
কি ছিলো রামপাল বিদুৎ প্রকল্প সম্পর্কে ইউনেস্কোর আপত্তিতে :
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার এবং ইন্টারন্যাশনাল কনজার্ভেশন ইউনিয়ন ( আই ইউ সি এন) বলেছিল ; এই সম্ভাবনা খুবই প্রবল যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এই প্রকল্পের দরুন ক্ষতিতে সুন্দরবন পতিত হতে পারে জানিয়ে ইউনেস্কো ত্রিশ পৃষ্ঠার বেশি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো ২০১৬ সালের অক্টোবরে। সে প্রতিবেদনে মূলত চার ধরনের ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয় ;
১। রামপাল বিদুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে কয়লা পুরিয়ে। এই কয়লা পোড়ানোর পর তা থেকে নির্গত ছাইকে সুন্দরবনের জন্য ১ নং ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত বর্জ্য ও পানিকে সুন্দরবনের জন্য ২য় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
৩। এই প্রকল্প ঘিরে সুন্দরবনে যেভাবে জাহাজ চলাচল বাড়বে এবং ড্রেজিং করার দরকার হবে, সেটিও সুন্দরবনের ক্ষতির কারণ হিসেবে গণ্য।
৪। আর সবশেষে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঘিরে ঐ অঞ্চলের সার্বিক শিল্পায়ন এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও সুন্দরবনের পরিবেশের জন্য হুমকি হতে পারে বলে প্রকাশ করা হয়।
ইউনেস্কোর আপত্তি ও পরিবেশ আইন (১৯৯৭) নিয়ে আওয়ামী সরকারের গোঁজামিল :
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছিলো, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ইউনেস্কো তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ কমিটির ৪১ তম সভা চলাকালে এই আপত্তি প্রত্যাহার করা হয়। মন্ত্রণালয় এও দাবি করেন ; প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি দল সেই সভায় উপস্থিত ছিলো। কিন্তু বাস্তবিকভাবে সরকারের দাবি ও ইউনেস্কোর এই সম্বন্ধীয় কোনো কার্যক্রমের ( আপত্তি প্রত্যাহারের বিষয়টিতে) কোনো মিল এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি! তাহলে কি এই ধরে নেবো? রাষ্ট্রযন্ত্র মিথ্যা আশ্বাসে রাষ্ট্রকেই জলাঞ্জলি দিয়ে ফায়দা লোটার পরিকল্পনা করেছে?
বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইস্যুতে আওয়ামী সরকারের অবস্থান :
রাষ্ট্র জলাঞ্জলি দিতে পিছিয়ে নেই সরকার দলীয় নেতা নেতৃবৃন্দরাও! অতি সাম্প্রতিক বাগেরহাট – ৪ আসনের সাংসদ বলেছেন ; দেশের উন্নতি যেনো না হয়, সেই লক্ষ্যে একটি গোষ্ঠী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধীতা করছে! তিনি প্রশ্ন রেখেছেন ; “যে দেশে সুন্দরবন নাই সে দেশ কি চলেনা?” দেশ পরিচালনায় যুক্ত একজন সরকার দলীয় সাংসদ এরচেয়ে ভালো মন্তব্য আর কি করতে পারেন সেটাও জাতির ভাবনায় আনা উচিত। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন ;
” ঘৃণার কারণে মন অন্ধকার হয়ে যায়, স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি কাজ করেনা। নেতা হতে হলে তুমি ঘৃণা করতে পারবেনা।”
অথচ আমরা যখন ম্যানগ্রোভ বন এবং তার পরিবেশ, মানুষ, জীববৈচিত্র্য ও সর্বপরি রাষ্ট্রের স্বার্থের কথা বলছি তখন সেই রাষ্ট্রেরই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ;
“রামপাল বিরোধিতাকারীদের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাথে সাক্ষাৎ করানো হোক!”
তাহলে কি বলব, ঘৃণার দরুন প্রধানমন্ত্রীর বিচারবুদ্ধি কাজ করছেনা? তাই যদি হয়, কাদের প্রতি ঘৃণা? জনগণ নাকি সবমিলিয়ে রাষ্ট্র? প্রধানমন্ত্রীর এই কামনাও জাতির জন্য খুব অবাক করার মত কিছু নয়! ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রযন্ত্র যতদিন থাকবে ততদিন এসবই হয়, হবে। এরা ঢাকাকে সিঙ্গাপুর সিটি বলে অভিহিত করলেও সেটাই সত্য ও সঠিক বলে ধরে নিতে হবে। ফ্যাসিবাদের ধর্ম, বৈশিষ্ট্য এবং সংস্কৃতিটাই এমন!