বহুল প্রত্যাশিত এবং দারুণ মজার খেলাটা অবশেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে। যদিও সবাই জানতো খেলাটা হবে, তবে কখন শুরু হবে সে সময়টা জানতো না। অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রধান মন্ত্রী তাঁর প্রথম চাল দিয়েছেন। ‘জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ’। এবার বিরোধী দলের পালা। শনিবারে চালটার জবাব দেয়ার কথা ছিল। দিল না। বিরোধী দল কিছুটা সময় নিচ্ছে। খেলা যদিও আরও বেশ কয়েকদিন ধরে চলবে এবং অনেকদূর গড়াবে, তারপরও প্রতিটা চালই ভেবে চিন্তেই দিতে চাইছে বিরোধী দল। অন্ততঃ এখন পর্যন্ত তাই মনে হচ্ছে। সভা সমাবেশ বন্ধ করার পরও তেমন বিধ্বংসী কোন কর্মসূচী দেয় নি। বিক্ষোভ এবং একটি মৃদু হুমকি, ‘তিন দিনের হরতাল ডাকতে পারি’ ব্যাস।
যদিও প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে নতুন কিছু নেই। ভাষণের প্রথম দিকে ছিল নিজ সরকারের গুনগান আর বিরোধী দলের কিছু বদনাম। কিছু আবেগ ঘন স্মৃতি রোমন্থন এবং বিরোধী দলের প্রতি একটি আবেদন। সবার দৃষ্টি কেড়েছে এই আবেদন। সবাই এটিকে সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ হিসেবে দেখছেন। যতটুকু ছাড় দিবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল, এখন পর্যন্ত ততটুকুই বলেছেন। সংসদে আসবার আহ্বান, আলোচনার প্রস্তাব আগেও ছিল, তবে এবার অনেকটা নরম সুরে। চালটা এখানেই। এতো নরম কথায় কড়া কোন উত্তর দেয়া যাচ্ছে না। আর কড়া কথা না বললে ‘আন্দোলন’ ভাব আসে না। প্রথম চাল এর উত্তর কি দিবে তা নিয়ে এই মুহূর্তে কিছুটা বিপাকে আছে বিরোধী দল।
সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ‘টক শো’ তে এখন আলোচনার কেন্দ্রে এই ভাষণ। বক্তব্যগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। কোন কথার কি মানে, কি বলে আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন। ব্যাখ্যা আর ব্যাখ্যা। যথারীতি দুই দল ঘেঁষা সুশীলরা নিজ দলের সুরেই কথা বলার চেষ্টা করছেন। আওয়ামী সুশীলরা ভাষণের প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলছেন, ‘এমন মহান ভাষণ আর হয় না’। ‘এমন নরম ভাষণের বিপরীতে আন্দোলন করলে বিরোধী দল ভুল করবে’। বিরোধী দল এখনো সিদ্ধান্ত নেয় নি কি উত্তর দিবে। তাই জাতীয়তাবাদী সুশীলরা একটু রয়ে সয়ে কথা বলছেন। আসলে তারা তাঁদের প্রভুর উত্তরের অপেক্ষায় আছেন।
দলীয় সুশীল ছাড়াও কিছু সুশীল আছেন। এরা নিরপেক্ষ ধাঁচের সুশীল। তাঁরা এই পাঁচ বছর সুশীল গিরি করেছেন একটি আশায়। তত্ত্বাবধায়ক যদি আবার ফিরে আসে, তাঁদের কপালে কিছু জুটতে পারে। এই মুহূর্তে তাঁদের অবস্থান ‘সমাধান হলে ভালো নইলে আবার তত্ত্বাবধায়কে ফেরত যাওয়াই শ্রেয়’। ফলে তারা এই মুহূর্তে খুব বেশী উচ্ছাস দেখাচ্ছেন না। ‘সতর্ক মতামত’ দিচ্ছেন। কোন দলের ছাপ যেন গায়ে না লাগে। তত্ত্বাবধায়ক যদি না ই হয় আপত্তি নেই। ১/১১ ফরম্যাট হলেও চলবে। সেখানেও আশা আছে।
ফলে বিরোধী দল এখন কিছুটা সমস্যায় আছে। ‘যতটা ছাড় দেয়া হয়েছে’ বা বলা যায় যেটাকে ‘ছাড়’ বলে প্রচার করা হচ্ছে, প্রথমে তাঁদেরকে সেখানে আঘাত করতে হবে। তাঁরা সে কাজ শুরুও করে দিয়েছেন। ‘নতুন কিছু নেই’। আর সেই পুরনো প্রস্তাবে বিরোধী দলের পক্ষে রাজী হওয়া সম্ভব না। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই মুহূর্তে কেউ আশাও করছে না বিরোধী দল সরকারের বর্তমান ‘ছাড়’ এ রাজী হবে। সবাই আশা করে আছে ‘আলোচনা’ প্রস্তাবে যেন ‘না’ সুচক উত্তর না দেয়। ‘আলোচনা’ য় রাজী হলে আবার আন্দোলন করা যাবে না। আর আলোচনা বেশ কিছুদিন চলার পর ব্যর্থ হলে তখন আবার আন্দোলন চাঙ্গা করা সমস্যা।
এই দোটানায় বিরোধী দল তাঁদের প্রথম চাল চালতে পারছে না। শনিবারের মিটিং এর পরও তাই কোন উত্তর দেয় নি। বিরোধী দলের এই মুহূর্তের সমস্যা হচ্ছে এই মুহূর্তে ‘না’ সূচক কিছু বলা ঝুঁকিপূর্ণ। আর বললেও সে কথা বলতে হবে খুব সুন্দর ভাবে। যেন মনে হয় ‘আরেকটু হলেই রাজী হয়ে যাবে’। মিটিং চলছে সেই উত্তর নিয়ে। খোঁজ চলছে ‘খুবই সুন্দর আর মোলায়েম’ ভাষার। যেন মনে না হয়, ‘তাদের জন্যই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না’। সংলাপ যদি ভাঙ্গেও দোষ যেন চাপে ‘অন্য পক্ষের ওপর’।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ইচ্ছে করেই কিছু ফাঁক রেখেছেন। ‘অন্তর্বর্তী’ সরকারের প্রধান সম্পর্কে মুখ খোলেন নি। এর দুটো মানে হতে পারে। একটি মানে হতে পারে ‘এ নিয়ে আলোচনার কিছু নেই, আমিই হব’। তাঁর এক উপদেষ্টা এমন কথাই বলে বেড়াচ্ছেন। এমনটা হলে তো খেলা আবার নতুন করেই শুরু হবে। আর মুখ না খোলার মানে যদি হয়, ‘এ ব্যাপারে আলোচনার টেবিলে কথা হবে; তবে সত্যিই বেশ রোমাঞ্চকর এক খেলা হতে যাচ্ছে। বিরোধী দল কোন মানে ধরে এগোবে তাঁর ওপরই নির্ভর করছে তাঁদের ‘চাল’।
সেই ‘চাল’ দেয়ার পরেই বোঝা যাবে বিএনপি ‘আলোচনা’ খেলায় আসবে কি না। ‘চাল’টা চালবে রোববারে। যদি ‘হ্যাঁ’ সূচক চাল দেয়, সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা ২০০৬ এর মত ‘সংলাপ’ আর ‘চিঠি চালাচালি’ র রিপিট টেলিকাস্ট হবে না নতুন কিছু হবে, সেটাই তখন হবে দেখার বিষয়। দারুণ উৎকণ্ঠা নিয়ে আবার সেই ‘টানেলের শেষে আলো’ দেখার আপ্রাণ চেষ্টা চলবে। প্রতিদিন টিভির পর্দায় চোখ রেখে অপেক্ষায় থাকবে দেশবাসী। আর যদি না আসে, তখন খেলা চলে যাবে বিদেশী প্রভুদের হাতে। ফলে এই মুহূর্তে বিএনপি আছে বেশ সমস্যায়।
বিএনপিকে ‘চাল’ দেয়ার ক্ষেত্রে আরও একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হচ্ছে। আরেকটি জন্মগত সমস্যা, তাঁদের কর্মী বাহিনী। এই কর্মী বাহিনীকে দিয়ে কি ধরনের আন্দোলন তারা করতে পারবে সে ব্যাপারে তারা নিজেরাই খুব নিশ্চিত না। সহিংস ফরম্যাটে যাবে না অহিংস, সে ব্যাপারে মনে হয় তারা এখনো স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারে নি। ওদিকে আবার সভা সমাবেশ বন্ধ। সমস্যা আরও আছে। তাঁদের সঙ্গী সাথীরা যদি সহিংস কিছু করে বসে, তখন তাঁরা কি করবে? সেটায় সমর্থন দিবে না নিন্দা জানাবে? হরতাল ডাকলে কেমন হরতাল করবে? ঢিলে ঢালা না জ্বালাও পোড়াও? জ্বালাও পোড়াও হলে সেটা কতটা বিধ্বংসী?
ফলে আওয়ামী প্রথম ‘চাল’ যতটা সহজ মনে হচ্ছে, তাঁর উত্তর কিন্তু তত সহজ না। অনেক কিছু ভেবেই বিএনপি কে তাঁদের চাল দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ‘খেলা আদৌ শুরু করবে’ না ‘খেলা ভাঙবে’, সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিএনপি বিদেশীদের সহায়তা
বিএনপি বিদেশীদের সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ আর্ন্তজাতিক পরিস্থিতি এবং তাদের অতীত কর্মকান্ড।
আর বর্তমান সরকার অনেকটা নির্ভার ও নিশ্চিত। বিশেষ করে ভারত আর আমেরিকা যখন বন্ধু তখন তাদের চিন্তা নাই। এছাড়া ভারত বিএনপি কে ক্ষমতায় দেখতে চায় না ।
লেখাটা আজকে নির্বাচিত কলাম
লেখাটা আজকে নির্বাচিত কলাম হয়েছ
http://www.amadershomoybd.com/content/2013/10/20/middle0107.htm