মালি। পশ্চিম অফ্রিকার এই রাষ্ট্রটি তুলনামূলক বিচারে পৃথীবির দারীদ্রতম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা এই রাষ্ট্রটি গত এক দশকের ভু রাজনৈতিক আলোচনায় তেমন গুরুত্ব পেয়েছে বলে চোখে পড়েনি। কিন্তু গত বছরের শুরু থেকে মালি অন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ন টপিকে পরিনত হয়। বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরার মতো মিডিয়াগুলো মালির সংবাদগুলো ফলাও করে প্রচার করতে থাকে। ইউএস, ব্রিটেইন, ফ্রান্স সহ পশ্চিমা শক্তি মালির ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে থাকে। মালির কি সমস্যা? হঠাত করে সবাই মালির ব্যাপারে তৎপর কেন? পরিচিত উত্তর- মালি ইসলামী টেরোরিস্টদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। এই টেরোরিস্টরা পশ্চিমাদের জন্য বড় ধরনের হুমকি। পাঠক আমার সুচনা পড়ে হয়তো আপনারা ইতোমধ্যে আঁচ করতে পারছেন আমি কি বলতে যাচ্ছি? হ্যাঁ পাঠাক ঘটনা আর কিছু নয় ঘটনা হচ্ছে পুরোনো ফরমুলায় নতুন দেশ দখল। তবে এই দখল অভিযানটি অন্যান্য দখল অভিযান থেকে একটু ভিন্ন। কেন ভিন্ন তা বলার আগে মালির চলমান ঘটনা এবং প্রাসংগিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন।
এ বছরের জানুয়ারী মাসের ১১ তারিখ ফ্রান্স সরকার মালিতে সরকারবিরোধী বিদ্রোহ ( মালি ক্রাইসিস ২০১২) দমনে “অপারেশন সারভাল”[১] নামে এক সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে ফ্রান্সের ৩৮৫০ সৈন্যের[২] পাশাপাশি আফ্রিকা অঞ্চলের কয়েকটি দেশের ৬০০০ সৈন্য অংশ নিচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি [৩]। যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানে গোয়েন্দা ও যোগাযোগ সহায়তা দিচ্ছে। অন্যদিকে ন্যাটো সদস্যভুক্ত রাষ্ট্র ব্রিটেইনের ৩৩০ জন সেনা এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে[৪]। বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, জার্মানি এই অভিযানে সেনা মোতায়েন না করলেও আকাশ পরিবহন সুবিধা দিয়ে সাহায্য করাছে। পশ্চিমা শক্তির ভাষায় এই অভিযানের উদ্দেশ্যঃ আল-কায়েদা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশটিকে বাঁচানো। মালি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে মূলতঃ ২০১২ সালের সংকটকে কেন্দ্র করে। তবে এই অভিযানটি পশ্চিমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার একটি অংশ বাস্তবায়ন মাত্র।
২০১২ সালের সংকটঃ
মালির চলমান সংকট শুরু হয়েছে মূলতঃ ২০১২ সালের ১৬ ই জানুয়ারীতে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত তোয়ারেগ জনগোষ্টি আজওয়াদকে নিজস্ব রাষ্ট্র দাবি করে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহে আফ্রিকা অঞ্চলের কয়েকটি ইসলামবাদী মিলিশিয়া গ্রুপ সরকার বিরোধী অবস্থান নেয়। কিন্তু মিলিশিয়া গ্রুপগুলো তোয়ারেগদের দাবির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেনি। গত বছর বিদ্রোহ শুরু হওয়ার খুব অল্প সময়ে তোয়ারেগরা সরকারী বাহিনীকে হটিয়ে উত্তর মালির বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নেয়।
ছবিঃ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আমাদু
২১ শে মার্চ দেশটির সেনা বাহীনির একটি অংশ “সরকার বিদ্রোহ দমনে ব্যার্থ” এই অভিযোগে প্রেসিডেন্ড আমাদু তৌমানি তোর’কে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপের কারনে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সেনাবাহীনি অন্তর্বতীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হয়। ৬ই এপ্রিল তোয়ারেগদের সংগঠন “ন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর দি লিবারেশন অজওয়াদ” উত্তর মালির আজওয়াদ অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষনা করে। কিন্তু অন্তর্জাতিক অঙ্গনে কেউ আজওয়াদকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেয়নি। জুন মাসে “ন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর দি লিবারেশন অজওয়াদ” এর সাথে ইসলামবাদী সংগঠন আনসার আদ-দ্বীনের সংঘর্ষ বাধে। এই সংঘর্ষে আনসার আদ-দ্বীনের সাথে বেশ কয়েকটি ইসলামবাদী সংগঠন “ন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর দি লিবারেশন অজওয়াদ” এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। অক্টোবরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মালির সংকট নিরসনে “আফ্রিকান-লীড ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট মিশন টু মালি” (এ এফ আই এস এম এ) নামে একটি সামরিক মিশন গঠনের অনুমোদন দেয়। ডিসেম্বরের ২০ তারিখ নিরাপত্তা পরিষদ মালিতে “আফ্রিকান-লীড ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট মিশন টু মালি” র সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দেয়। অনুমোদন অনুযায়ী এ এফ আই এস এম এ’র নেতৃত্বে মালি অভিযান হওয়ার কথা থাকলেও দৃশ্যতঃ ফরাসী সৈন্যের তত্বাবধানে সামরিক অভিযানটি পরিচালিত হচ্ছে [৫]।
তোয়ারেগ বি্দ্রোহঃ
মধ্য এবং পশ্চিম সাহারা অঞ্চলের বিস্তির্ন মরুভুমিতে বসবাসরত তোয়ারেগ জনগোষ্ঠি অতীতে বেশ কয়েকবার শাসক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ১৯১৬ সালে তোয়ারেগরা ফরাসী ঔপনিবেশিক শাষনের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ করে। এরপর, ১৯৬০ সালে পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চল কয়েকটি রাষ্ট্রে ভাগ হওয়ার ফলে তোয়ারেগরা পাচঁটি রাষ্ট্রের অধীনে চলে যায়। এতে সাহারা অঞ্চলে তাদের অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। তাছাড়া রাষ্ট্রের অবহেলা এবং অত্যাচারের কারনে তারা বেশ কয়েকবার মালি এবং নাইজারে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ১৯৬২ সালে মালি সরকারের বিরুদ্ধে সংগঠিত বিদ্রোহের পর এই অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদী সংঘাতের সৃষ্টি হয় [৬]।
এই সংঘাত নিরসনে লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। বিশেষ করে ২০০৮-২০০৯ সালে তাঁর মধ্যস্থাতায় মালি ও নাইজার সরকারের সাথে তোয়ারেগদের শান্তিচুক্তি সাক্ষরিত হয়। অবহেলিত এই জনগোষ্ঠিকে গাদ্দাফি চাকরি এবং আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করেছিলেন। যার ফলে অঞ্চলটিতে চলে আসা সংঘাতের সাময়িক সমাধান হয়েছিলো[৭]। লিবিয়া আক্রমনে সময় বিশ্লেষকরা আশংকা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে গাদ্দাফি সরকারের পতন ঘটানো হলে সমগ্র উত্তর আফ্রিকা অঞ্চল অশান্ত হয়ে উঠবে।তাদের সেই আশংকা সত্যি প্রমানিত হয়েছে। গাদ্দাফি হত্যার পর লিবিয়াতে বসবাসরত তোয়ারেগ জনগোষ্টি মালি ও পার্শবর্তী দেশে ফিরে গিয়ে বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহে তোয়ারেগদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর দি লিবারেশন আজওয়াদ [৮] । সংগঠনটি নিজেদের সেক্যূলার দাবি করলেও তাদের সাথে ইসলামবাদী মিলিশিয়া গ্রুপের সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো।কিন্তু সংগঠনটি মিডিয়ার এই অভিযোগ প্রত্যাক্ষান করে আসছে।
ইসলামবাদী মিলিশিয়া গ্রুপঃ
সরকার বিরোধী বিদ্রোহে অংশগ্রহনকারী ইসলামবাদী মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর কয়েকটি মুলত আফ্রিকা ও আরব অঞ্চলের আল-কায়েদার অংগ সংগঠন। আল কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরেব ও মুভমেন্ট ফর ইউনিটি এন্ড জিহাদ ইন ওয়েস্ট আফ্রিকা নামের মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর সাথে লিবিয়ান ইসলামিক ফাইটিং গ্রুপের সাথে এদের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।উল্লেখ্য, পশ্চিমা সামরিক শক্তি ন্যাটো লিবিয়ান ইসলামিক ফাইটিং গ্রুপকে সাথে নিয়ে গাদ্দাফী সরকারের পতন ঘটিয়েছিলো। ফ্রান্স, ব্রিটেইন, ইতালী সে সময় লিবিয়ান ইসলামিক ফাইটিং গ্রুপ কে অর্থ, অস্ত্র ও সামরিক প্রশিক্ষন দিয়েছিলো। বর্তমানে এ গ্রুপের জিহাদীরা সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে[৯]।
অন্যদিকে পশ্চিমা শক্তির ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতার এবং সৌদি আরব মালির ইসলামবাদী মিলিশিয়াদের অর্থায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছে কয়েকটি পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম। ২৩ শে জানুয়ারী ফরাসী সংবাদমাধ্যম “ফ্রান্স২৪” ফরাসী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার উদৃতি দিয়ে বলেছে, কাতার মালির ইসলামবাদী মিলিশিয়া গ্রুপ গুলোকে অর্থায়ন করছে[১০]। ঠিক একি অভিযোগ তুলেছিলো এক্সামিনার ডট কম। গত বছর ৩০শে জুন প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছিলো মালির আল কায়েদা অরগানাইজেশন ইন দি ইসলামিক মাগরেব, আনসার আদ-দ্বীন এর মতো ইসলামবাদী সংগঠনগুলোকে কাতার এবং সৌদী আরব আর্থিক সয়ায়তা দিচ্ছে[১১]। গত মাসের ৪ তারিখে ফরেইন পলিসি জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে থমাস সি মাউন্টেইন মালির ইসলামবাদী মিলিশিয়াদের সৌদী অর্থায়ন করছে বলে উল্লেখ করেছেন[১২]
তাছাড়া আল কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরেব এর শীর্ষ নেতারা আফগান ফেরত মুজাহিদ, যাদের প্রশিক্ষন দিয়েছিলেন সি আই এ।
পুরোনো ফরমূলায় নতুন অঞ্চল দখলঃ
“ইসলামী টেরোরিস্ট” অযুহাতে পশ্চিমাদের রাষ্ট্র দখলের টেকটিসটি নতুন নয়। আফগানিস্থান, সোমালিয়াতে তারা তাদের সৃষ্ট টেরোরিস্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দখল বুঝে নিয়েছেন। ঠিক একিভাবে মালিতেও তাদের সৃষ্ট টেরোরিস্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তাদের এই যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা পুরোনো হলেও দেশ দখলে তারা এখন নতুন পদ্ধতি অনুসরন করছে। লিবিয়াতে তারা অভ্যন্তরীন সমস্যা সৃষ্টি করে দখল বুঝে নিয়েছে, সিরিয়াতেও তারা একি চেষ্টা চালাচ্ছে। সুদানেও তারা একি ফরমুলা ইমপ্লিমেন্ট করে দেশটিকে দুটো রাষ্ট্রে ভাগ করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মালিতে পশ্চমাদের কি ইন্টারেস্ট? কেন তারা মালির মতো দারিদ্র পীড়িত রাষ্ট্রে নিজের কতৃত্ব স্তাপন করতে চাচ্ছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে খুব বেশি গবেষোনার প্রয়োজন নেই। ফ্রান্সের নেতৃত্বে পশ্চমা শক্তির মালি অভিযানের পেছনে মূল কারন দৃশ্যত দুটোঃ
১. খনিজ সম্পদ
২. চীনকে হটিয়ে আফ্রিকা অঞ্চলে পশ্চিমা কতৃত্ব স্থাপন
মালির খনিজ সম্পদঃ
মূল্যবান খনিজ সম্পদের কারনে আফ্রিকা অঞ্চলের প্রতি পশ্চিমাদের আগ্রহ নতুন নয়। উত্তর আফ্রিকার দেশ নাইজার এবং মালির বিপুল পরিমান ইউরেনিয়ামের মজুদ ফ্রান্স ও পশ্চিমাদের নজর এড়াতে পারেনি।সাউথ আফ্রিকা ভিত্তিক গবেষনা প্রতিষ্ঠান কনসালটেন্সি আফ্রিকা ইনটেলিজেন্স এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে মালিতে ৫২০০ টন ইউরিনিয়াম, ১.৩ মিলিয়ন টন আইরন ওরে, ১.২ মিলিয়ন টন বক্সাইট, ৪৬ মিলিয়ন টন কপার, ৪২.২ মিলিয়ন টন ক্যালকেরিয়াস পাথর, ৪ মিলিয়ন টন লিথিয়াম, ৬৫ মিলিয়ন টন ডায়াটমিট, ১.৭ মিলিয়ন টন লীড এবং জিঙ্ক, ৫৩ মিলিয়ন টন হেলাইট মজুদ রয়েছে[১৩]। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সন্ত্রাস নির্মুলের নামে খনিজ সম্পদের উপর কতৃত্ব স্থাপনের জন্য ফ্রান্স এবং অন্যন্য ইয়োরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলো মালিতে সেনা অভিযান পরিচালনা করছেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক নিইল ক্লার্ক মালি অভিযান সম্পর্কে বলেছেন,“গত ত্রিশ বছরে পশ্চিমাদের প্রতিটি সামরিক অভিযানের পেছনে অর্থনৈতিক কারন ছিলো, মালি তার ব্যাতিক্রম নয়”[১৪]।
ঠিক একি ধরনের মন্তব্য করেছেন জার্মান কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশনস এর কেটরিন সৌল্ড। মালি অভিযান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি জার্মান সংবাদ মাধ্যমে ডয়েচ ভেলেকে বলেন, “সাহিল অঞ্চলের খনিজ সম্পদের উপর ফ্রন্সের স্বার্থ রয়েছে, বিশেষ করে-ইউরেনিয়াম এবং জ্বালানী তেল”[১৫]। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের ৮০% বিদ্যুত উৎপাদিত হয় দেশটির ৫৬ টি পারমানবিক বিদ্যূত উতপাদন কেন্দ্র থেকে এবং এই বিদ্যূত উৎপাদন কেন্দ্রগুলো ইউরেনিয়াম নির্ভর[১৬]।
মালিতে “আফ্রিকম” এজেন্ডাঃ
ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মালি অভিযানকে পশ্চিমাদের দীর্ঘ মেয়াদী সামরিক পরিকল্পনার অংশ বলে মনে করছেন। এই দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০০৭ সাল থেকে আফ্রিকা কমান্ড কাজ করে আসছে। পুরো আফ্রিকা অঞ্চলে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কতৃত্ব স্থাপনে আফ্রিকম মালি সহ উত্তর আফ্রিকার বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক তৎপরতা চালিয়ে আসছছিলো। এ সামরিক তৎপরতার উদ্দেশ্য মুলতঃ আফ্রিকা অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক আধিপত্য হ্রাস করে পশ্চিমা কর্পোরেটদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। এ সম্পর্কে সাংবাদিক প্যাট্রিক হ্যানিংসেন রাশিয়া টুডে কে বলেছেন, “ফ্রান্সের সামরিক অভিযান পশ্চিমা কার্পোরেটদের সার্থ রক্ষার জন্য পরিচালিত হচ্ছে। চলমান সামরিক অভিযান আফ্রিকা অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক আধিপত্য কমাতে পশ্চিমাদের সাহায্য করবে”[১৭]।
২০০০ সালের বেইজিং ঘোষনার মাধ্যমে ফৌরাম অন চায়না-আফ্রিকা কোঅপারেশন গঠনের পর থেকে চীনের সাথে আফ্রিকা অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিপুল পরিমানে বৃদ্ধি পায়। ২০১১ সালে চীনের সাথে আফ্রিকা অঞ্চলের বানিজ্যের পরিমান ছিলো ১৬৬ বিলিয়ন ডলার। অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বল্প সুদের ঋন অনুমোদন, আমদানী-রপ্তানী বৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ফলে সমগ্র আফ্রিকা অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক কতৃত্ব স্থাপিত হয়[১৮] চীনের এই অর্থনৈতিক কতৃত্ব পশ্চিমা স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্থ করছিলো বিভিন্ন ভাবে।
গত ডিসেম্বরে আইভরি কৌস্টের রাজধানীতে ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী চীন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেনঃ “French companies must go on the offensive and fight the growing influence of rival China for a stake in Africa’s increasingly competitive markets”[১৯]
আমি লেখার শুরুতে বলেছিলাম পশ্চিমাদের মালি অভিযানটি অন্যান্য অভিযান থেকে ভিন্ন। মালি অভিযান আসলে আফ্রিকা অঞ্চলে পশ্চিমাদের দখলদারিত্বের নতুন অধ্যায়ের সুচনা।লিবিয়া আক্রমনের সময় গ্লোবাল রিসার্চের বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক বলেছিলেন গাদ্দাফীর পতন আফ্রিকা অঞ্চলে পশ্চিমাদের অবাদ বিচরন নিশ্চিত করবে। গাদ্দাফীর মৃত্যুর পর তাদের ভবিষ্যতবানী অনেকটা সত্য প্রমানিত হলো। অতীতে আফ্রিকা অঞ্চলে পশ্চিমাদের কতৃত্ব থাকলেও সম্প্রতি সময়ে চীন এ অঞ্চলে শক্ত অর্থনৈতিক বেল্ট তৈরী করে পশ্চিমাদের এক অর্থে দূরে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর পশ্চিমাদের দখলদারিত্বের গতি যে বেপড়োয়া ভাব নিয়েছে তাতে এশিয়া অঞ্চলের মায়ানমার এবং বাংলাদেশ যে তাদের নজরে নেই তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।
তথ্য সুত্রঃ
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Operation_Serval
২. http://www.defense.gouv.fr/english/content/view/full/202169
৩. http://www.bbc.co.uk/news/world-africa-21029916
৪. http://www.bbc.co.uk/news/uk-21240676
৫.http://en.wikipedia.org/wiki/Timeline_of_the_Northern_Mali_conflict_(2012%E2%80%93present)
৬. http://en.wikipedia.org/wiki/Tuareg_rebellion
৭.http://en.wikipedia.org/wiki/Tuareg_rebellion_(2007%E2%80%932009)
৮. http://www.mnlamov.net/english.html
৯.http://www.globalresearch.ca/al-qaeda-in-the-islamic-maghreb-whos-whos-who-is-behind-the-terrorists/5319754
১০. http://www.france24.com/en/20130121-qatar-mali-france-ansar-dine-mnla-al-qaeda-sunni-islam-doha
১১. http://www.examiner.com/article/qatar-suspected-of-supporting-al-qaeda-mali
১২. http://www.foreignpolicyjournal.com/2013/01/04/mali-wahhabis-and-saudis-following-the-money-trail/
১৩. http://www.consultancyafrica.com/index.php?Itemid=266&catid=82%3Aafrican-industry-a-business&id=565%3Amali-and-its-mining-sector-a-focus-on-gold-while-minerals-are-unexplored&option=com_content&view=article
১৪।http://rt.com/op-edge/mali-intervention-france-assistance-365/
১৫. http://www.dw.de/the-interests-behind-frances-intervention-in-mali/a-16523792
১৬.http://ceasefiremagazine.co.uk/blood-uranium-frances-mali-intervention-terrorism/
১৭।http://www.youtube.com/watch?v=0NZEDsTJZ5k
১৮ http://www.voltairenet.org/article177327.html
১৯ http://www.reuters.com/article/2012/12/01/us-france-china-idUSBRE8B009020121201
সকাল ভাইকে ধন্যবাদ তথ্য
সকাল ভাইকে ধন্যবাদ তথ্য সমৃদ্ধ পোস্টের জন্য। গাদ্দাফির মৃত্যুর দিনে একটা লেখা দিয়েছিলাম মনে আছে কিনা জানিনা, লিবিয়বাসীদের জন্য করুণা প্রকাশ করে। পশ্চিমাদের এই টেকনিক না বুঝার তো কোন কারন নাই। একটার পর একটা খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ তারা এই টেকনিকে দখলে নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করে খাচ্ছে। ইদানিং বাংলাদেশ নিয়েও একই দুশ্চিন্তা হয়। আমাদের খনিজ সম্পদ হয়ত অতো বেশী নেই, কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় পশ্চিমাদের জন্য হট কেক নিঃসন্দেহে। তাই নিজেদের রক্ষার স্বার্থে হলেও জঙ্গিবাদের উত্থানকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠ্যাকাতে হবে।
আতিক ভাই, মন্তব্যের জন্য
আতিক ভাই, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হ্যা আপনার লেখাটার কথা মনে আছে। গাদ্দাফীর মৃত্য আসলে শুধু লিবিয়ানদের জন্য নয় পশ্চিম আফ্রিকার জন্য দুঃসংবাদ। আর বাংলাদেশে সম্প্রতি সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত খুব একটা সুখকর হবে বলে মনে হয়না। ইদানিং কেন যেন মনে হয় আমরা বাংগালীরা দিন দিন অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। আওয়ামীলীগ-বিএনপি আমাদের যেভাবে নাচাচ্ছে আমরা সেভাবে নাচটি। যুদ্ধাপরাধের বিচার,শাহাবাগ, হেফাজত কান্ড, জামায়াত-শিবির ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি সময়ে যা হয়ে গেলো তা আসলে খুব একটা ভালো লক্ষন নয়।
মালির মতো একই ঝুঁকিতে আমরাও
মালির মতো একই ঝুঁকিতে আমরাও আছি। তাই এই বিষয়গুলো সবার জানা দরকার। এই পোস্ট পড়ার আগে মালি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তাই লেখার মান ও বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় লেখাটি স্টিকি করার আবেদন জানাচ্ছি।
এইটা মানতে পারলাম না আতিক
এইটা মানতে পারলাম না আতিক ভাই… 🙁
বাংলাদেশ কিছু সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তবে এখনও এতটা খারাপ হয় নাই।।
আমি তো বলি নাই হয়ে গেছে, তবে
আমি তো বলি নাই হয়ে গেছে, তবে হতে কতক্ষন? আগাম সতর্কতা কি ভালো নয়? যেসব দেশ পশ্চিমা সন্ত্রাসবাদী জুজুর খপ্পরে পড়েছে, ঘটনা ঘটার আগে তারাও কি জানত এমন হবে?
তারিক লিংকন,খারাপ সিচুয়েশন তো
তারিক লিংকন,খারাপ সিচুয়েশন তো এমনি এমনি ক্রিয়েইট হয়না,খারাপ সিচুয়েশন ক্রিয়েইট করা হয়। এখন পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্রের লক্ষ এবং উদ্দেশ্য ঠিক হয়নি। উদ্দেশ্যহীন রাষ্ট্রকে মেনিপুলেট করা সবচেয়ে সহজ। বাংলাদেশে সৌসাল আনরেস্ট সৃষ্টি হওয়ার সমুহ সম্ভবনা আছে। হেফাজতে ইসলামের সো ডাওন কিন্তু তার জলন্ত প্রমান। একবার ভাবুন তো আমাদের মোট জনসংখ্যার ৪০% মানুষ যারা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে তারা সো ডাওন করলে কি হবে?
জিও পলিটিকস এ আমাদের অবস্থান কোথায় তা নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিলো। আপনার এই মন্তব্যটি লেখার আর্জেন্সিটা বাড়িয়ে দিলো। ভালো থাকবেন।
অনেক তথ্য সমেত পোস্ট ।ভাল
অনেক তথ্য সমেত পোস্ট ।ভাল লাগল।অসাধারন লাগল
চমৎকার একটা পোস্ট । এমন
চমৎকার একটা পোস্ট । এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় উপস্থাপন এর জন্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যৎ ভেবেই মানুষকে সচেতন থাকতে হবে এরকম কিছু পুঁজিবাদী ট্রিক সম্পর্কে । আতিক ভাই এর সাথে সহমত পোষণ করে বলছি – লেখার মান ও বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় লেখাটি স্টিকি করার আবেদন জানাচ্ছি ইষ্টিশন মাস্টার এর কাছে । ।
(No subject)
:থাম্বসআপ:
গুরুত্ব বিবেচনায় পোষ্টটি
গুরুত্ব বিবেচনায় পোষ্টটি স্টিকি হবার দাবী রাখে। অসাধারন তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। সকাল ভাইকে এখানে পেয়ে ভাল লাগছে। নিয়মিত হবেন আশা করি।
চেষ্টা থাকবে। আপনাকে পেয়েও
চেষ্টা থাকবে। আপনাকে পেয়েও ভালো লাগছে।ভালো থাকুন
খুবই ভয় এবং আতংকের
খুবই ভয় এবং আতংকের বিষয়।এভাবে চলতে থাকলে নিকটভবিশ্যতে পুরো বিশ্বই একদিন পরিনত হবে নব্য-ওপনিবেষে…আর বর্তমানে বাংলাদেশের যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে সামনের দিনে এই নব্য-ওপনিবেষের বিরুদ্ধে আমাদের স্বাতন্ত্রতা টিকিয়ে রাখার জন্য গৃহযুদ্ধে অবর্তীন হতে হবে…মালীর বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটি সতর্ক বানী হতে পারে।
পৃথিবী একটা বড় ধরনের যুদ্ধের
পৃথিবী একটা বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে এগুচ্ছে। এই যুদ্ধ অনেক কিছু নির্ধারন করে দেবে। আর গৃহযুদ্ধ আসলে আমাদের খারাপ ছাড়া ভালো বয়ে আনবে না। ওয়েস্ট চায় দেশে একটি গৃহযুদ্ধ হোক।
সহজ এবং সোজা কথা একটাই।
সহজ এবং সোজা কথা একটাই। বর্তমান পৃথিবীতে যত সাম্প্রদায়িক হানাহানি তার একটাই কারণ হলো মার্কিনী আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ। যত উগ্র সাম্প্রদায়িক দল এই পৃথিবীতে আছে সবকটাই মার্কিনীদের তৈরী।
দারুণ একটি পোস্ত দেওয়ার জন্য ব্লগার সকাল ভাইকে ধন্যবাদ। আশা করছি নিয়মিত তথ্য সমৃদ্ধ পোস্টে ভরে উঠবে ইস্টিশনের এই যাত্রী থেকে।
ধন্যবাদ সুমিত।
ধন্যবাদ সুমিত।
অনেকদিন পর বাংলা ব্লগে আপনি
:থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ:
অনেকদিন পর বাংলা ব্লগে আপনি লিখলেন। ইস্টিশনে আপনাকে দেখে ভাল লাগল সকাল ভাই।
আফ্রিকার ঘুরে দাঁড়ানোর সূর্য্যটার পতন সেইদিনই হয়েছে, যেদিন গাদ্দাফির মৃত্যু হয়েছে। লিবিয়াবাসী তথা সমগ্র আফ্রিকা একদিন বুঝবে তাদের অঞ্চলে গাদ্দাফির মত একজন লৌহমানব কতটা প্রয়োজনীয় ছিল।
নবী ভাই, সেটাই। লিবিয়ার
নবী ভাই, সেটাই। লিবিয়ার অভিজ্ঞতার পর রাশিয়া এবং চায়না সিরিয়ার ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এই অবস্থানটা লিবিয়া আক্রমনের সময় নিলে আফ্রিকা অঞ্চলটা তাদের হাত ছাড়া হতো না। দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে ঠেকে। ইতোমধ্যে ককেশিয়ান অঞ্চলে ইউএস এবং ন্যাটোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আর বাংলাদেশ স্ট্রেটেজিক কারনে খুব ইমপোর্টেন্ট। বাংলাদেশের সিচুয়েশন খুব তারাতারি বদলাতে থাকবে।
সময়ের অভাবে লেখা হয়না। একটা লেখা রেড়ি করতে আমার লম্বা সময় নিয়ে রেফারেন্স চেক করতে হয়। ইচ্ছে থাকা সত্বেও সময় বের করতে পারিনা।
কোনদিন বাংলাদেশ আক্রমন করে
কোনদিন বাংলাদেশ আক্রমন করে তার ঠিক আসে নাকি? মালি তো হাফওয়ে।