একের পরে এক পরাজয়। হেফাজত ফ্যাক্টর, অন্তর্কলহ, জনগণের অসন্তোষ অনেক কিছু কেই দায়ী করা হচ্ছে। বিরোধী শিবির দারুণ ভাবে উৎসাহিত। তবে অনেকের মনে একটা সন্দেহ মাথা চাঁড়া দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই বলেছিলেন, ‘নির্বাচন যথাসময়েই হবে এবং বি এন পিও সেই নির্বাচনে আসবে’। কথাটা কি আন্দাজে বলেছিলেন? না তিনি ভেবে চিন্তেই বলেছিলেন? সেই বক্তব্যের সঙ্গে কি এই নির্বাচনী ফলাফলের কোন যোগসূত্র আছে? একটা কথা তিনি ভালভাবেই জানেন, নির্বাচন কেমন হল, তা নিয়ে বিদেশী প্রভু দের তেমন মাথা ব্যাথা থাকবে না যদি তাঁদের স্বার্থ সিদ্ধি হয়। তাঁরা আসলে চায় খনিজ সম্পদের ওপর প্রভুত্ত্ব। আর তাই তিনি একটাই চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, ‘বিদেশী প্রভুদের সন্তুষ্ট করতে’। তেল গ্যাস অনুসন্ধান এর জন্য যাকে বলা হয়েছে তাদেরকেই দিতে রাজী হয়েছেন। ‘টিকফা’ ও করতে যাচ্ছেন।
বিএনপি ও ব্যাপারটা টের পেয়েছে। ভারত সফর, সিঙ্গাপুর সফর, ওমরাহ্ হজ—সব কিছুই হয়েছে। আপ্রাণ চেষ্টাও চলছে। প্রভুদের কোন আশ্বাস দিতেই বোধ হয় বাকী রাখছে না। এখন চাই শুধু নেক নজর। যদি বোঝে যে একতরফা নির্বাচন প্রভুরা মানবে না, এদেশকে একঘরে করে দিবে, তবে হয়তো তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচন বয়কট করবে। প্রভুরা যদি জ্বালাও পোড়াও দিয়ে দেশ অস্থিতিশীল করতে বলে, তাতেও তাঁদের মনে হয় না আপত্তি থাকবে। গোলযোগ থামাতে যদি সেনাবাহিনী আসে, তবে আর তাঁদেরকে পায় কে। থাকুক না দুই বছর। তারপরে তো মসনদ পাওয়া যাবে। আগের বারে যেমন বিরোধী দল জিতেছিল।
সংসদ নেত্রী ব্যাপারটা আগে থেকেই আঁচ করে রেখেছেন। দলীয় সরকারের চেয়ে সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচনে বিরোধী দল বেশী আগ্রহী। তাই ‘জেল’ এ যাওয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। উনি হয়তো ভেবেছেন, বিরোধী দল এ ব্যাপারটা চিন্তা করেন নি। তাই কি? তাঁরা চিন্তা করেছেন এবং বেশ ভালভাবেই চিন্তা করেছেন। পুরাতন ভিডিও দেখে তাঁরা এ ও আবিস্কার করেছে যে, সেনাবাহিনী আসলে, সরকারী দলের নেতারা বেশী জেলে যায়। বিরোধী দলের মাত্র গুটি কয়েক। তারচেয়েও বড় সুবিধা, বিরোধী দল বিপুল ভোটে জেতে। বিরোধী দলকে শুধু বলতে হয়, ‘এই সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল’। শপথ গ্রহনের দিনে বঙ্গ ভবনে যেতে হয় আর সাংবাদিকদের মাধ্যমে আশ্বাস দিতে হয়, ‘এই সরকারের সকল কার্যক্রমের বৈধতা দেয়া হবে।‘
বিরোধী দলকে সামনে তাই রাখা হয়েছে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের উদাহরণ’। প্রথমে চার সিটি কর্পোরেশান নির্বাচনে দারুণ সফল নির্বাচন করা হল। ইচ্ছে করেই হয়তো(?) হারলো। অন্তর্কলহ থামানোর কোন চেষ্টাই করা হল না, কেন্দ্রীয় নেতারা কেউই প্রায় প্রচারনায় গেল না। বিরোধী দলকে ম্যাসেজ দেয়া হল, তাঁদের এখন দারুণ জনপ্রিয়তা। ভোটে গেলে নির্ঘাত জয়। দলীয় সরকার থাকলেও তাঁদের নিশ্চিত জয় কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এরপর তাঁরা হারলো তাঁদের দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ ‘গাজীপুর’এ। বিরোধী দলকে আরও একবার মেসেজ দেয়া হল, নির্বাচন হলেই তাঁদের জয়।
বিরোধী দল একেবারে দ্বিধায় পরে নি, তা বোধহয় না। সরকার যদি এই অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেনে কোন সংশোধনী না আনে, তবে সংবিধান অনুসারে অন্তর্বর্তী সরকারে অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। ‘সংবিধান স্থগিত’ কিংবা ‘জরুরী অবস্থা জারী’ এমন ঘটনা যদি না ঘটে। সমঝোতার একটাই রাস্তা খোলা থাকবে তা হচ্ছে, সেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান যদি দুজনের পছন্দের কেউ হয়। তখন হয়তো গল্পের একটি সুন্দর ‘শেষ’ জুটে যাবে আর ‘নটে গাছটিও ভালভাবেই মুড়োবে’। কিন্তু যদি তা না হয়? বিএনপি যদি গোঁ ধরেই থাকে?
পুরনো পরীক্ষিত যে ফর্মুলা দিয়ে বিরোধী শিবিরকে নির্বাচনে আনা গেছে তা হচ্ছে, বিরোধী শিবিরকে এই আস্থা দেয়া, যে নির্বাচন হলেই তাঁরা জিতবে। বাংলাদেশের পুরনো নথি ঘেঁটে পাওয়া গেল সুন্দর একটা উদাহরণ, কিংবা বিরোধী দলের ভাষায় ‘ট্র্যাপ’। ট্র্যাপের প্রথম শিকার হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সময়টা ছিল ছিয়াশি সাল। এরশাদ সাহেব টোপ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ প্রায় নিশ্চিত জয় ভেবে বিরোধী দল রাজী হয়ে যায়। ভোটে অংশ নেয়।
সেই পুরনো ফর্মুলাই কি নিয়ে এবার হাজির হয়েছে আওয়ামী লীগ? ‘দেশে তো এখন অ্যান্টি আওয়ামী ওয়েভ চলছে। বিএনপি থেকে কলাগাছ দাঁড়ালেও জিতবে। আর এতো মিডিয়া, এতো চ্যানেল এর ভেতরে কি কারচুপি করা সম্ভব? জয় তো আপনাদের হবেই। শুধু শুধু কেন সুশীল সমাজ কে ডাকবার জন্য জেদ ধরছেন। আসলেই তো আবার বিভিন্ন টাল বাহানা করে দু তিন বছর থেকে যাবে। আমাদের জেলে ঢোকাবে, নেতাদের ঢোকাবে। আর আমাদের দুই দলের ছাত্র সংগঠনের অবস্থাও তো সেই রকম। টেন্ডার নেয়ার সময়ই তো কেবল আমাদের কথা মনে পড়ে। আমাদের মুক্তির জন্য একটা মিছিলও তো ওরা করবে না। দেশ বাসীও টু শব্দ করবে না। মাঝখান থেকে আমরা দুজন সাব জেলে কাটাবো’।
বিএনপি কি করবে? বয়কট করবে? বয়কট করবার পরে যদি বিদেশী প্রভুরা এই নির্বাচনকে মেনে নেয়? যেভাবে বিদেশী প্রভুদের সব খনির দখল স্বত্ব বিলি করছে, ব্যাপারটা হয়তো অসম্ভব না। আর সেক্ষেত্রে তখন তো সব কুলই যাবে। আর নির্বাচন করবার পরে যদি হারে, সেক্ষেত্রে কি মুখ নিয়ে বলবে, ‘নির্বাচনে কারচুপি হয়েছিল’। আন্দোলন যে করবে, কর্মী কই? প্রায় সবাই তো মামলার ভয়ে পালিয়ে আছে। কিছু সত্যি মামলায়, কিছু মিথ্যে মামলায়।
অন্য রাস্তা হচ্ছে নির্বাচন। প্রায়নিশ্চিত জয়ের সমূহ সম্ভাবনা। মুলার মত ঝুলিয়ে দেয়া হল সিটি কর্পোরেশান নির্বাচনের ফলাফল। অংশ নিলেই নিশ্চিত জয়। সুযোগটা নিতে চাইলে আসতে হবে নির্বাচনে। বিএনপি কি আসবে? কি ভাবছে বিএনপি? এই পাঁচ সিটি কর্পোরেশানের পরাজয় কে কি তাঁরা ইচ্ছাকৃত ভাবছে? ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ব্যাপারে সিরিয়াস’ এই ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টাই কি এই নির্বাচনে পরাজয়ের উদ্দেশ্য? যেন বিএনপি এই নির্বাচনে আসে।
বিএনপি মুখে যাই বলুক, মনে হচ্ছে তাঁরা দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। এক ধারা বিশ্বাস করছে এই সরকার সত্যিই নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে ‘সিরিয়াস’। নিজেরা হারলেও নির্বাচন সুষ্ঠু করবে। তাই তাঁরা ভাবছে নির্বাচনে অংশ নেয়া যেতে পারে। একটা ফেস সেভিং কোন ফর্মুলা পেলেই তাঁরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পক্ষে। আর অন্য ধারা তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে এখনও গোঁ ধরে থাকার পক্ষে। তাঁরা এখনও ভাবছে সিটি কর্পোরেশানের এই পরাজয় আসলে ‘আওয়ামী ট্র্যাপ’। বিএনপি কে নির্বাচনে আনবার জন্য।
যদিও আপনার সন্দেহ সম্পুর্ন
যদিও আপনার সন্দেহ সম্পুর্ন ভিত্তিহীন এরপর ও বলবো এই যদি হয় আওয়ামীলীগের ট্র্যাপ বা ফর্মুলা তবে মেনে নিতে আপত্তি নেই।
দেশের কথা বিবেচনা করে বিষ খেয়েও যদি প্রমান করতে হয় এটা বিষ নয়, তবে তাই করা উচিত।
কথাটা কি ভেবে বললেন? ২০১৯ এ
কথাটা কি ভেবে বললেন? ২০১৯ এ যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকে আর এই ফর্মুলায় ইলেকশান হয়, তখন কি আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচন করবে? বিষ খাবে?
এভাবে কখনো ভাবি নি। দেখাই যাক
এভাবে কখনো ভাবি নি। দেখাই যাক কী হয়।
আপনার আমার দেখতে চাওয়া দিয়ে
আপনার আমার দেখতে চাওয়া দিয়ে তো হবে না। বিরোধী দল দেখতে চায় কি না, সেটাই প্রশ্ন।
এটা কোন পরিকল্পনা বা আওয়ামী
এটা কোন পরিকল্পনা বা আওয়ামী ট্র্যাপ নয় বলে আমার কাছে মনে হয়! নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এরূপ ফলই হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ আমাদের জাতি অল্প সময়েই অতীত ভূলে যায়! এসব নির্বাচনের ফলাফল দেখে আপাতত: তাই মনে হচ্ছে।
বিএনপি কি ভাবছে তা বোঝানোর
বিএনপি কি ভাবছে তা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ঠিক না বেঠিক তা বলিনি। অতীত মনে রাখলে তো কাউকেই ভোট দেয়া যাবে না।
এই লেখাটা আজকে
এই লেখাটা আজকে ছেপেছে
http://www.amadershomoy1.com/content/2013/07/09/news0733.htm