রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার হৈমন্তী গল্পে একটি কথা বলেছিলেন, “মানুষ পন করে পন ভাঙিয়া ফেলিয়া হাঁফ ছাড়িবার জন্য”। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতিজ্ঞা করা ছাড়াও, শুধু এই হাপ ছেড়ে বাচার লোকও নেহাত কম না।
ব্যপারটি একটু ব্যাখ্যা করলে মনে হয় ভাল হবে। প্রায়ই দেখা যায় একদল লোকের সাথে আরেকদল লোকের মত নিয়ে বিরোধ হয়। যেমন বহুল আলোচিত একটি বিতর্ক, একদল বলছে বিবর্তনবাদ বৈজ্ঞানিক ভাবে সত্য ও প্রমাণিত, আরেক দল বলছে না এটি কখনই সত্য হতে পারে না, এখন আপনি যদি আপনার পূর্বপুরুষকে বানর বলে খুশি থাকেন তবে বলতে পারেন এ রকম কথা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার হৈমন্তী গল্পে একটি কথা বলেছিলেন, “মানুষ পন করে পন ভাঙিয়া ফেলিয়া হাঁফ ছাড়িবার জন্য”। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতিজ্ঞা করা ছাড়াও, শুধু এই হাপ ছেড়ে বাচার লোকও নেহাত কম না।
ব্যপারটি একটু ব্যাখ্যা করলে মনে হয় ভাল হবে। প্রায়ই দেখা যায় একদল লোকের সাথে আরেকদল লোকের মত নিয়ে বিরোধ হয়। যেমন বহুল আলোচিত একটি বিতর্ক, একদল বলছে বিবর্তনবাদ বৈজ্ঞানিক ভাবে সত্য ও প্রমাণিত, আরেক দল বলছে না এটি কখনই সত্য হতে পারে না, এখন আপনি যদি আপনার পূর্বপুরুষকে বানর বলে খুশি থাকেন তবে বলতে পারেন এ রকম কথা।
এই রকম দুই দলের মধ্যে একদল লোক থাকবেন যারা একটি মত দিয়ে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচবেন। তাদের মনভাবটা এমন যেন, এই কথাটা বলতে পেড়ে নিজের মানুষ পরিচয় বাচালেন, আর হাপ ছেড়ে বাচলেন।
এই ধরনের লোকেদের কাজ শুধুমাত্র তাদের মতটিকে জানানো।তারা কখনো ভেবে দেখবেনা, তারা কি বলেছে।আর আসল সত্যটি-ই বা কি? তাদের মনের ভয়টা এইরকম যে, বিবর্তনবাদ সত্য হলে বুঝি মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। আবার অনেকেই তার নিজের ধর্মগ্রন্থের বয়ানের ভিত্তিতেও, কিছু না ভেবেই এইসব(বিবর্তন) মতবাদ পরিহার করে থাকেন।
এখন আমাদের আসলে প্রত্যেকেরই কিছু ন্যূনতম বিষয় সম্পর্কে কিছু জিনিস ভাবা দরকার বলে আমি মনে করি, অন্তত যেসব বিষয়ে আমাদের খুব বেশি ভুল ধারনা রয়েছে। যেমন একটি উদাহরন দেওয়া যাকঃ আমরা জানি ডাক্তারি বিদ্যা একধরনের বিজ্ঞান। মানে, যারা এম. বি. বি. এস. বা যেকোনো মেডিক্যাল পেশার জন্য পড়াশুনা করছেন তারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন। কিন্তু আমাদের ধারনাটি কিন্তু প্রায় পুরোটাই ভুল। ডাক্তারি বিদ্যা মুলত একটি চর্চা নির্ভর বিদ্যা। যারা এম. বি. বি. এস. বা এইরকম পেশায় আছেন তারা এই সম্পর্কে খুব ভাল জানেন। কিন্তু চর্চা নির্ভর বিদ্যা কখনই বিজ্ঞান শিক্ষা না। ডাক্তাররা যে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন সেগুলো কিন্তু নতুন মেডিক্যাল জার্নাল পরে তারপর প্রেসক্রিপশন করেন না। বরং তার অভিজ্ঞতা ও বইয়ে পড়া পদ্ধতির সমন্বয়ে করে থাকেন। আর বিজ্ঞান হল পুরপুরি আলাদা একটি জিনিস। সেখানে চর্চা নির্ভর কিছু নেই। পরিক্ষা নিরীক্ষা করে যা প্রমান হবে সেটাই চূড়ান্ত। আজকে যেটা বৈজ্ঞানিক সত্য, সেটা কাল আর নাও থাকতে পারে। কিন্তু এই পেশার ক্ষেত্রে ব্যপারটা অনেক আলাদা। একজন আজকের তথ্য অনুসারে তার চিকিৎসা চালাতে পারবে না। তবে চিকিৎসা শাস্ত্র অবশ্যই বৈজ্ঞানিক সত্যের উপর নির্ভর করেই চলে। তার মানে কিন্তু এই না যে চিকিৎসা শাস্ত্র পড়া মানে বিজ্ঞান পড়া।
যাই হোক এই ছোট উদাহরন থেকেই আমরা বুঝতে পারছি আমাদের জানা অনেক কিছুর মুল রূপটিই অনেক ভিন্ন হতে পারে এবং বিজ্ঞান মানে কি ? এখানে উল্লেখ্য যে আমরা পাঠ্য বইয়ে যেগুলো পড়ি সেগুলো কিন্তু এখন আর বিজ্ঞান না। এক বিখ্যাত বিজ্ঞান লেখক বিজ্ঞানকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। তার মধ্যে
১. নন সাইন্স
২. সিউডো সাইন্স বা নকল সাইন্স
৩.সাইন্স
এই তিনটির কথা বলেছেন। আমরা প্রচলিত ভাবে বইতে যেসব পড়ে এসেছি সেগুলকে তিনি নন সাইন্স এর আওতায় ফেলেছেন। আর বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় জনপ্রিয় বিজ্ঞান (Popular Science) এর ধারার সাথে মিল রেখে এক ধরনের তথাকথিত বিজ্ঞানের বই লেখা হয়। যেগুলোর মুল কাজ হয় বৈজ্ঞানিকরা বছরের পর বছর ধরে পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষণা করে যা বের করেন তাকে বিভিন্ন উল্টাপাল্টা যুক্তি দিয়ে ভুল প্রমাণিত করা।
একটি উদাহরন দেওয়া যাক। মাইকেল বিহে, জর্জ এলিস, ফিলিপ জন্সন এই রকম কয়েকজন তথাকথিত দার্শনিক লেখক মিলে এক তত্ত্ব দ্বারা করালেন যার নাম ইন্টিলিজেন্স ডিজাইন বা সংক্ষেপে আই. ডি. তত্ত্ব। এই তত্ত্ব ব্যাখ্যা করবে এই মহাবিশ্ব শুন্য থেকেই তৈরি হয়নি,বরং এই মহাবিশ্ব তৈরির পেছনে রয়েছে এক বুদ্ধিমান সত্ত্বার কারসাজী। যেহেতু এই তত্ত্ব ধর্মপ্রানদের ও আমেরিকার ক্রিশ্চিয়ান পার্টির খুব পছন্দ হল তাই একে জোর করে কিছুদিন ইউ. এস. এ. এর পাঠ্য বইয়ে রাখা হয়েছিল। পরে অবশ্য সংবিধান বিরোধী হওয়ায় একে(অবৈজ্ঞানিক বলে) বাদ দেওয়া হয়েছে।(তবে এখনো কিন্তু বিভিন্ন ধর্ম প্রচারকরা এই তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলেই চালান) এখানে খেয়াল করার মত ব্যাপার হল এই তত্ত্ব যদিও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব না, তবুও এটি পাঠ্য বইয়ে স্থান পেয়েছিল কারন রাজনৈতিক সুবিধা ও সাধারন মানুষের মনগলান।
এই আই. ডি. তত্ত্বের মত বিবর্তনবাদকে ভুল প্রমান করার জন্যও অনেক দার্শনিকগন তাদের জ্ঞানগর্ভ পুস্তক রচনা করেছেন। আর সাধারণ মানুষ(আসলে সাধারণ না, অসাধারন রকম বোকা) এগুলোকে বিশ্বাস ও ধর্মগ্রন্থের মত প্রচার করেছে ও উদ্ধিতি দিয়েছে। এখানে লক্ষ করুন, এই বইগুলকে তারা বিশ্বাস করেছে, কিন্তু বিজ্ঞান ব্যপারটা মোটেই বিশ্বাসের না।
তাই আজকাল আমাদের জানা দরকার হয়ে পড়েছে, বিজ্ঞান আসলে কি ? বা বিজ্ঞানের কাজ কি ?
এখন আজকালকার একদল জ্ঞানী লোকদের দেখা যায় প্রচলিত ধারনা বা ধর্মগ্রন্থের বাইরে কিছু গেলেই তাকে তুচ্ছ করে ফেলে দেওয়া। আর প্রমান সরুপ তার নিজের বা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের সাহায্য নেওয়া। এখানে মজার একটি ব্যাপার লক্ষ্য করা যায় যে , সব ধর্মের লোকজনই তার ধর্মগ্রন্থকে ১০০ ভাগ ঠিক প্রমান করার জন্য একটি বিজ্ঞানের সার্টিফিকেট লাগায়। ভাবটা এমন যেন , বিজ্ঞান এই গ্রন্থকে পাশ সনদপত্র দিয়েছে। কিন্তু তারাই আবার বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ভুল প্রমান করতে চায় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের উপর ভরসা করে ।
বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে ভুল বলে প্রমান করার চেস্টা অনেক পুরনো রোগ। আর এই রোগের শিকার তারাই যারা অন্ধ ধর্ম বিশ্বাসী। এরা মনে করে তাদের এই তত্ত্ব মেনে নেওয়া মানে তাদের ধর্ম শেষ হয়ে যাওয়া। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় পুরনো দিনে মানুষ খুব হাস্যকর জিনিস বিশ্বাস করত এবং তা স্রেফ এই ধর্মগ্রন্থের উপর ভরসা করে। ধর্মগ্রন্থ বলে পৃথিবী কেন্দ্রে অবস্থান করে, তাই পৃথিবী কেন্দ্রে। আর যেসব বিজ্ঞানী এর উলটা বলে, তাদের মেরে ফেল। এই হল বিশ্বাস ও তার যুক্তি। এভাবে অনেক বিজ্ঞানীকে সাজা দেওয়া থেকে শুরু করে মেরে ফেলা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা এই ন্যূনতম জিনিস জানি যে আমাদের পৃথিবী বা সৌরজগৎ কেমন । আর তাই এই সব বিষয় নিয়ে আর কাউকে জীবন দিতে হয় না। এখন সমস্যা বিবর্তনবাদ। কারন এই তত্ত্ব আমরা ভাল মত বুঝি না, আর এর প্রযুক্তিগত প্রমানও সাধারণ মানুষ এখনো বোঝে না(যদিও এর সুফল আমরা ভোগ করছি জ্বরের ওষুধ থেকে শুরু করে জীবনরক্ষাকারী অনেক উপাদানের ক্ষেত্রে), তাই এটি মেনে নিলে ধর্মগ্রন্থ তার পবিত্রতা হারায়, মানুষের জাত যায়। তবে খেয়াল করলেই বোঝা যায় কেন আজকে আমরা পৃথিবী বা সৌরজগৎ সম্পর্কে ধর্মগ্রন্থের সাথে বোঝাপড়া করিয়ে নিয়েছি। আর বেশ কয়েক শতাব্দি পরে, বিবর্তন তত্ত্বের সাথেও বিজ্ঞানের একটা বোঝাপড়া করিয়ে নেব। তখন আমাদের সর্বকাল-জয়ী ধরমগ্রন্থগুলোর আধ্যাত্মিক অর্থ পালটিয়ে যাবে। সেখানে পাতায় পাতায় বিবর্তনবাদের সত্যতা উঠে আসবে। এখন যেমন বিগ ব্যাঙ থিয়োরি ও ব্ল্যাক হোল খুজে পাওয়া যায়।
যেসব লোকেরা হাপ ছড়ে বাচেন এই বলে যে, বিবর্তনবাদ মিথ্যা, তারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন বিজ্ঞান কি? আর এর কাজটাই বা কি ? অথবা যখন খবরে শোনেন একদল লোকের কথা যারা চর্চা করে শিশু হত্যার বা একজন লোকের যিনি পশুর মত হত্যা করেছে তার নিজের আপন ভাইকে। অথবা এমন একটি কুকুর যে তার প্রভুর জন্য জীবন দিয়েছে। তখন মানুষের মানবিকতার অহংকার কোথায় যায় ?
আচ্ছা আমরা প্রতিদিন নিউজপেপারে যে ধর্ষণের খবর আর হত্যার খবর শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি, তারা কি এই বর্বর আর পুশু থেকে নিকৃষ্ট(পশুকে কখনো মানুষ ধর্ষণ করতে শুনিনি, তবে মানুষ দ্বারা পশু ধর্ষণের খবর শুনেছিলাম পত্রিকায়) কাজের জন্য নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব হারাচ্ছি না প্রতিদিন ??? নাকি আমাদের মানবিকতার চাইতে আমাদের ধর্মগ্রন্থের বানীকে অন্ধ সমর্থন করাতেই আমাদের মানুষ পরিচয় সারটিফাইড হয় ?? কোনটা ? যখন এই হাপ ছড়ে বাচার দল বিবর্তনবাদের সমলোচনা করে নিজেদের পশুত্তের হাত থেকে বাচান, তারা কি মনে করেন আসলে ? তাদের কথাতে আমার তাই মনে হয় , যেন, যে এই তত্ত্ব সমর্থন করে সে পশু বা তার চাইতে নিকৃষ্ট। সত্যি হাস্যকর। যিনি তত্ত্বটি বোঝেন না, এমনকি বিজ্ঞান কি? সেটাও বোঝেন না, কিন্তু তিনি অবলীলায় নিজের মানুষ পরিচয় বাচিয়ে দেন একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে ভুল বলে, আর হাপ ছেড়ে বাচেন উনি একজন মানুষ । কিন্তু মানুষের পুশু থেকে নিকৃষ্ট কাজগুলো তাকে ভাবায় না !!!
বিবর্তনের পাঠ শেখানো এই লেখার উদ্দেশ্য না, তাই এই সম্পর্কে কিছু বলা হল না। তবে আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব যে অনেক গভীর সেটা বলাটা খুবই জরুরী। কারন বিজ্ঞান বিরোধী কার্যকলাপ ও চিন্তাভাবনা আমাদের পিছিয়ে দেবে শত বা হাজার বছর পেছনে। তাই জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের চিন্তার ধরন সম্পর্কে সজাগ হতে হবে। যেখানে বিজ্ঞানের সুযোগ সুবিধার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানকে মিথ্যা প্রমান করবার হাস্যকর চেস্টা করা হয় ও মানুষ হত্যা করা হয় আবেগে । অন্তত এইসব কখনই পুশুত্বের অবসান করতে পারে না, আর হাপ ছাড়াটাই হয়ে যায় বেকার।
ভাল বলেছেন ।
ভাল বলেছেন ।
উচ্চমাধ্যমিক প্রাণীবিজ্ঞান
উচ্চমাধ্যমিক প্রাণীবিজ্ঞান বইয়ে কোন কোন প্রজাতি হতে বিবর্তিত হয়ে মানুষ এসেছে, তার ছোটখাট একটা বর্ণনা ছিল। সেখান থেকে একবার আমাদের বায়োলজি টিচারকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। তার উত্তর ছিল, এসব তো বিশ্বাস করা যাবে না। এগুলো পরীক্ষায় পাশ করার জন্য মুখস্থ করা লাগবে। কিন্তু, বিশ্বাস করা যাবে না।