কমিক কনভেনশন, সংক্ষেপে কমিকন বা কমিক-কন, অনেকটা মেলার মতো। অন্তত, মেলা শব্দটা দিয়ে ব্যাপারটা বোঝা সবচেয়ে সহজ। এটা একধরনের আয়োজন যেখানে কমিক প্রেমীরা একসাথে জড়ো হয়। কিছু প্রতিযোগিতা হয়। সকলে আনন্দ করে, একে অপরের সাথে পরিচিত হয়। তবে এটা শুধু কমিক প্রেমীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা একটা আয়োজন। এখানে বিভিন্ন বিনোদনের মাধ্যমের প্রেমীদের জন্য জায়গা থাকে। সহজ করে বলতে গেলে, এখানে কার্টুন, মুভি, অ্যানিমে, মাঙ্গা প্রেমীদের সমান অংশগ্রহন থাকে বা থাকতে পারে। এ ধরনের আয়োজনের মূল লক্ষ হল একই বিষয় নিয়ে আগ্রহী মানুষদের মধ্যে পরিচয় হওয়া, কিছু আনন্দ পাওয়া।
কমিক কনভেনশন, সংক্ষেপে কমিকন বা কমিক-কন, অনেকটা মেলার মতো। অন্তত, মেলা শব্দটা দিয়ে ব্যাপারটা বোঝা সবচেয়ে সহজ। এটা একধরনের আয়োজন যেখানে কমিক প্রেমীরা একসাথে জড়ো হয়। কিছু প্রতিযোগিতা হয়। সকলে আনন্দ করে, একে অপরের সাথে পরিচিত হয়। তবে এটা শুধু কমিক প্রেমীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা একটা আয়োজন। এখানে বিভিন্ন বিনোদনের মাধ্যমের প্রেমীদের জন্য জায়গা থাকে। সহজ করে বলতে গেলে, এখানে কার্টুন, মুভি, অ্যানিমে, মাঙ্গা প্রেমীদের সমান অংশগ্রহন থাকে বা থাকতে পারে। এ ধরনের আয়োজনের মূল লক্ষ হল একই বিষয় নিয়ে আগ্রহী মানুষদের মধ্যে পরিচয় হওয়া, কিছু আনন্দ পাওয়া।
বাংলাদেশে এ ধরনের আয়োজন কল্পনা করা খুব কঠিন। তবে, কিছু মানুষ নতুন কিছু করার জন্য মুখিয়ে থাকে। সাদি রহমান এবং সৈয়দ আবু ইউসুফ ২০১০ সালে কমিকন নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। ২০১২ সালে একবার কমিকন হয়েছে, যার নাম ছিল ঢাকা কমিকন ও স্থান ছিল বাড্ডার সাদ মুসা সিটি। এই বছর আবার কমিকনের আয়োজন করা হয় ৮ই এবং ৯ই নভেম্বর। এবারে নাম ছিল, ‘ঢাকা কমিকন, বিগার এন্ড বেটার।’ এবারের স্থান ছিল যমুনা ফিউচার পার্ক।
নামের সাথে মিল রেখে এ বছরের কমিকন ‘সত্যি হয়েছে বিগার এন্ড বেটার।’ বেশ বড় জায়গা ভাড়া করা হয়েছিল কমিকনের জন্য। অনেকগুলো স্টল ছিল। এক কোনায় একটা ছোটখাট কনসার্টের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। খাবারের কতগুলো দোকান ছিল। মাঝের দিকে কতগুলো টেবিল বসিয়ে আর্টিস্টরা বসে গিয়েছিলেন ছবি আঁকতে। আসছিল বিভিন্ন কসপ্লেয়ার। কসপ্লের একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। কসপ্লে কি যারা জানেন না তাদের বলছি- কসপ্লে অনেকটা যেমন খুশি তেমন সাজো খেলার মতো। এক্ষেত্রে পার্থক্য হল, মুভি, কমিক, কার্টুন, বা অ্যানিমের বিভিন্ন চরিত্রের অনুকরণ করে সেজে মানুষ কসপ্লে করে। দুটা বলতে গেলে প্রায় একই জিনিস।
কমিকন শুরু হওয়ার প্রথমদিকে মনে হয় অল্প মানুষ ছিল। একটু ফাকা ফাকা ছিল। কিন্তু বিকাল ঘনিয়ে আসতেই মানুষের সংখ্যা এক লাফে বেড়ে যায়। কমিকনে ঢুকতে হয় টিকেট কিনে। আমি যখন পৌছই তখন সেই টিকিটের লাইন পড়েছিল প্রায় দেড় মাইল, এমনকি তার বেশিও হতে পারে। এরকম বিশাল লাইন আমি শেষ দেখেছি বইমেলায়, কয়েক বছর আগে।
কমিকনের ভিতরে ঢুকে দেখি পা ফেলার মতো জায়গা নেই। কত মানুষ তা কেউ জানে না। তবে প্রচুর মানুষ তা বোঝাই যাচ্ছিল। ধাক্কা ধাক্কি করে হাটতে হচ্ছে, স্টল গুলো ঠিকমতো দেখার মতো সুযোগ নেই। মানুষের তুলনায় জায়গা অনেক কম হয়ে গিয়েছিল। তবে এত ভিড়ের মধ্যেও সবাই আনন্দ পাচ্ছিল। কসপ্লেয়ারদের সাথে ছবি তুলছিল, কথা বলছিল। স্টল থেকে পছন্দ হলে কিছু কিনছিল। ওদিকে কনসার্ট শুরু হতে সেখানে মানুষের হৈ হুল্লোড় বেড়ে যায়।
কমিকনের সবচেয়ে বড় আকর্ষন ছিল বোধহয় কসপ্লেয়াররা। তাদের কসপ্লে দেখার মতো হয়েছিল। কেউ করেছিল জোকারের কসপ্লে, কেউ ডিক্টেটরের, কেউ আবার পকেমনের। একজন ব্যাটম্যান ছিল। হঠাৎ পিছন ফিরে আঁতকে উঠতে হচ্ছিল হিটম্যানকে দেখে। অন্যদিকে ছিল নারুটোর কসপ্লে। দুইজন করেছিল সবচেয়ে নজরকারা কসপ্লে, মেইডের কসপ্লে। একজন ছোট্ট ছেলে করেছিল এ্যাটাক অন দা টাইটান্স-এর কসপ্লে।
বিভিন্ন কমিক, কার্টুন আর অ্যানিমে সংক্রান্ত এ্যকশন ফিগার, বা টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছিল। ঢাকার কালেক্টরদের সংগ্রহ দেখানোর জন্য শোকেসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
যারা বাংলাদেশে নতুন কিছু করতে চায়, তারা নিজেদের প্রচারের জন্য স্টল খুলে বসে গিয়েছিল সেদিন। যেমন কল্পবাবুর স্টলে কম্পিউটারে কল্পবাবুতে এ পর্যন্ত বের হওয়া কমিক আর মাঙ্গাগুলো দেখানো হচ্ছিল। সেখানেই আমার সাথে কল্পবাবুর দেখা হয়।
যাদের শুধু অনলাইনে পরিচয় তারা বাস্তবে একে অপরের সাথে দেখা করার সুযোগ পায়।
পরের দিন একই অবস্থা। আমি নিজে যাওয়ার সুযোগ পাই নি। পুরোনো ঢাকা থেকে অতদূর যাওয়া কষ্ট। তবে ফেসবুকে ছবি দেখেছি, গল্প শুনেছি। যারা যারা গিয়েছিল তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ বলেছে যে কমিকন হয়েছে এক কথায় ‘Awesome।’ কেউ কেউ অবশ্য বেশি ভিড় এবং অনেক বড় লাইনের কারনে রেগে গিয়েছেন। তবে এত মানুষ আসবে এটা কেউ আশা করে নি। সে হিসেবে এই কমিকন সত্যিকার অর্থে সফল। এটাও মাথায় রাখতে হবে যে এটা কেবল দ্বিতীয় বার। কয়েক বছর আগে এরকম কিছু হবে সে আশা করাই যেত না। আজকাল অন্তত এই ধরনের আয়োজন হয়। অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকায় যে বিশাল ধরনের কমিক কনের আয়োজন করা হয় তা বাংলাদেশে হয়তো এখনও আশা করা যায় না। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে এরকম আয়োজন আরও বড় করে, আরও ভাল করে নিশ্চয়ই হবে।
অনেক সাধারন মানুষ এটাকে সময় নষ্ট, টাকা নষ্ট এবং অপ্রয়োজনীয় বলতে পারে। তাদের প্রতি আমার এটুকুই বলার আছে- বাঙ্গালী বিশাল সংস্কৃতির অধিকারী। কিন্তু সেজন্য বাইরের সংস্কৃতি বর্জন করার কোনো কারন আমি দেখি না। কোনোকিছু ঠিকমতো অর্জন করা গেলে সেই কোনোকিছু খারাপ হতে পারে না। তাছাড়া এখান থেকে অনেক ছেলেমেয়ে আনন্দ পেতে পারে, নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারে। হ্যা, বর্তমানে এসব কিছু নতুন ঢাকার উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেমেয়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ভবিষ্যতেও এই অবস্থা থাকবে তা কে বলতে পারে? আর কে বলতে পারে যে এখান থেকে নতুন নতুন আর্টিস্ট উঠে আসবে না? আমি এর ভিতর দেখছি সম্ভাবনা। অনেক নতুন সম্ভাবনা।
এখানেই লেখা শেষ করতে পারতাম। কিন্তু মূলত যে কারনে এই প্রবন্ধ লেখা আমি শুরু করেছি সেটা তাহলে বাদ পড়ে যেত।
যুগান্তর একটা রিপোর্ট করেছে কমিকন নিয়ে। সেখানে তারা কসপ্লেকে অভিহিত করেছে, ‘বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা-অভিনত্রীদের পোশাকে’ তরুন তরুনী।
আমি জানি না এই রিপোর্ট কে করেছে। তবে রিপোর্ট বের হওয়ার পর থেকেই ফেসবুকে এ নিয়ে হালকা একটা ঝড় উঠেছে। কনসার্ট হয়েছিল কমিকনের। অথচ এই রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে কনসার্টের নাম ছিল কমিকম ২০১৩। তারা নামের বানান পর্যন্ত ভুল করেছে। কমিকন লেখার বদলে লিখেছে কমিকম।
এটা রিপোর্টারের ভুল না এডিটরের ভুল না কার ভুল সেটা আমরা কেউ জানি না। আমি শুধু অবাক হয়ে ভাবছি, কিভাবে একজন সাংবাদিক একটা জিনিসকে পুরোপুরি অন্য আরেকটা জিনিস বানিয়ে ফেলতে পারে। মানুষ কি এত বোকা যে কি নিয়ে লিখতে যাচ্ছে তা না চিন্তা করেই উলটা পালটা কিছু লিখে প্রকাশ করে দিতে পারে? যুগান্তরের রিপোর্ট পড়ে তো মনে হচ্ছে ৮ আর ৯ তারিখ যমুনা ফিউচার পার্কে কতগুলো তরুন তরুনী গাধার মতো সেজে গুজে যেয়ে নাচানাচি করে এসেছে। কোনো কমিকন হয় নি। কোনো আর্টিস্ট ওখানে যায় নি। অ্যানিফিনিটি ওখানে ছিল না। কল্পবাবুর স্টল ছিল না। তেমন কিছুই ছিল না। শুধু একটা কন্সার্ট ছিল।
এখন এই রিপোর্ট পড়ে কত মানুষ ভুল বুঝছে কে জানে।
আগামী বছর আবার হবে ঢাকা কমিকন। আমি আশা করছি যে এর পরের বার সেখানে যেয়ে এবারের চেয়ে বেশি কিছু করতে পারব। এও আশা করি যে এর পরের বার এর চেয়ে বড় জায়গায় আয়োজন করা হবে।
যারা এ বিষয় বিশদ জানতে আগ্রহী তারা ঢাকা কমিকন লিখে গুগলে একটা সার্চ দিয়েন। ওয়েবসাইটের খোজ পেয়ে যাবেন।
(No subject)
🙂