গতপরশু সন্ধ্যার একটু আগে বাসায় ফেরার সময় দেখলাম সাত আটজন ‘ইদুর’ সাইজের ছেলে গলা ফাটিয়ে ‘হাতি’ ‘হাতি’ বলে চেচাচ্ছে। পরে খেয়াল হলো নির্বাচন সমাসন্ন, ‘হাতি’ মার্কার প্রচারের জন্যই এই ‘অভোটারদের’ প্রানান্ত চেষ্টা। উৎসুক হয়ে কথা বলতে গেলাম তাদের সাথে, সামনে দাড়িয়ে থামালাম সবাইকে! ৮-১০ বছরের মধ্যে বয়স, মায়াকাড়া চেহারা সবকটার। চেহারায় ক্লান্তির বদলে একটা তৃপ্তির ছাপ আছে! জিজ্ঞেস করলাম কার নির্বাচন করছে তারা! সাইজে সবচেয়ে যে ছোট সে এগিয়ে এলো সামনে! এটাই মনে হয় দলনেতা। মুখে গাম্ভীর্য্য ও বিরক্তির অদ্ভুত মিশেল এনে সে জবাব দিল,
-‘হাতি মার্কা, অমুক সাবের’!
-তোমাদের লেখাপড়া নেই?
গতপরশু সন্ধ্যার একটু আগে বাসায় ফেরার সময় দেখলাম সাত আটজন ‘ইদুর’ সাইজের ছেলে গলা ফাটিয়ে ‘হাতি’ ‘হাতি’ বলে চেচাচ্ছে। পরে খেয়াল হলো নির্বাচন সমাসন্ন, ‘হাতি’ মার্কার প্রচারের জন্যই এই ‘অভোটারদের’ প্রানান্ত চেষ্টা। উৎসুক হয়ে কথা বলতে গেলাম তাদের সাথে, সামনে দাড়িয়ে থামালাম সবাইকে! ৮-১০ বছরের মধ্যে বয়স, মায়াকাড়া চেহারা সবকটার। চেহারায় ক্লান্তির বদলে একটা তৃপ্তির ছাপ আছে! জিজ্ঞেস করলাম কার নির্বাচন করছে তারা! সাইজে সবচেয়ে যে ছোট সে এগিয়ে এলো সামনে! এটাই মনে হয় দলনেতা। মুখে গাম্ভীর্য্য ও বিরক্তির অদ্ভুত মিশেল এনে সে জবাব দিল,
-‘হাতি মার্কা, অমুক সাবের’!
-তোমাদের লেখাপড়া নেই?
-‘আছে, এহন আম কাডোলের ছুটি’।
বুঝলাম গ্রীস্ম কালীন ছুটিতে এরা ‘পার্ট-টাইম’ নির্বাচনি কাজে লেগেছে। সবার পক্ষে সে আরো জানালো ছুটির দিন বলে ওরা এখন মক্তবে যায় বিকেলে। সেখানে হাজিরা দিয়ে মাঠে নেমে পরেছে সবাই। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম কি দিয়েছে তাদের এই মিছিল করার জন্য! জবাবে বলল,
-‘চা-বিস্কুট, হাইঞ্জাবেলা (সন্ধ্যা বেলা) আবার দিব’!
-টাকা দেয়নি কোন?
প্রশ্ন শুনে এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি শুরু করল সবাই, মনে হলো এলিয়েনদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি তাদের, বুঝতে পারছে না কিছু। দলনেতা ঠোট বাকিয়ে মাথা ঝাকাল, মানে পায়নি! এদের কাজে আর বাধা দিতে মন চাইল না। তবে মনে একটা ধাঁধা উঁকি দিল, এরকম সস্তা প্রাচারণা চালিয়েও কেন কোন প্রার্থীই কোন নির্বাচনেই নির্বাচনি বাজেট ‘ঠিক’ রাখতে পারেন না?
ওদের পেছনে ফেলে বাড়ির দিকে হাটা শুরু করলাম। কিছুদূর যেতেই পেছন থেকে একটা মাইক্রোবাস এসে আমার থেকে একটু আগে গিয়েই থেমে গেল। গাড়ি থেকে একে একে কুড়ি পচিশ জন ‘ষন্ডা মার্কা’ ছেলে নামল। বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে, প্রায় সবার পড়নেই চোঙ্গা জিনস আর বাহারি রঙের টি শার্ট, চুল কায়দা করে ঘাড়ের দিকে মোরগের লেজ’র মত ছাটা। মুখে ব্যাস্ততা, দায়ীত্বপরায়নতা, উৎফুল্লতা ও গাম্ভীর্যের মিশ্রণে একটা মেকি ছাপ! এদের কাউকে এলাকায় বা অন্য কোথাও এর আগে দেখেছি বলে মনে পরে না। তবে বুঝা গেল এরাও নির্বাচনি কাজে এলাকা সফরে এসেছে! সবাই গাড়ি থেকে নেমে সামনের দিকে হাটা শুরু করল দলবেধে।
একটু অবাক হলাম যে আমাকে কিছু বলেনি নির্বাচনের ব্যাপারে, মানে ‘একটা ভোট দিয়েন অমুক ভাইকে’ টাইপের কোন আহ্বান, বা অযথাই বিনয়ে গলে কুঁজো হয়ে যাওয়া, কিছুই না। সাথে খুশি হলাম যে এরকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হলো না। তাবলীগ জামাতের নামাজের জন্য প্যানপ্যান আর ভোটের সময় ভোট ভিক্ষা, দুটাই সমান বিব্রতকর আমার জন্য, সবাই একটা জবাব আশা করে, এবং সেটা তাদের মন:পুত না হলে বিরাট সমস্যা। দুটাকেই সবসময় অদ্ভুত ‘মুচকি’ হাসি দিয়ে সামাল দিযেছি, যে হাসির অর্থ ‘স্থান’, ‘কাল’ ও ‘পাত্র’ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন, যে যেভাবে খুশি ধরে নেয়।
আগের ‘কঁচি কাঁচা’দের করা প্রশ্নগুলো এদেরও করব ভেবেছিলাম। অবশ্য এদের চেহারা দেখে তা ভুলে গেলাম। জানা হলো না এরা কি পেয়েছে, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা সেটা হলো একটা মাইক্রোবাসে এতগুলো লোক উঠল কি করে? কতটা অধ্যবসায় ও ত্যাগের মানসিকতা থাকলে তা করা সম্ভব?
নির্বাচনি প্রচারণায় শিশুদের ব্যাবহার করা নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে জানতাম, সেটা কি কোন সংশোধনী দ্বারা বাতিল করা হলো নাকি? নাকি মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘ঈশ্বর’র মত আইন শুধু উন্নত এলাকাতেই কার্য্যকর? আইনে যাই থাক, এই অবুঝ শিশুরা যে নিজেরা ব্যাবহৃত হচ্ছে বার দুয়েক ‘চা-বিস্কুটের’ লোভে সেটা জানার মত বয়সও এদের হয়নি। বড়দের অনুকরণে এরা একটা কিছু করছে সে আনন্দেই এদের মুখ আনন্দে ঝলমল করছে। এক মাইক্রোবাসে ২০-২৫ জন বসা দলের কেউ কেউ হয়ত বিভিন্ন কাজের টেন্ডার বাগিয়ে জীবনে একটা গতি করবে, ওদের সেই আশাও নেই। এরা নিশ্চিতভাবে এটাও জানে না যে এইসব ‘হাতিরা’ নির্বাচনে জিতে আরো বড় ‘হাতি’ হবে আর ওদের ‘ইদুর’ করেই রাখবে সারাজীবন।
কোন গুলা ধাড়ি ইঁদুর আর কতগুলা
কোন গুলা ধাড়ি ইঁদুর আর কতগুলা মিকি মাউস আরকি।
ধাড়িগুলো এক রকমে পার পেয়ে
ধাড়িগুলো এক রকমে পার পেয়ে বেঁচেবর্তে থাকে, বিপদে পরে ‘মিকি মাউস’ গুলো!
(No subject)
:ক্ষেপছি: :মাথানষ্ট: :মাথাঠুকি:
(No subject)
:মাথানষ্ট: