দুই টাকার আলুপুরি আর তেঁতুলের আচারের লোভ সামলাতে না পেরে, বিকালের শুরুতে বৈকালী মোড়ে আমাদের যেতেই হয়। ব্যস্ত দোকানগুলোর পরে অপেক্ষাকৃত নোংরা একটা জায়গায়, ফুটপাত ঘেঁসে কাউসার চাচার আলুপুরির দোকান।
আমরা গেলে কোনার বেঞ্চটা ফাকা করে দেয়া হয় অথবা সাধারনত ওখানে কেউ বসে না। ঝুলে থাকা পুরানো সিমেন্টের বস্তা সরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই, “ভাইয়া বসেন” বলে ছোট্ট প্লাস্টিকের প্লেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বার-তের বছরের একটা মেয়ে, মুক্তা। কিছুক্ষন পর একটা প্লেটে পুরি আর তার পাশে তেতুলের আচার দেখে দেরী না করেই একটা তুলে আচার মাখিয়ে মুখে চালান করে দেই।
দুই টাকার আলুপুরি আর তেঁতুলের আচারের লোভ সামলাতে না পেরে, বিকালের শুরুতে বৈকালী মোড়ে আমাদের যেতেই হয়। ব্যস্ত দোকানগুলোর পরে অপেক্ষাকৃত নোংরা একটা জায়গায়, ফুটপাত ঘেঁসে কাউসার চাচার আলুপুরির দোকান।
আমরা গেলে কোনার বেঞ্চটা ফাকা করে দেয়া হয় অথবা সাধারনত ওখানে কেউ বসে না। ঝুলে থাকা পুরানো সিমেন্টের বস্তা সরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই, “ভাইয়া বসেন” বলে ছোট্ট প্লাস্টিকের প্লেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বার-তের বছরের একটা মেয়ে, মুক্তা। কিছুক্ষন পর একটা প্লেটে পুরি আর তার পাশে তেতুলের আচার দেখে দেরী না করেই একটা তুলে আচার মাখিয়ে মুখে চালান করে দেই।
ডাকবাংলোয় বিকালে ককটেল ফুটেছে, দুই পুলিশ আহত, ইলেকশনের আগে ইরাম হবে, আরে মিয়া ইলেকশন হবে কিনা তার ঠিক নেই, শালার রাজাকারগুলোরে ঝুলায় দিতি পারলি ভালো হতো, মুখে ফেনা তুলতে থাকে কেউ কেউ। সামনে চলতে থাকা টেলিভিশন থেকে আবার কেউ কেউ চোখ সরিয়ে নেয়ার সময়ও পায় না, শুধু নায়িকার বৃষ্টিতে ভিজে নাচার সময় তার পাশের বন্ধুটির দিকে একপলক তাকায় মুচকি হাসি দিতে। আমরা টপাটপ আলুপুরি মুখে দিতে দিতে হিসাব করি পকেটে কত আছে, আর হিসাব শেষ হতে হতেই পকেট অতিক্রম করে যায় প্রায়ই। খাওয়া শেষ করে চাচার সামনে এসে, প্রথমে মানিব্যাগ, তারপর বামপাশের পকেট, বুকপকেট হয়ে অনিকের দিকে তাকালে, চাচা মুচকি হাসি দিয়ে বলে, কাল দিস।
বৈকালী মোড়ের পরেই জংশন। ঠিক সন্ধ্যা নামার আগে, উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ট্রেনটি আমাদের শহরে প্রবেশ করে, আর আমরা রোজকার রুটিন অনুসারে তার অপেক্ষায় থাকি। ট্রেনের জানালা দিয়ে উৎসুক যাত্রী তাকিয়ে থাকে, পাশের বস্তিঘর অথবা ডোবার ধারে থালাবাসন নিয়ে বসে থাকা মুক্তাদের দিকে, আর আমাদের চোখ জানালার পর জানালা ঘুরে শেষ হয়ে যায়, সর্বশেষ জানালায়। চারিদিক অনেকটা নিস্তব্ধ হয়ে থাকে কিছুক্ষন, আর আমরা এগিয়ে যাই রেললাইন ধরে ধরে। তারপর পড়ে থাকা মালগাড়িটার ছাদে পা ঝুলিয়ে কেটে যায় সন্ধ্যারাত।
আমাদের নিয়মিত রুটিনে ভাগ বসায় বিকালের ব্যাচ আর হরতালে ওদিকে না যাওয়ার কড়া নির্দেশ। চাঁদে সাঈদীর ছবি দেখে শতশত মানুষ রাস্তায় নেমেছে, ভাংচুর করছে, শুনে আমরা ইচ্ছামত হেসেছি আর মায়ের ভয় বেড়ে চলেছে। তবে সেদিন আমরা ব্যাচ ফাকি দিয়েছি অথবা মায়ের নিষেধ অমান্য করে শান্তি খুজেছি, কিন্তু আলুপুরির লোভ সামলাতে পারিনি। মোড় পেরিয়ে দেখি একটা বেবিট্যাক্সি পড়ে আছে, পুড়ে তার ফ্রেমছাড়া আর তেমন কিছু নেই। আর চাচার দোকানের সেই ফ্রেমটাও নেই। জানতে পারি মুক্তা ঘুমিয়ে ছিল ভেতরে।
তারপর একদিন সন্ধ্যার ঠিক পরপরই আকাশে নীলচে চাঁদ এসে হাসতে থাকে, আর আমরা বেসুরো গলায় গুনগুন করতে করতে হঠাৎ কেদে ফেলি। যে মেয়েটার নাকের নিচে সর্দির দাগ লেগে থাকে সারাদিন, অগোছালো লালচে চুল উড়তে পারে না ব্যাথায়, তার বড়বড় চোখগুলো অনেক শান্ত ছিলো। ঝাপসা চোখে দেখতে পাই, কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে অথবা কলেজ ফাইল হাতে, সতের বছরের একটা মেয়ে হেটে যাচ্ছে বন্ধুদের সাথে অথবা লাল শাড়ি পরে বসে আছে, গলায় জরির মালা। হঠাৎ উত্তর বঙ্গের ট্রেনের ফিরতি যাত্রার হইসেলে আমরা অপেক্ষা করতে থাকি।
সময় যায়, চাঁদ ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে, আর আমাদের অনেক অনেক হিসাব, ঢেকে যেতে থাকে উপচে পড়া জোৎস্নায়। আর কাউসার চাচা কানের কাছে ফিসফিস করে বলে ওঠে, কাল সাকার রায় দেবে, না?
ইস্টিশনে এই প্রথম আপনার কোন
ইস্টিশনে এই প্রথম আপনার কোন লিখা পড়লাম ।চমৎকার লিখেছেন ।বিশেষ করে গল্পের গভীরতা ও লিখার স্টাইলটা অসাধারণ লেগেছে ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
হানজালা, সুপার্ব।
অসাধারণ
হানজালা, সুপার্ব।
অসাধারণ লিখেছিস। দেখার ভঙ্গিটা! খুবই ভালো লাগল। চালিয়ে যা।
ধন্যবাদ ভাই…
ধন্যবাদ ভাই… 🙂
outstanding … A
outstanding :মাথানষ্ট: :চশমুদ্দিন: … A spellbound Writing to start your journey :তালিয়া: :তালিয়া: …keep it up.. :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ:
Welcome to istishon with a thousands of roses.. :ভালাপাইছি: :গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ: :গোলাপ:
ধন্যবাদ জানবেন ডন মাইকেল
ধন্যবাদ জানবেন ডন মাইকেল কর্লিওনি। ইষ্টিশন আমাকে টানে, আর তা আপনাদের জন্যই। তাই তো সহযাত্রী হওয়ার মতো সাহস করে ফেললাম।
ভালো থাকবেন। 🙂
অদ্ভুত দাদা অদ্ভুত!!!
অদ্ভুত দাদা অদ্ভুত!!!