ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশের অংশ হিসেবে ২০১১ বিশ্বকাপের সময় বিউটিফুল বাংলাদেশ স্কুল অব লাইফ নামে একটা প্রচারণা শুরু করছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। কথা ছিলো এই প্রচারণাটা সরকারি ভাবেই বিশ্বব্যাপি করা হবে। পাবলিক জিনিসটা খুব ভালোভাবে নিছে। ব্র্যান্ডিং ছাড়া এই যুগে অচল। ব্যাপারটা হচ্ছে একটা দেশের নাম বললে প্রথম কোন ব্যাপারটা মাথায় আসে? সোমালিয়া বললে প্রথমেই মাথায় আসে দূভিক্ষপিড়িত একটা দেশ। সে দেশে নিশ্চই সবাই না খেয়ে মরেনা, ঐদেশের অনেকে কোটি কোটি ডলারেরও মালিক। পাকিস্তান বললে প্রথমেই মাথায় আসে বোমায় ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া একটা দেশ। জ্ঞান বিজ্ঞান কৃষিতে উন্নত সিন্ধু সভ্যতার কথা মাথায় আসেনা। পাকিস্তানেও নিশ্চই স্বাভাবিক জীবন আছে। কলম্বিয়ার কথা বললে ড্রাগস এডিক্টেডদের চোখ চকচক করে উঠে। আমার মত মানুষরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবে ধারালো ছুরির মত সুন্দরী মেয়েদের দেশ! এটাই ব্র্যান্ডিং। মানুষের কাছে কোন মেসেজটা যাচ্ছে।
ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ইন্ডিয়ার ভাবমূর্তিই চেঞ্জ হয়ে গেছে। অথচ এটা তৃতীয় বিশ্বের আর দশটা গরিব দেশের মতই। এমনিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিদের তালিকায় ইন্ডিয়ান আছে বেশ কয়েকজন। একদিকে মুম্বাই দিল্লি ব্যাঙ্গালোরের ঝাঁ চকচকে এরিয়া হাইরাইজ বিল্ডিং অন্যদিকে পৃথিবীর সর্ববৃহত্ বস্তি চেইন। অমর্ত্য সেনের মতে এইটা ডিফেক্টিভ ডেভলপমেন্ট। ২০০৪ সালে বিজেপির নির্বাচনী স্লোগান ছিলো শাইনিং ইন্ডিয়া। খুব স্বপ্ন দেখাইছে এবং যদিও নিবার্চনে হারছে। ইন্ডিয়া আসলেই শাইনিং যখন আপনি সালমান খানের চোখে ইন্ডিয়া দেখবেন। অরুন্ধুতি রায়ের চোখে দেখলে এই মোহ আর থাকবেনা। আমাদের ইন্ডিয়া বলিউডের ইন্ডিয়া, আইপিএলের ইন্ডিয়া, হিন্দি সিরিয়ালের ইন্ডিয়া।
অথচ দেশটার কালো দিকই বেশি। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সরকারী হিসেবেই ভারতে আত্নহত্যা করেছে ১৭৫০০ জন কৃষক! ঋণের বোঝা বইতে না পেরে আত্নহত্যা করছে। বেসরকারি হিসেবে বছরে ৬ হাজার কৃষক আত্নহত্যা করে! এটা এক ধরণের গণহত্যা। শাইনিং ইন্ডিয়া থেরাপির পথে না হেঁটে বলিউডে পিপলি লাইভ নামে একটা সিনেমা হইছে। ফ্লপ হইছে কি না জানিনা, তবে শাইনিং ভক্তদের নাড়া দিছে। ৮৪ কোটি ইন্ডিয়ানের দৈনিক আয় ২৫ রুপির কম। হিন্দুস্থান টাইমসের মতে গ্রামের ৫০ ভাগ মহিলাকে খাবার পানি সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন গড়ে ৫ কিঃমি হাঁটতে হয়। প্রতিদিন ৩০০০ শিশু মারা যায় পুষ্টিহীনতায়। ২০০৯ সালের হিসেবমতে ইন্ডিয়ার স্ব্যাস্থখাতে ব্যায় ১.২ পারসেন্ট। এটা অলমোস্ট বিশ্বে সর্বনিম্ম। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী এদের শিশু মৃত্যুর হার হাজারে ৬৬ জন। কোন কোন প্রদেশে এই হার প্রায় ১২০ জন! সবচেয়ে বড় কথা এই দেশের ৫০ ভাগ মানুষের এখনো টয়লেট নাই!
সর্বশেষ বিষ্পোরক পরিসংখ্যান হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বোমাবাজি হয় ইন্ডিয়ায়! সংখ্যাটা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান পাকিস্তান সিরিয়া থেকেও বেশি!
মিসিং স্টেট বলে একটা টার্ম আছে। ইন্ডিয়ার একটা বিরাট অংশ মিসিং স্টেট। রাষ্ট্র এখানে পৌঁছাতে পারেনা কিংবা পৌঁছানোর সামর্থ নাই। পৌঁছাতে পারেনা বলতে খাদ্য বস্ত্র চিকিত্সা শিক্ষা রাষ্ট্রের কোন সুযোগ সুবিধাই পায়না। প্রতি বছর উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ইন্ডিয়া থেকে পাঁচ হাজারেরও বেশি শিশুকে দত্তক নেয়। প্রথম দিকে দত্তক নেওয়া বাচ্চাগুলো এখন পরিণত বয়সী। এরা দ্বিতীয়বার হয়তো ইন্ডিয়াতেই আসেনি। এদের অনেকে যখন জ্ঞান বিজ্ঞান শিল্প সাহিত্য রাজনীতিতে সাফল্য পায়, তখন ভারতীয়দের মনে পড়ে যায় সে তো আমাদের সন্তান! তারপর ভারতীয় বংশোদ্ভুত বলে জোর গলায় প্রচারণা চালায়। রাষ্ট্র খাদ্য বস্ত্র চিকিত্সা দিতে পারেনি বলে এরা অন্য দেশে গেছে এটা তাদের মনে থাকেনা।
পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে ভারত বললে বোঝায় ভূ বৈচিত্র প্রাকৃতিক বৈচিত্রে ভরপুর তাজমহলের দেশ। তাদের কালো দিকগুলো প্রথম ধাক্কায় কারো মাথায় আসেনা। আখেরে কিন্তু লাভ ভারতীয়দের। তারা ঠিকঠাক মেসেজটা পাঠাইতে পারছে। তাদের দৃষ্টিকোন থেকে মোটেই খারাপ ব্যাপার না। বাংলাদেশ বললে পৃথিবীর কারো মাথায়ই বিস্তৃর্ণ সৈকত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের কথা মাথায় আসেনা। বরং কাউকে যদি জিজ্ঞাস করা হয় সুন্দরবন কোথায়, সে নির্ঘাত বলবে ইন্ডিয়ায়!
একজন মানুষের যতটুকু ক্ষমতা আছে সেটা তার প্রকৃত ক্ষমতা না। লোকে যেটা ধারণা করে সেটাই তার প্রকৃত ক্ষমতা। লোকে যদি ধারণা করে মন্ত্রীর সাথে কবির ভাইয়ের হাত আছে তাইলে ঐটাই তার প্রকৃত ক্ষমতা। হাত থাকুক বা না থাকুক। কবির ভাই যদি থানায় ফোন করে বলে, ওসি সাব অমুককে ছেড়ে দেওয়া যায় কিনা দেখেনতো। তখন ওসি যদি ধারণা করে কবিরের অনেক ক্ষমতা তাইলে অমুককে ছেড়ে দিবে। অমুকের ক্ষমতা থাকুক না থাকুক কিছুই এসে যায় না। শফিক সাহেবের কত টাকা আছে এটা মূখ্য না, লোকে যদি ভাবে শফিক সাহেবের ৫০০ কোটি টাকা আছে তাইলে সে ৫০০ কোট টাকার ক্ষমতা ভোগ করতে পারবে। তার ৫০০ কোটি টাকা থাকার পরও লোকে যদি ভাবে সে ৫ লাখ টাকার মালিক, তাইলে সে ৫ লাখ টাকারই সুযোগ পাবে। ব্যাপারটা হচ্ছে লোকে কী ভাবে। ব্র্যান্ডিং।
দেশ হিসেবে আমরা মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র ব্যাতিক্রম। এখানে নেগেটিভ জিনিসটাই এক্সপোর্ট করা হয়। কোন দেশ যদি না জানে তাইলে আমরা রাষ্ট্রীয় ভাবেই গিয়ে বলে আসি “আরে ভাইসাহেব আপনেতো জানেন না, গত বন্যায়ও আমাদের দেশে ৮৮ জন মারা গেছে” “স্যার দেশে সাম্প্রদায়িকতা চরমে, জঙ্গিরা দশটা মন্দিরে আগুন দিছে, আপনারা এখনো জানেন না !?”
ভালো বলেছেন কথাগুলো। আমরা এক
ভালো বলেছেন কথাগুলো। আমরা এক অদ্ভুত জাতি। নিজেদের হোগা মারায় আমরা ওস্তাদ। স্ল্যাং ইউজ করার জন্য স্যরি। এরচেয়ে ভদ্র স্ল্যাং পাইলাম না। :আমিকিন্তুচুপচাপ:
কিছু প্রজাতির ব্যাক্তি
কিছু প্রজাতির ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য স্ল্যাং না ইউজ করাই অপরাধ।
“দেশ হিসেবে আমরা মনে হয়
“দেশ হিসেবে আমরা মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র ব্যাতিক্রম। এখানে নেগেটিভ জিনিসটাই এক্সপোর্ট করা হয়।” এবং এক্সপেক্টও করা হয়…
চমৎকার বলেছেন!! মানসিকতার পরিবর্তন চাই, কিন্তু কীভাবে?
ব্যাক্তি পর্যায়ে সমস্যাটা
ব্যাক্তি পর্যায়ে সমস্যাটা নাই। সমস্যাটা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে। ধরেন রাজনৈতিক দল এনজিও এসব আরকি।
খুব তথ্য বহুল একটি পোস্ট। ভাল
খুব তথ্য বহুল একটি পোস্ট। ভাল লাগল।
তথ্য প্রোভাইড করা মোটেই এই
তথ্য প্রোভাইড করা মোটেই এই পোস্টের উদ্দেশ্য ছিলো না। আমার ডাটা রেফারেন্স হিসেবে না নেওয়াই বেটার।