(১)
“ও আমার রসিক বন্ধুরে, তোর লাইগ্যা আজ হইসি দিওয়ানা
ষোলো আনা পিরীত কইরা……”
উপর থেকে ভেসে আসা গানের সুর কানে প্রবেশ করে রাসেল এর কানে। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় তিনতলার বারান্দায় লতিকা আন্টি কাপড় মেলে দিচ্ছেন আর গুনগুন করে গান গাইছেন। রাসেলের চোখে চোখ পড়তেই লতিকা আন্টি জিজ্ঞেস করলেন,”কি অবস্থা রাসেল? নিচে কি করতেসো এই রোদের মধ্যে?”
-না আন্টি, এমনিতে…কিছুনা।
-উপরে এসো। রোদের মধ্যে ঘুরতে হয়না। তুমি এসো, আন্টি তোমাকে শরবত বানিয়ে খাওয়াবো। সারা শরীর একেবারে ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে তো!
-“না আন্টি, খাবোনা” বলে হাঁটতে শুরু করে সে।
(১)
“ও আমার রসিক বন্ধুরে, তোর লাইগ্যা আজ হইসি দিওয়ানা
ষোলো আনা পিরীত কইরা……”
উপর থেকে ভেসে আসা গানের সুর কানে প্রবেশ করে রাসেল এর কানে। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় তিনতলার বারান্দায় লতিকা আন্টি কাপড় মেলে দিচ্ছেন আর গুনগুন করে গান গাইছেন। রাসেলের চোখে চোখ পড়তেই লতিকা আন্টি জিজ্ঞেস করলেন,”কি অবস্থা রাসেল? নিচে কি করতেসো এই রোদের মধ্যে?”
-না আন্টি, এমনিতে…কিছুনা।
-উপরে এসো। রোদের মধ্যে ঘুরতে হয়না। তুমি এসো, আন্টি তোমাকে শরবত বানিয়ে খাওয়াবো। সারা শরীর একেবারে ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে তো!
-“না আন্টি, খাবোনা” বলে হাঁটতে শুরু করে সে।
রাসেল ফুলবাড়িয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র। বাবা স্কুল মাস্টার, মা গৃহিণী। আনন্দ নিকেতন নামের বাসাটিতে তারা গত কয়েকমাস হলো ভাড়া এসেছে। বাড়ির মালিক মিসেস লতিকা বেগম থাকেন বাড়ির তিনতলায়। মহিলার স্বামী গত হয়েছেন প্রায় ৩ বছর হল। বিয়ের মাত্র ৭ বছরের মাথায় উনার স্বামী ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার সমস্ত সম্পত্তির মালিক হন মিসেস লতিকা। বিয়ের সাত বছরেও তাদের ঘর আলো করে কোনো সন্তান সন্ততি আসেনি। তাই, স্বামীর মৃত্যুর পর লতিকা বেশ একা একাই জীবনযাপন করছেন। শুধু একজন কাজের মহিলা তার বাসায় কাজ করে দিয়ে যায়। নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য তিনি তার বাড়ির ছাঁদে বাগান করেন। এভাবেই চলে তার জীবন।
(২)
-“এই রাসেল, ছাঁদে কি করছো?”
পিছন থেকে আচমকা গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে রাসেল। পিছন ফিরে দেখে লতিকা আন্টি। জবাব দেয়-” না আন্টি, আপনার গাছগুলো দেখছিলাম”
-ও, আচ্ছা। দুপুরে কি দিয়ে খাইসো?
-মাছ, বুটের ডাল, আর বেগুন ভাজি।
-চলো আমার রুমে, তোমাকে একটা নতুন আইসক্রিম খাওয়াবো। আমি আজ বাজার থেকে কিনে এনেছি তোমার জন্য।
-না আন্টি, এখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছেনা।
-“কেন না? চলতো আমার সাথে”, এই বলে লতিকা আন্টি রাসেলের হাত ধরে টান দিতে যাবে হঠাত ব্যাপারটা চোখে পড়লো লতিকা আন্টির। রাসেল তার বাম হাতটা সুকৌশলে পেছনে লুকিয়ে রেখেছে। ধমকের সুরে তিনি বল্লেন-“দেখি হাত দেখাও, দেখাও হাত…দেখি হাতে কি।” এক প্রকার জোর করে রাসেলের মুস্টিবদ্ধ হাত থেকে তিনি যা উদ্ধার করলেন সেটি একটি মলাটবিহীন বই। বইয়ের ভেতর বিভিন্ন ভঙ্গিমায় রতিক্রিয়ার ফটো দেয়া। বই দেখে লতিকা আন্টি মনে মনে মুচকি হাসলেন কিন্তু মুখে কাঠিন্য ঝুলিয়ে রেখে বললেন-“আমি এক্ষুনি তোমার আম্মুকে গিয়ে সব বলে দিচ্ছি, এই বয়সে এত পেকে গেছো??
-প্লীজ আন্টি, আম্মুকে কিছু বলবেন না প্লিজ। আম্মু জানতে পারলে আমাকে মেরেই ফেলবে। আপনার পায়ে পড়ি। আমি আপনার সব কথা শুনবো তবুও আপনি আম্মুকে কিছু বইলেন না।
-তোমার আম্মুকে আমি কিছু বলবোনা। তবে আমার একটা শর্ত আছে।
-কি শর্ত আন্টি?
-তোমাকে এখন থেকে যা যা করতে বলবো সব করতে হবে, ওকে?
রাসেল একটু ভেবে নিয়ে বলে-“হ্যা আন্টি সব করবো,কিন্তু আপনি প্লিজ কাউকে বইলেন না।”
-তাহলে এখন চলো আমার রুমে। আইসক্রিম খাবে চলো…
(৩)
রাসেলকে তার রুমে নিয়ে বসান মিস লতিকা। ওকে বসতে বলে উনি চলে যান রান্নাঘরে। একা একা বসে ভাবে রাসেল, কি এমন কাজ তাকে করতে বলবেন লতিকা আন্টি। হঠাত ওর মাথায় বিদ্যুৎ খেলে যায়, মনে পড়ে যায় ওইসব বইয়ে লিখা ঘটনার কথা আর ওর মনে কাটা দিয়ে উঠে। এসব ভাবতে ভাবতে লতিকা আন্টি আইসক্রিমের বাটি নিয়ে ঘরে ঢুকেন। রাসেলের পাশে বসতে বসতে বলেন-
-আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
লতিকা আন্টিকে দেখে কিছুটা অবাক হয় রাসেল। উনার চুল একটু আগেও বাধা ছিলো, এখন উনার চুল খোলা। শাড়ির আঁচলটাও ঠিক জায়গায় অবস্থিত নয়। এসব দেখে ভয় দানা বেধে উঠতে শুরু করে ওর মনে। বিব্রতকর ভঙ্গিতে বলে উঠে রাসেল-“না না আন্টি আমি নিজের হাতেই খাবো”।
-উহু, তোমাকে আমার হাতেই খেতে হবে। বলে একপ্রকার জোর করেই চামচ চামচ আইসক্রিম রাসেলের মুখগহ্বরে প্রবেশ করাতে থাকেন মিসেস লতিকা। আর বেচারা রাসেলের মনে তখন অজানা আতংক কাজ করছে। কোলের উপর বাটি টা রেখে একহাতে চামচ দিয়ে খাওয়াতে থাকেন রাসেলকে আর অন্যদিকে আরএকটি হাত দিয়ে হাত বুলাতে থাকেন রাসেলের পিঠে, মাথায়, চুলে। আর রাসেলের শরীরের ভেতর দিয়ে এক অদ্ভুত শিহরন বয়ে যেতে থাকে…
(৪)
একটু আগে লতিকা আন্টির দেহ দাফন করে বাসায় ফিরে এলো রাসেল। মনটা ভীষণ খারাপ তার। গতকাল সারারাত কেঁদেছে সে। চোখ এখনো লাল হয়ে আছে। আর কিছুদিন পর তার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা। এমন একটা সময় এত বড় একটা শক পেলো সে, যা তার মনের উপর অনেক বড় চাপ ফেলবে।
গলার ক্যান্সার আর বেশিদিন বাঁচতে দেয়নি মিসেস লতিকা কে। গতকাল রাতে বারডেম এ ইহকালের মায়া ত্যাগ করে অজানা এক গন্তব্যের পথে পাড়ি জমান মিসেস লতিকা। মৃত্যুর সময় তার পাশেই ছিলো রাসেল। শেষ বারের মত উনি একবার রাসেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন…
মৃত্যুর ৬-৭ ঘন্টা আগে হঠাত কিছুটা সুস্থ বোধ করছিলেন মিসেস লতিকা। ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাসেল কে। তাকে পাশে বসিয়ে তার সম্পত্তির উইল সম্পর্কে বলছিলেন। হঠাত যেন বজ্রপাত ঘটালেন মিসেস লতিকা। রাসেল কে বললেন- আমার মৃত্যুর পর আমার সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হবে তুমি।
ব্যাপারটা প্রথমে মেনে নিতে পারেনি রাসেল, কিন্তু একজন মৃত্যুপথযাত্রীর শেষ অনুরোধ হিসেবে এটা ফেলতে পারলোনা সে। তারপর থেকে তার মনটা আরো ভীষন খারাপ হয়ে গেছে…
আসুন ফিরে যাই ৯ বছর আগের সেই দিনে, লতিকা আন্টির রুমে-
-বাবা, এসব মোটেও ভাল নয়। এগুলো দেখা এবং পড়া উচিত নয়…আমাদের ধর্মে এগুলো সম্পর্কে কড়া নিষেধ আছে। আমার কোনো সন্তানাদি নেই, তুমি আমার সন্তানের মত। আমি চাই, তুমি অনেক বড় হও…অনেক চরিত্রবান হও। আমার ছেলে হলেও আমি এভাবেই বলতাম। আর কক্ষনো এমন করোনা।
-“আচ্ছা আন্টি , আর কখনো এমন করবোনা”, বলে নিজের মনের ভিতরে প্রচন্ড অনুশোচনায় ভুগলো রাসেল। আন্টিকে নিয়ে সে এতক্ষন কিসব আজেবাজে কথা ভাবছিলো, আন্টিকে সে ওইসব বইয়ের আন্টিদের মত ভেবেছিলো, ছি ছি! তার মনমানসিকতা এত নীচ! এগুলো ভাবতে ভাবতে আন্টিকে বলল সে-“আন্টি, আমি আর কখনোই এরকম করবোনা”।
-এইতো লক্ষী ছেলের মত কথা। এখন থেকে অনেক বেশি বেশি পড়াশোনা করবে। ভাল ভাল গল্প বই পড়বে, আমি তোমাকে কিনে দেব। আমার তো কোনো ছেলেপুলে নেই, তাই তোমার মাঝেই আমার সন্তান কে খুঁজে নেই। তুমি রাগ করোনা…
এরপর থেকে ৯ বছর যাবত রাসেলরা ওই বাসায় বসবাস করে আসছিলো। ছোট থেকে রাসেল বড় হয়েছে লতিকা আন্টির কাছেই। উনার কাছে পড়তো, উনার কাছে গল্প শুনতো। অনেক দিন আন্টি তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন…একেবারে মায়ের মত আদরে তার কাছে বড় হয়েছে রাসেল……আজ উনি নেই, ঘাতক
ব্যাধি কেড়ে নিলো রাসেলের এক মা’কে তার কাছ থেকে…বুকে অপার মাতৃত্ব নিয়ে চলে গেলেন একজন ‘মা’ সব মায়া ত্যাগ করে…
চমৎকার লাগল । একটা সুর এ গল্প
চমৎকার লাগল । একটা সুর এ গল্প প্রবাহিত হচ্ছিল । হটাত সুর চেঞ্জ হল । প্লাটফর্ম বদলে গল্প নতুন মাত্রা পেল । ভাল । :ফুল: :ফুল:
প্রথমে ভেবেছিলাম চাইল্ড
প্রথমে ভেবেছিলাম চাইল্ড এবিউসিং নিয়ে লিখবো গল্পটা। পরে হঠাত করে টুইস্ট এর আইডিয়াটা মাথায় আসলো। গল্পের মোড় ঘুরাতে পেরেছি কতটা সফলতার সাথে জানিনা, হয়তো গল্পের লেখনী তাড়াহুরার কারনে একটু দুর্বল হয়ে গেছে…এক্টা অন্যরকম চেষ্টা ছিলো। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। :গোলাপ:
ভাল লাগল।হঠাত্ চেন্জ হয়ে গেল
ভাল লাগল।হঠাত্ চেন্জ হয়ে গেল :ফুল: :তালিয়া: :থাম্বসআপ:
যাই হোক, দুইজনের মন্তব্যে
যাই হোক, দুইজনের মন্তব্যে বুঝলাম মোড় ঘুরাতে সফল হয়েছি। চেষ্টা চলবে 😀
আমি কিন্তু গল্পের কাহিনী
আমি কিন্তু গল্পের কাহিনী ঘুরার আগেই বুইঝা ফেলছিলাম কি হইতে যাচ্ছে পরিণতি। :ভেংচি:
ভাল্লাগছে :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ:
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ 🙂
আতিক ভাই কেমনে বুঝলেন??????
আতিক ভাই কেমনে বুঝলেন?????? গল্প কি আপনারে কইয়া লিখছে নি????? :ভেংচি: :ভেংচি: :ভেংচি:
কি থেকে কি হইল????
তবে
কি থেকে কি হইল???? :খাইছে: :খাইছে: :খাইছে:
তবে মজা পাইছি…
থ্যাঙ্কস, সবার মন্তব্যে মনে
থ্যাঙ্কস, সবার মন্তব্যে মনে হচ্ছে, টুইস্ট টা দিতে পেরেছি 😀 :গোলাপ:
হঠাত্ করে গল্পটা অন্য দিকে
হঠাত্ করে গল্পটা অন্য দিকে মোড় নেওয়ায় দ্বিগুণ মজা বেড়ে গেলো
ধন্যবাদ জেনে সুখী হলাম, সবার
ধন্যবাদ 🙂 জেনে সুখী হলাম, সবার ভাল লাগছে
(No subject)
:বুখেআয়বাবুল:
অমিত ভাই যে মানের লিখক তাতে
অমিত ভাই যে মানের লিখক তাতে শুরুর আবেশটার অবশান হবে তা অবধারিত আর প্রত্যাশিত ছিল। তবে আমার তেমন ভাল লাগে নি… গল্পটি জমেছে সে অর্থে বলা যাবে না!! অমিত ভাই আমি আরও ভাল আর চমকপ্রদ কিছু আশা করেছিলুম…
আসলে হইছি কি আমাদের প্রত্যাশা বেশীই ছিল আপনার কাছে!!
আশা করি পরেরবার আশা পুরন করতে
আশা করি পরেরবার আশা পুরন করতে পারবো ভাই। 🙂
একভাবে শুরু করে হঠাত্ নতুন
একভাবে শুরু করে হঠাত্ নতুন মোড় নেয়াটা ভালো লেগেছে :তালিয়া:
লিখা চালিয়ে যান :থাম্বসআপ:
সুখী হলাম ভাল লেগেছে জেনে
সুখী হলাম ভাল লেগেছে জেনে 🙂
ছোট গল্প হিসেবে অসাধারন বলা
ছোট গল্প হিসেবে অসাধারন বলা যায় কিন্তু গল্পে টুইস্ট দিছেন বালা কথা শেষে এসে দুঃখ দিলেন কেন মিয়া ?? দিলে চোট লাগছে …………… :কানতেছি:
আমার লেখার ধরনটাই এমন, আগের
আমার লেখার ধরনটাই এমন, আগের লিখাগুলো পড়লেই বুঝবেন… 🙂 সাথে থাকুন
hum হুম
hum হুম
ভালো লাগল।
ভালো লাগল।