ভালোবাসা দিবস শেষ আশা করছি আমাদের অন্তরের ভালবাসা শেষ হবে না কখনোই। (বিঃদ্রঃ “ভালবাসতে কোন দিবস লাগে না”, আমি কিন্তু এই মতবাদেই বিশ্বাসী) ভালোবাসা দিবস পরবর্তী রিভিউয়ের জন্য একটি অন্যরকম ভালবাসা সংক্রান্ত মুভির কথাই মনে হল। (যদিও এইটা মনে হয় কারোই দেখা বাকি নাই, তারপরও যদি কারো থেকে থাকে সেই কারনেই শেয়ার করছি এখানে।) আমরা আজকাল নিজেরা কাউকে ভালবাসছি কিংবা নিজেদের বন্ধু-বান্ধব অথবা আশেপাশের অনেকের জীবনের ভালোবাসার গল্প দেখছি ও শুনছি। এক-এক জনের এক-এক রকম গল্প। তবু বলব এই মুভিটির মত গল্পের চরিত্র আমাদের মাঝের খুব কম সংখ্যক মানুষই হয়েছেন এবং খুব কম সংখ্যক মানুষকেই হতে দেখেছেন। যাই হোক আর কথা না বারাই…
কখনো আলো-ছায়ার খেলা
কখনো শুধুই আঁধার।
কোথাও থামে ভেজা সহনি
কোথাও ফুলের বাহার।
কোথাও চেতনা পাহাড় ভাঙ্গে
কোথাও বিপন্ন কৃষ্টি।
তবু এক মুঠো সুখ ছুঁয়ে গেলে ভাবি
এ যেন হঠাৎ বৃষ্টি…
বৃষ্টি নিয়ে গান কবিতার কোন শেষ নেই। বৃষ্টি যেন পুরো দুনিয়ার প্রতি সৃষ্টিকর্তার এক অনন্য উপহার। আর এই বৃষ্টির প্রশংসা বলে শেষ করার মত নয়। অবাক হচ্ছেন মুভির কথা বাদ দিয়ে কেন এত বৃষ্টি বৃষ্টি করছি। আজকে আসলে এই বৃষ্টিময় এক মুভির কথা বলতে এসেছি…
“বারান” পার্সি ভাষার শব্দ যার অর্থ বৃষ্টি। জি আজকে পার্সিয়ান ভাষার ইরানি চলচ্চিত্র “বারান” এর কথা বলব… খ্যাতিমান ইরানি পরিচালক মাজিদ মাজিদি পরিচালিত মুভি বারান ২০০১ সালে সালে মুক্তি পায়।
প্রথমেই বলে নিচ্ছি ভালোবাসা জিনিস টা আজ বড় বেশি আপেক্ষিক হয়ে গেছে। তবে প্রকৃত ভালোবাসা বা অচরিতার্থ মনের নিরেট ভালোবাসা বলতে যা বোঝায় তার এক অপূরূপ প্রদর্শনী যেন এই মুভিটি।
কাহিনী খুব সাদাসিদা ভাবে এগিয়েছে… সোভিয়েত যুদ্ধের ফলে বহু আফগান ইরানে এসে রিফুজি ক্যাম্পে বসবাস করছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব আফগানদের ইরানে কাজ করার অনুমতি নেই। কিন্তু এদের মজুরি ইরানি শ্রমিকদের চেয়ে সস্তা হওয়াতে বেআইনি ভাবে এদেরকে অনেকেই কাজ দেয়। গল্পের শুরুতে সেইরকম এক নির্মাণ সাইটে এক আফগান আহত হয় এবং পরদিন হতে তার ১৪ বছরের ছেলে রাহমত আসে তার জায়গায় কাজ করতে। ওই সাইটে আর এক শ্রমিক ছিল লতিফ ১৭ বছর বয়স। সাইটের খাওয়া দাওয়া চা নাস্তার ব্যবস্থা করা ছিল তার কাজ। আর স্বভাবে লতিফ ছিল বড়ই অলস, বদ, কলহ প্রিয়। যার তার সাথে যখন তখন মারামারি জুড়ে দেয়াতে তার জুরি মেলা ভার। এভাবে ভালই কেটে যাচ্ছিল লতিফের জীবন। কিন্তু ঝামেলা বাধে যখন সাইটের কন্ট্রাক্টর লতিফের কাজ রাহমাত কে এবং রাহমাতের কাজ লতিফকে করতে দেয়। এর পর লতিফ রাহমাতের প্রতি বড়ই ক্রুদ্ধ আচরন শুরু করে।
এরপর…
এরপর কাহিনির আবর্তে লতিফের জীবনে আসে এক মেয়ে… যাকে দেখার পরই লতিফ প্রেমে পড়ে যায়… বদ মেজাজি লতিফ ভালমানুষে পরিনত হয়… স্রেফ মেয়েটার প্রতি ভালবাসার কারনে… কিন্তু লতিফের জীবনে শীঘ্রই আঁধার নেমে আসে যখন ঘটনা প্রবাহে লতিফ তার ভালোবাসার কথা বলার আগেই সেই মেয়েকে হারিয়ে ফেলে… তারপর দিশেহারা লতিফ অনেক চরাই উৎরাই পেরিয়ে খুজে বের করে তার প্রিয় মুখ… কিন্তু তার ভালোবাসা তখন সীমাহীন কষ্টে হাবুডুবু খাচ্ছে… ভালোবাসার মানুশ টিকে সাহায্য করার জন্য দরিদ্র লতিফ তার সকল সহায় সম্বল ত্যাগ করে দেয়… এমনকি নিজের পরিচয় পত্র যেটা ছাড়া ইরানে তার কোন দামই নেই, কেউ তাকে কাজ দিবে না সেটাও বিক্রি করে দেয়… তার ভালবাসার মানুশ কিন্তু এসব কোন কথাই জানে না… এমনকি লতিফ যার জন্য এত কিছু করছে সেই মেয়ের নামটা পর্যন্ত লতিফ জানে না… মুভির একেবারে শেষের দিকে এসে তার নাম জানতে পারে “বারান”… এমন ভালোবাসা চিন্তা করা যায়???
শেষ পর্যন্ত কি হয় তা জানতে হলে মুভিটি আপনাদের দেখতে হবে… এটি স্পর্শ, প্রেমালাপ, রোমান্স বিহীন এক আবেগময় ভালবাসার গল্প… যে ভালোবাসা মনের গভীরে আজীবন বেচে থাকবে…
মুভিটিতে যদিও খুব বেশি সংলাপ নেই… তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার পুরো মুভিতে মুভির নায়িকার একটিও সংলাপ নেই…
মুভিটি দেখার পর সত্যি ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম… আমাদের ভালোবাসা আর লতিফের ভালোবাসার তুলনা করে… আজকাল মানুষ কতকিছু বিচার বিবেচনা করে ভালোবাসা করে… আর লতিফও ভালবেসে ছিল… যে এখন পর্যন্ত বলতেই পারল না তার ভালালাগার মানুষটাকে যে “তোমাকে ভালবাসি”, অথচ সে তার সব কিছু বিসর্জন দিয়ে দিলো… ভালোবাসা মনে হয় এটাই… যেখানে নিজের কোনই চাহিদা থাকে না… নিজেকে অন্যের তরে বিলিয়ে দেয়াটাই ভালোবাসা…
মুভির অন্যতম এবং সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য মনে হল আমার কাছে একেবারে শেষ দৃশ্যটি… শেষ দৃশ্যের বৃষ্টি যেন ঠিক ভালবাসার মতই আমাদের মনের গভীরে থেকে যাওয়া সকল খারাপ জিনিশকে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে দিয়ে যায়…
আর মুভির টেকনিক্যাল ব্যাপারের কথা আর কি বলব…
মুভিটির পরিচালক যেখানে বিখ্যাত মাজিদ মাজিদি। যার কিনা মাস্টারপিসের শেষ নেই। চিলড্রেন অফ হেভেন, কালার অফ প্যারাডাইস, দা সংস অফ স্প্যারোস, দা উইলো ট্রি সহ আরও অসংখ্য সৃষ্টিশীল কাজের জনক এইখানেও তার সৃষ্টিশীল কাজের পরিচয় খুব সুন্দর ও নিখুঁত ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। অসাধারন, চমৎকার, অনন্য বললেও কম বলা হয়… চমৎকার স্ক্রীনপ্লে সাথে সেই রকম মনোমুগ্ধকর সিনেমাটোগ্রাফি… কিছু দৃশ্যে তো মনে হবে লতিফের জায়গায় আপনিই যেন আছেন… অভিনয় ছিল খুতহীন… লতিফ চরিত্রে হোসেইন আবেদীনী, বারান চরিত্রে যাহ্রা বাহরামি ছিল অনন্য… আর মেমার(কন্ট্রাক্টর) চরিত্রে মোহাম্মদ আমীর নাজির কথা না বললেই নয় চমৎকার অভিনয় করেছেন…
শেষ কথা এটি চমৎকার এক ভালোবাসার গল্প… আশা করব সকল মুভি পাগলই এই মুভিটি দেখবেন এবং ভালোবাসার সঠিক স্বরূপ উপলব্ধি করবেন…
http://www.imdb.com/title/tt0233841
টরেন্ট ডাউনলোড লিঙ্কঃ
http://thepiratebay.se/torrent/4307325/Majid_Majidi_-_Baran_%282001%29
http://kickass.to/baran-2001-dvdrip-480p-x264-manudil-silverrg-t8324280.html
ধন্যবাদ। 🙂
রিভিউ চমৎকার হইছে। মুভিটা
রিভিউ চমৎকার হইছে। মুভিটা দেখা আছে। ভালো মুভি।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ। 🙂 :ফুল: :ধইন্যাপাতা:
অবশ্যই দেখার লোভ পুরণ
অবশ্যই দেখার লোভ পুরণ করবো।
কথাগুলো চমৎকার।
:গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ:
কথা গুলো আমার না একটি গানের।
কথা গুলো আমার না একটি গানের। 🙂
আরো একটি অনবদ্য রিভিউ
আরো একটি অনবদ্য রিভিউ :গোলাপ:
ধন্যবাদ ভাই।
ধন্যবাদ ভাই। :ফুল: :ধইন্যাপাতা:
চমৎকার রিভিউ। ছবিটি সম্পর্কে
চমৎকার রিভিউ। ছবিটি সম্পর্কে জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।সময় করে দেখার ইচ্ছে রইলো।
ধন্যবাদ। অবশ্যই সময় করে দেখে
ধন্যবাদ। অবশ্যই সময় করে দেখে নিবেন। :ধইন্যাপাতা: :গোলাপ: :ফুল:
রিভিউ ভালো লাগলো। বাসায় এই
রিভিউ ভালো লাগলো। বাসায় এই মাসে নেট নাই বলে আপাতত দেখার সুযোগ নাই। পোষ্ট প্রিয়তে নিলাম।
ধন্যবাদ। দেখে নিয়েন। অবশ্যই
ধন্যবাদ। দেখে নিয়েন। অবশ্যই ভাল লাগার মত মুভি। :ধইন্যাপাতা: :ফুল: