সবাই ওকে গেধী বলে ডাকত।গেধী মানে গাধার ইস্ত্রী লিঙ্গ।ভেবেছিলাম ওটাই বুঝি ওর নাম।ওটা যে ওর নাম নয়,পাড়ার লোকেরা ওকে খেপাতে ওই নাম টা ব্যবহার করতো সেটা বুঝেছিলাম অনেকপরে।আমরা তখন ক্লাস ২ তে পড়তাম।আমাদের পাড়ায় ক্লাস ২ তে পড়া বালিকাদের মধ্যে আমি আর গেধী।অগ্যতা কি আর করা বাছবিচারের কোনো সুযোগ না থাকায় ,স্কুল ছুটি হওয়ার পর গেধী-ই ছিল আমার বাকী সময় এর সঙ্গী।
সবাই ওকে গেধী বলে ডাকত।গেধী মানে গাধার ইস্ত্রী লিঙ্গ।ভেবেছিলাম ওটাই বুঝি ওর নাম।ওটা যে ওর নাম নয়,পাড়ার লোকেরা ওকে খেপাতে ওই নাম টা ব্যবহার করতো সেটা বুঝেছিলাম অনেকপরে।আমরা তখন ক্লাস ২ তে পড়তাম।আমাদের পাড়ায় ক্লাস ২ তে পড়া বালিকাদের মধ্যে আমি আর গেধী।অগ্যতা কি আর করা বাছবিচারের কোনো সুযোগ না থাকায় ,স্কুল ছুটি হওয়ার পর গেধী-ই ছিল আমার বাকী সময় এর সঙ্গী।
আমাদের পারাটা ছিলো কবরস্থানের পাশেই।প্রায় প্রায়-ই বাসার সামনের রাস্তা দিয়া লাশ নিয়া যাওয়া হত। অতটুকু বয়স- এ তখনও বোঝার সাধ্যি হয়নি লাশ কাকে বলে।তাই মাঝে মাঝে যখন খাটিয়ার মধ্যে একটা কুলবালিশের মত দেখতাম, ছোট্ট মনে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খেত।যেহেতু গেধী-ই ছিলো আমার একমাত্র সঙ্গী তাই উপীয়ন্তর না দেখে একদিন বিজ্ঞ গেধীকে প্রশ্ন করেছিলাম-
আচ্ছা গেধী মানুষ মরে কোথায় যায় ?
গেধীর ঝটপট উত্তর -কেন জানো না কবরস্থানে যায় .
কবরস্থানে যাওয়ার জন্য সাদা কাপড় দিয়া কুলবালিশ বানাতে হবে কেন ?
গেধীর বিরক্ত মাখা উত্তর -এটাও জানো না ,মানুষ মরলে দুইবার কবর দিতে হয় ,
একটা কাপড়ের কবর আরেকটা মাটির।
কবরস্থানে যে কবর গুলো দেখতে পাও ঐগুলো মাটির আর কোলবালিশের মতটা কাপড়ের।
আচ্ছা তবে কবরস্থান থেকে তারপর কোথায় যায় ?
কেন আল্লাহর কাছে …..
আল্লাহ ওই কবর গুলো দিয়ে কি করে ?
আকাশে ঝুলিয়ে রাখে ,রাতে যে তারাগুলো দেখতে পাও ঐগুলো সব কবর ….
তবে কি আমরাও একদিন ঐরকম তারা হয়ে যাব।
এবার গেধীর চাতুরী মাখা উত্তর, আমি হবো না ভাই ,তুমি হলে হও গিয়ে …
পাল্টা প্রশ্ন রেখে আবারও জিগ্যেস করলাম কেন তুমি হবে না
কারণ গেধী রা তারা হয় না ,ওরা এখানেই থাকে ..
তবে আমিও গেধী হব ,আমি তারা হব না।
গেধী এবার আকাশ থেকে হঠাত উল্কা পড়লে লোকজন যেমন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি অনেকটা সেরকম করে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে।হয়তবা সে বিস্ময় এর মানে “লোকজন যে আমাকে কেন গেধী ডাকে আর তোমাকে কেন ডাকেনা তাই বুঝিনা …!!!
এই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরে একদিন সকালে খাটিয়ার মধ্যে আবার একটি কোলবালিশ আমাদের পাড়ায় হাজির।এই কোলবালিশ আর কারো নয় , গেধীর বাবার কোলবালিশ।যাদের সরকারী কলোনীতে থাকার অভিজ্ঞতা আছে তারা হয়তো জেনে থাকবেন প্রতিটি সরকারী বিল্ডিং এর নীচতলার সাথে লাগোআ একটা ছোট্ট সিড়ি ঘড় থাকে,সেখানেই আমাদের কলোনীর অধিকাংশ মৃত মানুষদের কে গোসল দেআ হতো।যদিও গেধীর বাবার গোসল আমি দেখিনি। কারণ সেদিন মা আগেভাগেই আমাকে স্কুল পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।হয়তবা সেই দৃশ্য আমার ছোট্ট হৃদয়-এ কি গভীর ক্ষত ফেলত মা সেটা আগে ভাগেই টের পেয়েছিলেন।সেদিন সারাটাদিন স্কুল-এ ছিলাম বটে কিন্তূ মনটা পরে ছিলো গেধীর বাবার জন্য।
স্কুল থেকে ফেরার পর কাধের ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দিয়ে পরি কি মরি গেধীর বাসায় দে ছুট।বেলা প্রায় শেষের পথে, গেধীদের বাসায় ও লোকজনের আনাগোনা কম। গেধীকে দেখলাম এক কোনায় পা ছড়িয়ে দিয়ে ৫ গুটি খেলছিলো।
ছুটে গিয়ে গেধীকে জিগ্যেস করলাম গেধী তোমার বাবা কোথায় ?
গেধী যেমন খেলছিলো তেমনী খেলা চালিয়ে গেলো,একটিবারের জন্যও আমার দিকে ফিরে তাকালো না।
গেধী যেন শুনতে পায়নি এমন ভেবে আমি আবারও প্রশ্ন করলাম আমি জানি তোমার বাবা কবরস্থানে।
গেধী এবার আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে বললো -হুহ জানি না ..
আমি জানি তোমার বাবা কে আজ আকাশে ঝুলিয়ে রাখা হবে ,তখন আমরা দেখতে পাবো।
গেধী এবার আমার কথা কর্ণপাত-ই করলো না।
আসলে বিপদের ওই চরম মুহুর্তে গেধী যে আমাকে কি ভিশন ভাবে পাশে চেয়েছিলো সেটা তখন না বুঝলেও আজ বেশ বুঝতে পারছি।
যা হোক এই ঘটনার পর প্রায় তিন কি চার মাস পর্যন্ত গেধীর সাথে আমার আর কোনো কথাই হলো না।
গেধী কে প্রায় ভুলতে বসেছি এমনি এক গ্রীষ্মের দুপুরে আচমকা গেধী কোথা থেকে যেন হাজির হয়ে দ্রুম করে আমার পিঠে একটা কিল মেরে বসলো, তারপর কান টেনে নিয়ে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো –
বাপ্পী কবরস্থানে যাবা ?
কবর দেখতে ……..
ব্যথা যতটা না পেয়েছিলাম ব্যথার ওষুধ পেয়ে তারচে দিগুণ খুশী হয়েছিলাম।
তাই কাউকে কিছু না বলে চুপি চুপি আমি আর গেধী চললাম কবরস্থানের উদ্দেশ্য।
ছোট বড় নানান ধরনের কবর দেখে মনটা তখন এমন বিষিয়ে উঠেছিলো যে সেইদিনই সিদ্ধান্ত নিয়াছিলাম তারা হই কিংবা গেধী হই আর কখনও এদিক পথ মারাব না।এতসব নানান চিন্তায় মনটা যখন ঘুরপাক খাচিছলো এমনি সময় খেয়াল করলাম গেধী আমার পাশে নেই।
পাঠক সহজেই বুঝতে পারছেন আমার অবস্থা তখন ছেড়ে দে মা পালিয়ে বাচি …!!
ওমা সে কি …পালাবো কোথায় !!!! পালানোর জায়গা পেলেতো ,চারদিকে শুধু কবর র কবর।
এমনি সময় আল্লাহ সহায় হলেন,আমি গেধীর আওয়াজ পেলাম একটা ডালিম গাছের নিচে ,কার সাথে যেন ঝগড়া করছিলো ….
পড়ন্ত বিকেলে ডালিম গাছের নিচটা যতটা না অন্ধকার হওয়ার কথা মনের সব উল্টাপাল্টা চিন্তা অন্ধকার কে যেন আরো ঘনীভূত করে দিয়াছিলো।
আবছা আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেলাম গেধী একটা ভাঙ্গা কবর জরিয়ে চিত্কার করে বলছে দিব না, দিব না আমি আমার বাবার কবর কিছুতেই ভাঙ্গতে দিব না।(জেনে রাখা ভালো গেধীর বাবা ছিলেন একজন সরকারি অধস্তন কর্মকর্তা। হঠাত করে স্বামী মারা
যাওয়ায় গেধীর মার তিন বেলা ভাত জুটানই হিমসিম খাওয়ার অবস্থা আবার স্বামীর কবর সংরক্ষন করার জন্য মাসে মাসে বাড়তি খরচা
সেটা যেন বিলাসিতা।অবস্থা এমনই যে-যে গিয়েছে সেতো গিয়াছেই যারা বেচে আছে তাদের প্রাণ সংরক্ষণ করাটাই জরুরী ).যা হোক চিত্কার চেঁচামেচির এক পর্যায় গেধী ডালিম গাছের নিচে থাকা লোকটির চোখে এক দলা মাটি ছুড়ে দিয়ে হাতে করে কি যেন একটা শক্ত বস্তু নিয়ে পরি কি মরি দে ছুট।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি যেন বধির ,সপ্নে দুঃসপ্ন দেখলে হতভাগাদের যেমন পা নরাবার ও সামর্থ্য থাকে না আমার দশাও তেমনি।
এদিকে গেধী চিত্কার করছে বাপ্পী দৌড়াও, পালাও পালাও ধরে ফেলল তাড়াতাড়ি ……….
অবশেষে একটা নিরাপদ জায়গায় যখন পৌঁছেছিলাম গেধির হাতের সেই বস্তুটির দিকে অপলক চেয়েছিলাম কারণ
সেই বস্তুটি আর কিছু না গেধীর বাবার মাথার কংকাল …………..
টাঙাইলারা আন্চলিক ভাষায়
টাঙাইলারা আন্চলিক ভাষায় মেয়েদের গেদি বলে ।
যাই হোক, ঘটনাটি অনেকটাই মোলায়েম ট্রাজেডিক ।
ধণ্যবাদ আপনার চমৎকার কমেন্ট র
ধণ্যবাদ আপনার চমৎকার কমেন্ট র জন্য।ঘটনাটি মোলায়েম ট্রাজেডিক কিনা জানি না তবে এখনো মাঝে মাঝে অবসরে যখন গেধীর কথা ভাবি ভেতরে কেমন যেন সুই খোচানো ব্যাথা অনুভব করি।
এটা কি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা?
এটা কি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা?
অবাস্তব স্বপ্নচারী….আসলে কি
অবাস্তব স্বপ্নচারী….আসলে কি জানেন জীবনের সোন্দর্য ,সার্থকতা ,বর্নিলতা সমস্তই নির্ভর করে আপনার চারপাশের পারিপার্শিক অবস্থার উপর ।ধরুন গল্পটা যদি এমন হতো গেধি অনেক বিত্তশালী পরিবারের মেয়ে তবে কি জীবন সম্পর্কে আপনার অনুভূতি এমন হতো?দৃশ্যপট পরিবর্তনের সাথে সাথে জীবনের মানেরও পরিবর্তন হত বৈ কী …………
(No subject)
:কনফিউজড:
(No subject)
:নৃত্য: :নৃত্য: :নৃত্য:
অচেনা কিছু কষ্ট থাকে মানুষের
অচেনা কিছু কষ্ট থাকে মানুষের জীবনে। সেগুলি সবসময় সবার কাছে ধরা দেয় না। কিন্তু যখন ধরা দেয় তখন আর দুঃখের শেষ থাকে না। কোমল মনের ছোট্ট মেয়েটির মনের কষ্টটাকে হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি করলেই স্বজন হারানোর কষ্টটা আমাদের হৃদয় কেও স্পর্শ করে যায়। 🙁
ধন্যবাদ নীল দুঃখ
আপনার এই
ধন্যবাদ নীল দুঃখ
আপনার এই হৃদয় নিংরানো উপলব্দি আমার মনের কথারই শামিল মাত্র৷ শুনলে অবাক হবেন এইত সেদিন পর্যন্ত পত্রিকায় কিংবা পারায় ,আত্তীয়সজন কিংবা বন্ধুবান্ধব কারো মৃত্যু সংবাদ শুনলে মনে হত “ও আচ্ছা একজন মানুষ্ মারা গিয়াছে “মোটের উপর এইটুকুই৷ অনুভুতি যাও হতো খুব সামান্য সময়ের জন্য৷ আসলে আমার এই অনুভূতিহীন অনুভুতি সারাতে প্রকৃতিও খুব বেশি সময় নেইনি ৷ বেপারটা অনেকটা এরকম হঠাত করে আপনার সামনে যদি বোমা বিষ্ফোরিত হয় খুব বেশি সৌভাগ্যবান হলে আপনি তাত্ক্ষণিক ভাবে আঘাত্প্রাপ্প না হলেও বাসায় গিয়ে টের পেলেন কানে কিছুই শুনছেন না ৷তখন আপনার নিজেকে যে পরিমান অসহায় মনে হবে সেটা কোনো অংশেই সেই আঘাত্প্রাত মানুষটির চে েয় কম নয়৷ যা হোক বাবা যেদিন মারা গেল সেদিন পর্যন্ত কিছুই মনে হইনি কি হারালাম ……আর এখন থাক সেটা না হয় নাইবা শুনলেন ….
তোমার এই লেখাটা আগেই পড়া আছে
তোমার এই লেখাটা আগেই পড়া আছে আমার । ওখানে করা কমেন্টটা একটু এডিট করে দিলাম –
” যেহেতু, জীবন কাহিনী তাই সাহিত্য বিচার এখানে করছিনা । তবে জীবন কাহিনী হোক আর যাই হোক যার ভেতরে সাহিত্যবোধ আছে তার লেখায় সাহিত্যের রস না থেকে পারেনা । তোমার এই লেখাতেও আছে ।
কয়েকটি বাক্য বেশ চমৎকার ! যেমন …১ ” এটাও জানো না ,মানুষ মরলে দুইবার কবর দিতে হয় ,একটা কাপড়ের কবর আরেকটা মাটির।” ।
২। ,রাতে যে তারাগুলো দেখতে পাও ঐগুলো সব কবর ” ।
৩।” আমি জানি তোমার বাবা কে আজ আকাশে ঝুলিয়ে রাখা হবে ,তখন আমরা দেখতে পাবো ”
৪। ” পড়ন্ত বিকেলে ডালিম গাছের নিচটা যতটা না অন্ধকার হওয়ার কথা মনের সব উল্টাপাল্টা চিন্তা অন্ধকার কে যেন আরো ঘনীভূত করে দিয়াছিলো” ।
সবশেষে, তোমাকে নিয়মিত লেখার আহবান জানাচ্ছি ।
লেখাটা চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো।
লেখাটা চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো। ভালো লিখেছেন তো! রাহাত ভাইয়ের সাথে একমত।