শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী রচিত “একাত্তরের শহীদ ডাঃ আলীম চৌধুরী” বইটা পড়তে গিয়ে একটা মজার ঘটনা পেয়ে গেলাম। ঐ বই থেকেই কয়েকটা লাইন হুবহু তুলে দিলাম এখানে —
২৫ মার্চ ১৯৭১, সেই রাতে আমাদের বাসায় এসেছিলেন সৈয়দ নজরুল সাহেব। তিনি আলীমের বড় বোনের ননদের স্বামী। ঢাকা এলেই মগবাজারে আপার বাসায় থাকতেন। এরই মধ্যে সবাই ঠিক করলাম নজরুল সাহেবকে আমাদের বাসা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এক জায়গায় বেশী দিন থাকলে ধরা পরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। ঠিক করা হলো, ওঁকে মেয়েদের মতো সাজিয়ে বাসা থেকে অন্য ঠিকানায় নিয়ে যাওয়া হবে। আমাদের এক ভাগ্নে হোসেনি দালানে তাঁর এক চাচীর সঙ্গে আলাপ করে জায়গা ঠিক করে এলো।
আমি বাসায় এসে পাশের বাড়ির মতিন সাহেবের স্ত্রীর কাছ থেকে তাঁর একটা কালো বোরখা নিয়ে এলাম। পরে অবশ্য আর একটা বোরখা কিনে ওঁকে ফেরত দিয়েছিলাম। তিনি আমার ভাবসাব দেখে হয়তো তখন বুঝতে পেরেছিলেন, এর মধ্যে কোন একটা কিন্তু আছে, তবে মুখ ফুটে বলেননি কিছুই। আমি বোরখা যোগাড় করে দিয়েই চলে গেলাম আবার নাজিমুদ্দিন রোডে আলীমের সাথে।
আমার শাশুড়ি আর মা দুজন মিলে সৈয়দ নজরুলকে শাড়ি পরতে সাহায্য করলেন। ওঁকে পরানো হলো পেটিকোট আর ব্লাউজ। অর্থাৎ একজন মহিলা যা পরেন তার প্রায় সবই। পায়ে স্যান্ডেল, মাথায় মেয়েদের মতো করে কালো কাপড় দিয়ে খোঁপাও করা হলো। এসব করার পর শরীরে চাপানো হলো বোরখা। মজার ব্যাপার এসব করার বেলায় সৈয়দ নজরুল মোটেও আপত্তি করেননি। আমার ছোট ভাই স্বপন ওঁকে বাসার বাইরে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিলো। পরিকল্পনা মতো ডাকা হলো রিক্সা। ওঁকে ওঠানো হলো তাতে, পাশে বসলো স্বপন। এক সময় রিক্সা রওনা দিলো হোসেনী দালানের দিকে।
শাড়ি বোরখা পরে সৈয়দ নজরুল বারবার হোঁচট খাচ্ছিলেন সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে। স্বপন কোন রকমে ওঁকে ধরে রিক্সায় ওঠালো । এতো সাবধানতার পরও একটু পরেই দেখা গেলো একজন মিলিশিয়া সাইকেল করে ওদের রিক্সার পিছনে পিছনে যাচ্ছে। স্বপন রীতিমতো ঘামতে শুরু করলো। সে সরাসরি হোসেনী দালানের দিকে না গিয়ে গলি ঘুপচি ঘুরে কিছুক্ষণ পরে আসল ঠিকানায় পৌঁছেছিল। সেভাবেই ফিরে আসলো বাসায়। হসেনি দালান থেকে আমার ভাগ্নেরা এবং তাদের চাচাতো ভাইরা মিলে নজরুল সাহেবকে দুতিন দিনের ভিতরেই ভারতে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছিল।
(শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী রচিত “একাত্তরের শহীদ ডাঃ আলীম চৌধুরী” থেকে। )
মিলিশিয়া খুবই অবাক হোত একবার
মিলিশিয়া খুবই অবাক হোত একবার হুডটা সরাতে পারলে।বিশাল টাকওয়ালী মেয়ে!
৭১ এর দিনগুলির প্রায় সবকটি
৭১ এর দিনগুলির প্রায় সবকটি দিনই ছিল ভয়ঙ্কর ও বেদনাদায়ক ।
মায়ের কাছে শুনেছি, তখনকার দিনে কোন রং ঢং বা বিশেষ আনন্দের দিনেও মানুষের মুখে হাঁসি থাকতো না ।সব সময়ই বিরাজ করত এক অজানা আতঙ্ক ।
আপনার বর্নণাতেই বুঝা যায়, নজরুল সাহেবের বোরকা পরার ঘটনা তেমনি হাঁসির উদ্রেক করলেও প্রকৃতপক্ষে ঐদিন কতটা ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করেছিল তা একমাত্র উনি ছাড়া হয়তো আর কারো পক্ষে অনুমান করাও মুশকিল ছিল।
সহমত !
সহমত !
উহু আমি হাঁসির কথা বলি নাই।
উহু আমি হাঁসির কথা বলি নাই। ঠিক আপনার কথাগুলাই মাথায় এসেছে ওটা পড়তে গিয়ে। কি যে দিন গুলা গেছে সেই সময় তা তো যারা ভুক্তভোগী তারাই বুঝতে পারেন। আমরা তো তাদের কাছে শুনে শুনে বুঝেছি। আম্মার কাছে শুনেছি সেই দিনগুলোতে কি করে এক বছরের বাচ্চা নিয়ে এই গ্রাম থেকে সেই গ্রাম ছুটে বেড়াতে হয়েছে। ধন্যবাদ শাহীন ভাই।
যারা এমন পরিস্থিতির শিকার
যারা এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল তারাই জানে তাদের বুক কেমন ধুক ধুক করছিল তখন।
(No subject)
:থাম্বসআপ:
একমত। কি পরিমাণ ভীতির মধ্যে
একমত। কি পরিমাণ ভীতির মধ্যে কেটেছে তাদের সময় তা আমরা খুব বেশী উপলব্ধি করতে পারবো না। কিন্তু ভুক্তভোগীরাই জানেন দুওসহ সেই দিনগুলো কেমন গেছে তাদের।
কেন জানি এই জাতীয় চার নেতা
কেন জানি এই জাতীয় চার নেতা সম্পর্কে খুব বেশী উচ্ছ্বাস দেখা যায়না ক্ষমতাসীনদের মধ্যে। কিন্তু স্বাধীনতার প্রশ্নে এনাদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
কেন জানি এই জাতীয় চার নেতা
কেন জানি এই জাতীয় চার নেতা সম্পর্কে খুব বেশী উচ্ছ্বাস দেখা যায়না ক্ষমতাসীনদের মধ্যে।
– আপনার এই কথাটা মানতে পারলাম না ।ক্ষমতাশীন বলতে আপনি এখানে বিশেষ কিছু ইঙ্গিত করেছেন ।
জাতীয় চার নেতা নিয়ে উচ্ছাস না থাকতে পারে কিন্তু হাহাকার বা হারানোর বেদনা আওয়ামীলীগের মাঝে অবশ্যই আছে ।প্রকৃত লীগারদের(চুরঞ্জিত গোষ্টি বাদে) কাছে জাতীয় চার নেতা এখন ও বঙ্গবন্ধুর মত সমান শ্রদ্ধার আসনে আসীন আছেন এবং থাকবেন আজীবন ।
এই গল্পগুলা বার বার শুনতেও
এই গল্পগুলা বার বার শুনতেও যেমন ভাল লাগে , পড়তেও অনেক ভাল লাগে ।
আসলেই তাই। ধন্যবাদ শুভ্রদেব।
আসলেই তাই। ধন্যবাদ শুভ্রদেব।