গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী, ২০১২ বই মেলা থেকে ফিরে হুম্যান ছ্যারকে নিয়ে প্রথম পর্ব লিখেছিলাম। খুব আনন্দ নিয়েই লিখেছিলাম। পাঠকও খুব আনন্দ নিয়েই পড়েছিলেন। কিন্তু প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। হুম্যান’কে নিয়ে লিখলে পাঠকদের মধ্যে দু’টি গোষ্টি তৈরী হয়। একদল হুম্যান’র পক্ষে, অন্যদল বিপক্ষে। কিন্তু দুই দলই সমান আনন্দ নিয়েই পড়েন। আমি হুম্যানের পক্ষেও নাই, বিপক্ষেও নাই। বলতে পারেন অনেকটা তত্বাবধায়ক সরকারের মত। কিছু যায় পক্ষে, কিছু বিপক্ষে। যে যাই মনে করুক, আমি প্রথম লেখাটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ হুম্যানীয় ভক্ত-অভক্ত হিসাবেই লিখেছিলাম। দুইদিন পরেই দ্বিতীয় পর্ব ছাড়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকারের মত আমিও গ্যাড়াকলে আটকে গেলাম। আমার তিনি হুম্যান পীরের পাড় মুরীদ। লেখা পড়ে তিনি বেঁকে বসলেন। ত্যানার ধারনা আমি পীর সাহেবকে অপমান করার জন্য এটি লিখেছি। অনেক বুঝালাম, এই ল্যাখার পিছনে আমার ভুমিকা ছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের মত। মানতে নারাজ। গণতন্ত্রে নাকি নির্দলীয় নিরপেক্ষ বলে কিছু নাই। হুম্যান পীরের পক্ষে লিখলেই সেটা হবে নিরপেক্ষ। ফলশ্রুতিতে আন্দোলনের কর্মসুচী ঘোষনা করলেন। আমি যাতে দ্বিতীয় পর্ব না লিখি, এজন্য স্বাভাবিক আন্দোলনকে লাগাতার আন্দোলনে নিয়ে গেলেন। সহধর্মিনীর এসব আন্দোলন-ফান্দোলনকে আমি থোড়াই কেয়ার করি। আমিতো আর হুম্যান পীর না। বিবির আন্দোলনে সাড়া দিতেই হবে।
আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে দ্বিতীয় পর্ব যখন লিখতে বসলাম তখন ভালবাসা দিবস ছুঁই ছুঁই করছে। তিনিও মওকা বুঝে আন্দোলনের ডেটলাইন ঠিক করে দিলেন। ঘোষনা করলেন, হুম্যান পীরকে রসিকতা করে যদি আমি দ্বিতীয় পর্ব ছাড়ি ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালবাসা দিবসের দিন হবে চুড়ান্ত আন্দোলন। আমিও ভাবলাম, চলুক আন্দোলন। হুম্যান পীরের পক্ষে আন্দোলন চালাতে গিয়ে ভালবাসা দিবসের অহেতুক খরচ থেকে বাঁচা যাবে। রথও দ্যাখা হল, কলাও ব্যাচা হল। ….. কিন্তু না। আমার তিনিও হুম্যান পীরের তিনির মত ঝাঁজালো। কোন কারনে এবারের ভালবাসা দিবস যদি আন্দোলনে বরবাদ হয়ে আমার পকেটের ভালবাসার সুরক্ষা হলেও সারা বছরের শান্তির বারোটা বাজবে। বছরজুড়ে আমাকে শুনতে হবে- আমার ভালবাসা দিবস মাটি করেছ। এখন সেটা ফিরিয়ে দাও। সেটা ফিরিয়ে দিব ক্যামনে? কষে একটা বিশ্রী গালি দিলাম বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসের আমদানীকারককে। এই শালা ফাত্রাবাজির আর জায়গা পেল না। ল্যাপির কি-প্যাড লক করে ১৪ই ফেব্রুয়ারীর ফাত্রা দিবস পার করলাম। অনেক ভেবে চিন্তে হুম্যান পীরের পদ্ধতি অনুসরণ করে লেখার প্রারম্ভে কৌশলে আমার তিনির কাহিনী ফেঁদে দ্বিতীয় পর্ব শুরু করলাম। এতে ক্যাচালে পড়ার ঝক্কি থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে।
…….. অন্যপ্রকাশের স্টলের সম্মুখে হলুদদের হুম্যান… হুম্যান জিকিরে কিছুক্ষন সামিল হলাম পুণরায় হুম্যান পীরের এই বছরের ওহী ও সহি কিতাব সমূহের সাচ্চা খবরাখবর প্রাপ্তির আশায়। কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। হলুদদের সস্পর্ষে কিছুক্ষণ থেকে আমি স্বর্গবাসী নাকি সর্বনাশী হলাম সেই বিচারে গেলাম না। অন্যপ্রকাশের সামনে জিকিররত এক হুম্যান মুরিদকে বেনসন খাওয়ার আমন্ত্রন জানিয়ে একপাশে নিয়ে আসলাম। বললাম, ভাই আমি ছ্যারের নতুন মুরীদ হইছি। নিয়ম-কানুন অনেক কিছুই জানি না। আপনার মাধ্যমে আমি ছ্যারের বায়াত গ্রহন করতে চাই। এখন আমারে কি করতে অইব?
একটা বেনসন জ্বালিয়ে একমুখ ধোঁয়া বের করে ভাব নিয়ে হলুদ বলল, নিয়ম ত্যামন কঠিন কিছু না। ছ্যার তার সহি কিতাবসমূহের মাধ্যমে যা কইব, তারে ধ্যান-জ্ঞান মনে কইরা বিশ্বাস করন লাগবো। ছ্যারের নাযিলকৃত ওহী ও সহী কিতাবের বাণী নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। আর অন্তরে কলবের ভিতরে হুম্যান হুম্যান জিকির করবেন। পারবেন না?
আমিও ভাব নিয়া বললাম, হাঁস-এ পাড়ে, মুরগীতে পাড়ে; আর আমি পারবো না ক্যানো? আপনি ভাই আমারে একটু গাইড দিয়েন। হাত ধরে বললাম, আপনি আমার দ্বিতীয় হুম্যান। অন্তরে তিনবার আসল হুম্যানের নামে জিকির করলে আপনার নামে করব একবার। আশেক ছাড়া মাশুকের দ্যাখা কি পাওন যায়? আপনি হইলেন মাশুক পাওনের অবলম্বন। খুশী হয়ে আশেকে হুম্যান বলল, ‘তাইলে আরো দুইটা বিড়ি দেন। আশেকের সহচার্য পাইতে হইলে নজরানা বেজোড় সংখ্যা হইতে অইব’। আরো দুইটা বেনসন দিলাম। আশেকে হুম্যান বেনসন দুইটারে দুই কানের চিপায় রাখল।
বললাম, হুম্যান হুজুরের ‘মেঘের উপর বাড়ি’ ছাড়া আর কি কি কিতাব এইবার নাযিল হচ্ছে? আশেকে হলুদ বলল, ছ্যারকে হুজুর বলবেন না। ছ্যার বলবেন। আর নতুন মুরিদ হইছেন যেহেতু, ছ্যারের এই বছর নাযিলকৃত সব কিতাব সম্পর্কে আপনার ধারনা থাকা উচিত। ছ্যারের মেইন আস্তানা (অন্যপ্রকাশ) থেকে এই বছর ‘হিমু এবং হার্ভার্ড পিএইচডি বল্টু ভাই’, ‘নিউ ইয়র্কের নীল আকাশে ঝকঝকে রোদ’, ‘পায়ের তলায় খড়ম’ (ভ্রমণকাহিনী), ‘দেয়াল’ (উপন্যাস), বাছাই গল্প ও রচনাবলী- পঞ্চম খণ্ড নাযিল হইছে। এই কিতাবগুলার নাম মুখস্ত কইরা ফালান।’
আমি আশেকে হলুদের সাথে সাথে মুখে আওড়িয়ে সবগুলো সহী কিতাবের নাম কয়েকবার বলার পর বললাম, মুখস্ত হইছে। আশেক বলল- এইবার এই কিতাবসমূহের নাযিলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আপনার জানা দরকার। আশেকে হুম্যান ধারাবাহিকভাবে মেইন আস্তানা থেকে নাযিলকৃত কিতাবসমূহের ইতিবৃত্তান্ত আমাকে বলল। যা নীচে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হল।
হিমু এবং হার্ভার্ড পিএইচডি বল্টু ভাইঃ এই কিতাবটিতে হুম্যান ছ্যারের জীবনের সংক্ষিপ্ত প্রতিচ্ছবি অংকিত হয়েছে। বল্টু চরিত্রটির মাধ্যমে হুম্যান ছ্যার তার চিন্তাধারাকে কিভাবে বাস্তবে সন্নিবেশ ঘটানো হয় তার ছবি এঁকেছেন। নিজের তৈরী অদ্ভুত অদ্ভুত বাংলা শব্দকে কি কি কৌশল খাটিয়ে বাংলা একাডেমীর শব্দ ভান্ডারে যোগ করতে হয় তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বাংলা শব্দ ভান্ডারে ফুঁতুরি ও ভুঁতুরি শব্দ দুটি সংযোজনের ইতিহাস আমরা এই কিতাবটির মাধ্যমে জানতে পারি। এছাড়াও বল্টুদের (হুম্যান) কিভাবে বিয়ে দিতে হয় ও করতে হয় তারও ইশারা দিয়েছেন এই কিতাবের মাধ্যমে। এই কিতাব হুম্যান মুরীদদের জন্য দিক নির্দেশনা হয়ে থাকবে আমৃত্যু।
নিউ ইয়র্কের নীল আকাশে ঝকঝকে রোদঃ এটি হুম্যান স্যারের ‘আত্মজৈবনিক কিতাব’। এই কিতাবে হুম্যান, হুম্যানি ও জুনিয়র হুম্যানের খুনসুটি ও লুটোপুটি বিষয়ক বিরাট জ্ঞানের ফল্গুধারা বর্ণনা করা হয়েছে। এটিতে দেশে বিদেশে হুম্যান পীরের বিভিন্ন জায়গায় তসরীফ, হুম্যানী’র গন্ধম ফল খাওয়ার কাহিনী এবং জুনিয়র হুম্যানের মেইন আস্তানার খাদেমের মাথা মোবারকে শিশি করার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও তুরুস্ক সফরে হুম্যানীর হঠাৎ ঋতুশ্রাব হওয়ায় তড়িত গতিতে হুম্যান পীর কর্তৃক হুইসপার ন্যাপকিন সংগ্রহের এডভেঞ্চার বর্ণনার মাধ্যমে নারীর প্রতি পুরুষের কর্তব্য পালনের ইশারা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হুম্যান পীরের ন্যু’র্য়ক বসে লেখা দু’টি আত্মজীবনীমুলক রূপকথাও অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। এর একটি হচ্ছে ‘রুম নং-২১৭’ এবং অন্যটি ‘রস কষ সিঙ্গারা বুলবুলি মস্তক’। ‘রুম নং-২১৭’ সুরাতে হুম্যান ও হুম্যানীর ২১৭ নম্বর রুমে বসে লাইলী-মজনু ও শিরী-ফরহাদ খেলায় হুম্যান যে বেহেস্তী নেয়ামতের আস্বাধন করেছেন তার বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও ‘রস কষ সিঙ্গারা বুলবুলি মস্তক’ সুরাতে হুম্যান, হুম্যানী, জুনিয়র হুম্যান ও হুম্যান খানকা শরীফের মেইন খাদেমের রস-কষ-সিঙ্গারা-বুলবুলি-মস্তক খেলার বর্ণনার মাধ্যমে মুরীদানগণকে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী হওয়ার ইশারা দিয়েছেন।
চলবে…..
(গত বছর বইমেলা থেকে ফিরে এসে লেখা।)
(No subject)
:হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে: :হাহাপগে:
আগেই পড়েছিলাম।এই বইমেলা থেকে
আগেই পড়েছিলাম।এই বইমেলা থেকে ফিরে ৩য় পর্ব লিখবেন এই আশায় থাকলাম।