ভূমিকা:
১৯৯৪ সাল। আমরা তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। সেই সময়ে আমি ও আমার কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের স্কুলে ও স্কুলের বাহিরে ইঁচরে পাকা নামকরণ হয়ে গিয়েছিলো। বেশ কয়েকজন বন্ধু পরবর্তীতে এমন কিছু ভাল/মন্দ ইতিহাস তৈরী করে ফেলেছিল যার ফলশ্রুতিতে আমি ভাল/মন্দ কিছু লিখার উপকরণ পেয়েছিলাম।
কলেজ জীবনে প্রচুর মাত্রায় মহাভারত, গীতা, বঙ্কিম আর শরৎ চর্চার ফলে ঐ বয়সেই এমন কিচু করে ফেলতে পারতাম, যাকে সমসাময়িকরা মনে করতো শ্রী বঙ্কিমচন্দ্রের দ্বীতিয় পূনর্জন্ম আমি। আমার কমলাকান্ত নিক নেয়ার এটাও হয়তো একটা কারণ হতে পারে।
ভূমিকা:
১৯৯৪ সাল। আমরা তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। সেই সময়ে আমি ও আমার কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের স্কুলে ও স্কুলের বাহিরে ইঁচরে পাকা নামকরণ হয়ে গিয়েছিলো। বেশ কয়েকজন বন্ধু পরবর্তীতে এমন কিছু ভাল/মন্দ ইতিহাস তৈরী করে ফেলেছিল যার ফলশ্রুতিতে আমি ভাল/মন্দ কিছু লিখার উপকরণ পেয়েছিলাম।
কলেজ জীবনে প্রচুর মাত্রায় মহাভারত, গীতা, বঙ্কিম আর শরৎ চর্চার ফলে ঐ বয়সেই এমন কিচু করে ফেলতে পারতাম, যাকে সমসাময়িকরা মনে করতো শ্রী বঙ্কিমচন্দ্রের দ্বীতিয় পূনর্জন্ম আমি। আমার কমলাকান্ত নিক নেয়ার এটাও হয়তো একটা কারণ হতে পারে।
মাঝে মাঝে নিজের পুরোনো লেখাগুলো পড়ি আর ছেলেমানুষীগুলো দেখে হাসি। ১৯৯৮ সালে করা এমনই একটি ছেলেমানুষীর নমুনা আমি বন্ধুদের সাথে ব্লগে শেয়ার করব। আমারই একজন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জীবন কাহিনী নিয়ে লেখা আমার জীবনের প্রথম উপন্যাস “অন্তর্দাহ”। যা পড়ে বন্ধুরা আমার ছোটবেলার ছেলেমানুষীগুলো সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা নিতে পারবেন। প্রতিদিন একটি করে অধ্যায় পোস্ট দিব আশা রাখি। পড়ে ভালো/মন্দ মতামত দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। কারণ, এখনো পুরো উপন্যাসটা আমি ছাড়া আর কেউ পড়ার সময় অথবা সুযোগ কোনটাই পায়নি। আশা করি আমার ছেলেমানুষীগুলো ভালো লাগবে:
“বন্ধুরা বলিত পাগল আর গুরুজনে বলিত পাতক। কিন্তু আমার নিকটে তাহাকে সুস্থ্য মস্তিস্কদিগের চাইতেও সুস্থির বোধ হইত। যদ্যপি সে কালে ভদ্রে এমনই আচার করিত যে, তাহাকে ক্ষ্যাপা বলিয়াই ভ্রম হইত। অদ্য তাহার সেই দূরধীগম্য আচরণকে সকলের নিকটে উন্মুখ করিতেই কলম ধরিয়াছি। তাহার সদা সহাস্যবদন আর হৃদয়ের সাতিশয় আনন্দের অতিসহ্য দেখিয়া সকলে তাহাকে সুখী বলিয়া বিবেচনা করিলেও, তাহার হাস্যশুভ্র নেত্রের তারকামাঝে আমি কষ্টের যে মর্মর ধ্বণি শুনিতে পাইয়াছিলাম, তাহাই আমাকে তাহার ক্লেশের প্রতিকূলে লেখনি ধরিতে বাধ্য করিয়াছে। তাহার এই ময়ুখ হৃদয়ের গোপন তমিশ্র আমার নিকটে কোন কালেই ধরা পড়িত না, যদি না আমি তাহার সহিত সুহৃদবন্ধনে আবদ্ধ হইয়া সুদীর্ঘ্যকাল যাপন করিতাম।
তাহার নাম ছিল প্রিন্স। তাই বলিয়া সে যুবরাজ নহে। আমাদের বাটীপার্শ্বস্থ এক উচ্চকুলগ্রস্থ মধ্যবিক্ত পরিবারের জ্যেষ্ঠ তনয় এবং আমার সর্বাপেক্ষা অন্তরঙ্গ সুহৃদ ছিল এই প্রিন্স। তাহার নানা প্রকার ভদ্রক গুণাবলী ছিল। সে কস্মিনকালে যদি কাহাকেও ভালবাসিয়া সুহৃদবন্ধনে গ্রথিত করিত, তা’হইলে আমৃত্যু তাহাকে সখা বলিয়া মনন করিত। বন্ধুর সুখকে আপণ সুখ মনন করিত আর বন্ধুর ক্লেশকে আপণ ক্লেশ। তাহার কোন সুহৃদ বিপদে পড়িলে সে আপণ প্রাণ বিপন্ন করিয়া হইলেও সহায়তা করিবার উপায় করিত।
প্রিন্স স্বয়ং সকলের চিত্তে ত্রাসের সঞ্চার করিত, কিন্তু কোন কালেই কোন গর্হিত কর্মকে প্রশ্রয় দিত না। কোথাও কোন অন্যায্য দেখিলে প্রিন্স তাহার প্রতিবাদ করিত। এমনকি তাহা যদি বয়োঃজ্যেষ্ঠরাও করিতেন। প্রিন্সের সহিত একান্ত অন্তরঙ্গ হইয় আমি বুঝিতে পারিয়াছিলাম তাহার রুক্ষ অবয়বের অভ্যন্তরে বিধাতা একটি সুন্দর ও মিত্রসুলভ চিত্ত দিয়াছিলেন। প্রিন্সের সহিত অভিজ্ঞাতির পর হইতে তাহার প্রভাবে আমার বিদ্যা ও প্রকৃতি উভয়েই দীপ্ত হইয়া উঠিয়াছিল। আমি আপনাকে তাহার ন্যায় গড়িয়া তুলিতে চাহিয়াছিলাম এবং সফলও হইয়াছিলাম।
প্রিন্সের কলেবর ছিল উপহসনীয়। তাহার কলেবর ছিল কৃষ্ণবর্ণের। সেই বর্ণ দেখিয় আমরা সকলে মনন করিতাম বিশ্বেশ্বর বুঝি তিমির রাজ্য হইতে তাহাকে ধরাতে প্রেরণ করিয়াছেন। তাই সবিতামন্ডিত ধরাতে আসিয়াও তাহার কলেবর বিন্দুমাত্রও আলোকিত হয় নাই। কিন্তু তাহার ভ্রু-দ্বয়, কাজল কাল নেত্রদ্বয় আর কমলানেবুর কোষের ন্যায় ওষ্ঠজোড়ার দিকে চাহিলে সেই কথাটা মিথ্যা বলিয়া প্রতীত হইত। সেই সাথে পরমেশ্বর তাহাকে মনোহর একটি সঙ্গিতকন্ঠও উপহার দিয়াছিলেন। বিভু তাহাকে সকলের চাইতে ব্যতিক্রমী অথচ উর্বর একখানি মস্তিস্কও দান করিয়াছিলেন। কিন্তু সেই উর্বর মস্তিস্কখানি লাঙল চালাইবার অভাবে কিঞ্চিৎ যেন অনুর্বর হইয়া পরিয়াছিল।
প্রিন্সের বিভিন্য গুণাবলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা অন্যতম গুণ হইল, সে এমনি চিত্রঙ্কণ করিতে পারিত যে তাহা দেখিয়া পাষান-কঠিন হৃদয়ও মোমের ন্যায় গলিয়া জলের ন্যায় ফোটায় ফোটায় সেই চিত্রোপরে পতিত হইত। কিন্তু প্রিন্স সর্বদা পুস্পচিত্র অঙ্কন করিত। কদাচিৎ তাহাকে আমি মনোহর রমনীচিত্র অঙ্কণ করিতে কহিলে সে আমাকে বলিত, পুস্পই নারী আর নারীই পুস্প। পুস্পচিত্র অঙ্কণ করিলে চিত্তের ক্লেশ দূরীভূত হয়। আর রমনীচিত্র অঙ্কন করিলে তাহা দেখিয়া চিত্তে ক্লেশ পাইতে হয়। পুস্পও সুন্দর, নারীও সুন্দর। নারী চিত্র অঙ্কণ করিলে তাহা দেখিয়া চিত্ত সংকুচিত হয়, হৃদয়ে অন্য প্রকার ভাবনা হয়। কিন্তু পুস্প! তাহা দেখিয়া চিত্তের সংকীর্ণতা দূর হয়। চিত্ত হয় নির্মল আর হৃদয় হয় প্রস্ফুটিত। প্রতিটি নারীকেই তাহাদিগের নারীত্বের জন্য ভালবাসা যায়, তাহাদের মাতৃত্বের জন্য শ্রদ্ধা করা যায়। কিন্তু প্রত্যেক রমনীকে ভালবাসা যায় না। কেননা, প্রত্যেক রমনীর হৃদয়ে নারী বাস করে না।
প্রিন্স আমাকে তা অঙ্কিত একখানি প্রসুনচিত্র উপহার দিয়াছিল, যাহা অদ্যাবধি আমার নিকটে স্বযতনে রক্ষিত আছে। আর তাহার নিকট হইতে মানব জীবনের যে সকল তত্ত্বজ্ঞান আমি পাইয়াছিলাম, তাহাও অদ্যাবধি আমার হৃদয়ে বিন্যস্ত হইয়া আছে। প্রিন্সের জীবনে নীরদহীন বর্জ্রপাতের ন্যায় ভালবাসার আবির্ভাব ঘটিয়াছিল, যা তাহার জীবনকে সর্বভূকের ন্যায় দহন করিয়া নিঃশেষ করিয়া দিয়াছিল। তাহার এমত দূরধীগম্য আচার করিবার মূলেই রহিয়াছিল তাহার সেই ভালবাসা। প্রিন্সের সম্বন্ধে এতো কথা কহিবার কারণ হইল, যথার্থ কাহিনী অধীতের কালে যেন পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি না ঘটে। এক্ষনে আমি তাহার সকরুণ কাহিনী ব্যক্ত করিব ॥”
চারি ঘন্টাতিবাহিত হইয়া যাইবার
চারি ঘন্টাতিবাহিত হইয়া যাইবার পর কোন প্রকার ভালো মন্দ মন্তব্য না পাইয়া সাতিশয় উৎফুল্যচিত্তে কমলাকান্ত নিদ্রায় যাইতে পারিলো :কানতেছি: :কানতেছি: :কানতেছি:
পড়তে কিঞ্চিৎ কষ্ট হইল
পড়তে কিঞ্চিৎ কষ্ট হইল :হাহাপগে:
আমি দুঃখিত পড়িবার জন্যে
আমি দুঃখিত :কানতেছি: পড়িবার জন্যে ধন্যবাদ :ফুল:
ভাইয়া, আপনার লেখাটা সত্যি
ভাইয়া, আপনার লেখাটা সত্যি ভালো লাগসে।পুরনো দিনের লেখার মতো করে লেখা, তাতে কি ? আপনি ধুমসে লিখে যান। কেউ না পড়ুক , আমি আছি!
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই | রতিদিন
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই | রতিদিন একটি করে অধ্যায় পোস্ট করব | যদি একজনও পড়ে উৎসাহ দেয়, আমি সার্থক