি মারা যাওয়ার আগে ওর সাথে আপনার কথা হয়?
: হ্যাঁ, মাহির সাথে মেমোরিয়াল পার্কে আমার ৮টায় দেখা করার কথা ছিলো। কিন্তু তার আগেই তার খুন হয়ে যায়।
: আপানাদের দেখা করার ব্যাপার টা কি তাহিন জানতো?
: অবশ্যই। সে আমার সবকিছুই জানে।
এরপর নকিবের হঠাৎ তাহিনের ডায়েরির একটা লাইন মনে পড়ে
“যা আমার প্রিয় কিন্তু আমার না,
তা আর কারো হতে পারে না। ”
আর বুঝতে বাকি রইলো না আসল ঘটনা কি।
তারপর সে বলল : কিন্তু দুঃখের বিষয় আপনি আপনার বন্ধুর সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
পরে নকিব মহুয়া কে আসল বিষয় টা বুঝিয়ে দিলো।
মানসিক হাসপাতালে,
নকিব আর মহুয়া বসে আছে ১১৮ নাম্বার রুমে।
এই রুমে আরো এক লোক আছে, মাথায় উকুন ভর্তি ঝাঁকড়া চুল, ধূসর দাড়ি কিন্তু এই রুমে যে আরো লোক আছে তা নিয়ে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার ভাঙা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।
অতঃপর একরাশ ঘৃণা নিয়ে মহুয়া আর নকিব বের হয়ে আসলো। কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানতে পারলো ১১৮ নাম্বার রোগীরা শুধু মাত্র একটা টিনের বড় সুটকেস আছে আর তার ভিতরে আছে শুধু একটা খাপের ভিতরে ঢুকানো ছুরি আর মাকড়সার জাল।
কিন্তু সে এই ছুরি কাউকে ধরতে দেয় না।
এরপর মহুয়া পুরো ব্যাপারটা তার চাচা চাচী কে জানায়। তারা পুলিশে অভিযোগ করেন। কিন্তু আসামি মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়াতে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া গেল না।
বাহ!
বাহ!
(No subject)
:থাম্বসআপ: