১৬.৮.১৯৭৫ : ঘাতকের আঘাতে আহত বঙ্গবন্ধু চিকিৎসাধিন ঢাকার পিজি হাসপাতালে। চিকিৎসা করছেন বাংলাদেশ, সোভিয়েত আর ভারতিয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। এর পরের রূপকল্প–
এ যেন আকাশ মন্ডল আর শ্যামল পৃথিবীর অচেনা বনফুলের এক চমকপ্রদ অশ্রু নদীর হৃদয় বিদারক কাব্যগাঁথা। এর পরতে পরতে বর্ণিত হয়েছে বিশ্বের এক মহান নেতা মৃত্যুর গহিন গহবর থেকে কিভাবে বেড়িয়ে এসে তার জাতিকে দাঁড় করিয়েছিলেন ২০১৪ সনে নক্ষত্রের মাঝে এক অন্যন্য উচ্চতায়! এ যেন তারই প্রাণের কালস্রোতে ভেসে যাওয়া এক অমিয় মহাকাব্য!
১৬.৮.১৯৭৫ : ঘাতকের আঘাতে আহত বঙ্গবন্ধু চিকিৎসাধিন ঢাকার পিজি হাসপাতালে। চিকিৎসা করছেন বাংলাদেশ, সোভিয়েত আর ভারতিয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। এর পরের রূপকল্প–
এ যেন আকাশ মন্ডল আর শ্যামল পৃথিবীর অচেনা বনফুলের এক চমকপ্রদ অশ্রু নদীর হৃদয় বিদারক কাব্যগাঁথা। এর পরতে পরতে বর্ণিত হয়েছে বিশ্বের এক মহান নেতা মৃত্যুর গহিন গহবর থেকে কিভাবে বেড়িয়ে এসে তার জাতিকে দাঁড় করিয়েছিলেন ২০১৪ সনে নক্ষত্রের মাঝে এক অন্যন্য উচ্চতায়! এ যেন তারই প্রাণের কালস্রোতে ভেসে যাওয়া এক অমিয় মহাকাব্য!
সারারাত ২০-সদস্যের ত্রি-দেশীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম অক্লান্তভাবে অব্যাহত রাখলেন তাদের ধারাবাহিক অপারেশন কার্যধারা। ১৬ আগস্ট পচাত্তর সকাল ১১-টায় একটানা ১৪-ঘন্টার অপারেশন শেষে তারা পর্যবেক্ষণে রাখলেন বাঙালি জাতির অন্ধকার ধূলোয় ম্রিয়মান পিতার ক্ষিয়মাণ হৃদক্রিয়া আর শারীরিক ছন্দষ্পন্দনকে। বাইরে অন্ধকারে সারারাত কুয়াশার তিমির নিঙড়ায়ে জেগে থাকা লক্ষ মানুষকে তাৎক্ষণিক খবর জানানোর জন্যে পিজির রাস্তায় লাগানো হলো ‘কলরেডি’র সব এপ্লিফায়ার-গুলো। মাইকে কে-একজন কিছু না ভেবেই বললো, ‘আপনারা সবাই বঙ্গবন্ধুর জীবনের জন্যে প্রার্থনা করুন’ তিনি বেঁচে উঠবেন!
মহাকালের বজ্রের মতো পূর্বাহ্নের ধূসর সজলতাকে ভেঙেচুড়ে বিকীর্ণ পদতলে মুহূর্তে খালি হয়ে গেল ঢাকার রাজপথগুলো, মনে হলো হৃদয়ের নীরব বেদনার গন্ধে কে যেন তাদের নির্দেশনা দিয়েছে করণীয় সম্পর্কে।
মুসলমানরা দৌঁড়ে গেল মসজিদে মসজিদে বিকেলের সূর্যস্নাত আবছা অন্ধকারেও। ধর্মকর্মে আপাত উদাসীন, নামাজ আসক্তি-বর্জিত অজ্ঞেয় আর বস্তুবাদি তরুণও দু’হাত উঠালো হৃদয়ের পরাবাস্তবতায়। বায়তুল মুকাররমের খিলান উপচে আশ-পাশের রাস্তায় মুনাজাত ধরলো লক্ষ মুসলমানের হাত অনন্ত স্রষ্টার পানে, কাঁদলো অশ্রু নদীর ঢেউয়ে। চোখের জলে স্নাত হলো তাদের হৃদয় অনন্ত বিষণ্ণতায় সময়ের মহানায়কের কল্যাণে। কেউবা সিজদায় কান্নায় ভেঙে পড়লো অপরাহ্নের চৈত্রের ক্লান্ত ঘুঘুর করুণ ডাকের মতো।
সনাতন ধর্মী হিন্দুরা রক্ষাকর্তা শিবের অর্চনা শুরু করলো মন্দিরে মন্দিরে ধূপ-ধুনা জ্বালিয়ে বেলপাতা-রুদ্রাক্ষ সহযোগে ত্রিশূল স্পর্শে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য আর শূদ্রেরা একত্রে হোম, পিণ্ডদান আর মহাযজ্ঞে অনাবিষ্কৃত সড়কের মন্দিরগুলোও উজ্জ্বলতর করলো। কায়মনবাক্যে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলো হোমাগ্নির যজ্ঞীয় বেদীতে। দূর্গেশনাশিনী দেবী দূর্গা আর কল্যাণের দেবী লক্ষ্মীর পূজা করলো যজ্ঞকুণ্ডে। শিশুরা চকলেট খাওয়ার জন্যে লুকিয়ে রাখা টাকায় ভেট কিনে উৎসর্গ করলো মন্দিরে। বঙ্গবন্ধুর প্রাণ ভিক্ষা চাইলো শিব-ব্রহ্মা আর বিষ্ণুর কাছে সমবেত করুণ সুরে।
বৌদ্ধরা বিহারগুলোতে ভগবান বুদ্ধের পাদপ্রান্তে নত হয়ে পবিত্র জল আর তেল উৎসর্গ করলো বঙ্গবন্ধু স্মরণে। চন্দনকাঠ পুড়িয়ে বুদ্ধমূর্তিকে স্মরণ করে মনোবাঞ্ছা জানালো পরম সৌরভে। মহামন্ত্র চক্রে হাত লাগানো হীনযানী-মহাযানী আর পুক্কুস পৌরাণিক বুদ্ধরাও বঙ্গবন্ধুর জীবন ও মঙ্গলাকাঙ্খায়। মঠগুলোকে গেরুয়া পোশাকের ন্যাড়ামুণ্ড তরুণ পুরোহিতরা ত্রিপটক পাঠ, ঘন্টাধ্বনি, মালাজপ, পবিত্রজল, তৈলসিক্ততা, মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে মুখরিত করলো।
দিনটি অ-রোববার হলেও খ্রীস্টানরা উন্মুক্ত করলো গীর্জার বিশাল দরজাগুলো। ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট, ইস্টার্ন অর্থোডকস, লুথেরান, আনাব্যাপটিষ্ট, ক্যালভিনিস্ট, এ্যাংলিকানিজম, প্রেসবাইটেরিয়ান, মেথডিজম সবাই সমবেত হলো যার যার চার্চে। পাদ্রী, ফাদার, সিস্টার আর ব্রাদার-রা গলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে সমবেত পাঠ করলো ৪০০ খ্রীস্টাব্দের হিব্রু বাইবেলের ভালগিট থেকে। ক্যাথেড্রালে বিশপগণ সাক্রামেন্ট করালেন প্রীষ্ট, ডীকন, সাবডীকন, একোলাইট, রিডার, এক্সরকিস্ট আর ডোর কিপার সহযোগে স্রষ্টার করুণা চেয়ে। ঈশ্বর, যিশু ও মেরির কাছে সানুনয় আকুতি জানালো বঙ্গবন্ধুর জীবনদানের। খ্রীস্টান তরুণীরা করুণ অর্কেস্ট্রায় গাইলো যিশুর পুনরুত্থান দিবসের পবিত্র বিলাপের শোক সঙ্গীত।
গৃহিনীরা চোখের জলে ভাসালো বুক; কেউবা মানত করলো ‘জানের বদলে জানে’র নৈবেদ্য। রাতের গহিনে অষ্পষ্ট যাত্রা পথের রেখায় লঞ্চ, বাস, ট্রেনে হাহাকার করে যাত্রীরা খুঁজলো সম্পর্কের সুঁই-সুতো বঙ্গবন্ধুর সাথে। মাঝির কান্নায় ঝড়ে পড়লো তার সোনারং ঘাম আর হাতের রক্তদানার বৈঠা, পরিবারগুলো উৎসবাদি স্থগিত করলো বুকের প্রত্ন গুহায় জমে থাকা কষ্টে, মাজারে মাজারে চললো দোয়া-শিরণি আর বেদনার গহিনের তবারক বিতরণ। গাজন গানের আসর ছেড়ে ভূমিপুত্র কিষাণ-কিষাণীরা কাঁদলো অঝোরে বৃক্ষকষের কুপি জ্বালিয়ে জীর্ণ কুটীরে কুটীরে।
সবাই স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করলো নিজ নিজ রীতিতে একটি জীবনের জন্যে ইট কনক্রিটের পাথুরে শহরে, আর হিজল তমালের শুকনো ঘাস পাতাদের বনে! জন্মান্ধ নক্ষত্রপুঞ্জের মতো শাহবাগ মোড়ে একজন গেয়ে উঠলো, ‘ও বঙ্গবন্ধু! আমি বেঁচে থাকলেও, তোমার মৃত্যু মানেই আমি মৃত’!
[অসমাপ্ত, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ শাসনের ইতিহাস ১৯৭৫-২০১৪ থেকে নেয়া]
লেখকের ফেসবুক ঠিকানা [ধর্মান্ধতামুক্ত যুক্তিবাদিদের ফ্রেন্ডভুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানাই ] : https://www.facebook.com/logicalbengali
বাকরুদ্ধ
বাকরুদ্ধ
কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি।
কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি। :bow: :bow: :bow: :bow: :bow: :bow:
‘ও বঙ্গবন্ধু! আমি বেঁচে
:salute: :salute: :salute: :salute:
(No subject)
:ভাঙামন: :ভাঙামন: :ভাঙামন: :ভাঙামন: :মনখারাপ: :মনখারাপ: :salute: :salute:
(No subject)
:bow: :bow: :bow: :bow: :bow: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ:
ধন্যবাদ তারিককে।
ধন্যবাদ তারিককে।
(No subject)
:bow: :bow: :bow: :bow: :নৃত্য: :নৃত্য: :নৃত্য: :নৃত্য: :গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ:
অভিনব লেখা পড়ে বাকরুদ্ধ
অভিনব লেখা পড়ে বাকরুদ্ধ হয়েছি। :bow: :bow: :bow: :bow: :bow: :bow: :bow: :bow:
ধন্যবাদ আপা
ধন্যবাদ আপা
(No subject)
:bow: :bow: :bow: :bow: :bow: