সোনারবানের সোনা মিয়া খবর পাঠিয়েছে, সে সারেন্ডার করতে চায়। বড় ভাইয়ের তাবুতে কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা গোল হয়ে বসে সোনা মিয়ার সারেন্ডারের ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করছে। সে তাঁদের টার্গেট এবং তাকে হত্যা করা হবে, এ খবরটা ভালোভাবেই পৌঁছে গেছে তার কাছে। আর সে কারনেই মুসলিম লীগার শান্তিবাহিনীর সদস্য সোনা মিয়া খবর পাঠিয়েছে সারেন্ডার করবে বলে। সোনা মিয়া একজন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। মাতব্বর ব্যক্তিও। তার মত লোক হাতে থাকলে ভেতরগড়ের দক্ষিণাঞ্চল, তালমা নদীর এ-পার পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণটাই মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এসে যাবে। শুধু তাই নয়, সোনা মিয়া আর তার লোকজনদের সাহায্য নিয়ে শত্রু এলাকার অনেকদুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে, অমরখানা পঞ্চগড়ের মাঝ বরাবর শত্রুর ঘাঁটি জগদলহাটের ওপর আঘাত হানা যাবে। আক্রমনের গতিও করা যাবে ক্ষিপ্র। সুতরাং সিদ্ধান্ত হল সোনা মিয়ার সারেন্ডার গ্রহন করা হবে। আলোচনা শেষে সারেন্ডারের স্থান ও সময় ঠিক করা হল। স্থানটা হল বাংলাদেশ-ভারতীয় সীমান্তের উঁচু গড়। পরদিন সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে সোনা মিয়াকে সেখানে আসতে হবে।
জাব্বার ভাই, পিন্টু, অহিদার আর মাহবুব আলম, এ চারজন নির্ধারিত সময়ে গড়টার উপরে উঠে এল। ওরা এল গড়ের দক্ষিন দিকের ঢালু প্রান্ত দিয়ে। ওদের দেখে মাহবুবরাও এগুতে শুরু করলো ওদের লক্ষ্য করে। লম্বা চওড়া আর শক্ত কাঠামোর শরীর এবং উজ্জ্বল গায়ের বর্ণের সোনা মিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিতে হলনা। অনেকটা দৌড়ে এসে জাব্বার ভাই, পিন্টু, অহিদার আর মাহবুব এর সাথে হাত মিলালো সে।
এই সেই সোনা মিয়া – পাকবাহিনীর বড় রকমের দালাল হিসেবে সে পরিচিত, যাকে কদিন আগে মাহবুবরা হত্যা করতে গিয়েছিলো। সে এখন গেরিলাদের হাটের মুঠোয়। সোনা মিয়ার মনের ভিতর প্রচণ্ড ভয় এবং সন্ধিগ্ধ মনোভাব এই মুহূর্তে সে লুকাতে পারছেনা। মুখখানা কিছুটা ফ্যাকাশে, ঘন ঘন ইতিউতি তাকাচ্ছে। আর ঘামছে ভীষণভাবে। গামছাটার খুঁট দিয়ে মুখ মুছছে বারবার।
– কেমন আছেন সোনা মিয়া? মাহবুব মুখ খুলল।
– ভালো, আপনেরা?
– ভালো। সারেন্ডার করবেন?
– জি।
– সত্যিই সারেন্ডার করবেন?
– জি, সত্যি।
– ওদের সাথে আর যোগাযোগ রাখবেন না?
– জি না। সোনা মিয়ার কণ্ঠে দৃঢ়তা।
সোনা মিয়ার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাহবুব জাব্বার ভাই, পিন্টু আর অহিদার দিকে তাকালো। তাঁদের চোখে সম্মতির ইঙ্গিত।
-ঠিক আছে সোনা মিয়া, হাত মেলান, আপনার সারেন্ডার গ্রহন করা হল।
সোনা মিয়া সবার সাথে এক এক করে হাত মেলালো। আর বলতে লাগলো, আমাকে বিশ্বাস করে দেখেন, আমি কখনো বেইমানি করমু না, বিশ্বাসঘাতকতা করমু না। তারপর সে একে একে বলতে লাগলো তার সারেন্ডার করার পিছনের কাহিনী-
সে নিজে একজন মুসলিম লীগার, এতে কন সন্দেহ নেই। পিস কমিটিতে তার নাম আছে, এটাও ঠিক। এতদিন সে পাকিস্তানের পক্ষে দালালি করেছে, তাও সে অস্বীকার করে না। পাক আর্মি তার বাড়িতে এসেছে কয়েকবার। সে নিজেও পাকিস্তানে বিশ্বাস করতো। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে তার বাড়িতে খান সেনারা এসেছিলো। প্রায় ১২-১৩ জন। সে তাঁদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করেছে। গাছ থেকে ডাব পেড়ে দিয়েছে। খাসি জবাই করে পোলাও-কোর্মা করে খাইয়েছে। দুটো খাসি আর এক ডজন মুরগি যোগাড় করে দিয়েছে। কিন্তু খান সেনারা তাতেও খুশি হয় নি। তারা বাড়ির ভিতরে ঢুকেছে, তার শোবার ঘরে ঢুকেছে। সেখানে গিয়ে তারা পেয়েছে তার ছোট বউকে। পেয়েছে অন্যান্য ঘরেও লুকিয়ে থাকা অন্য আর বউ-ঝিদের। আর পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে তাদের। তার বউকে ধরার সময় সে বাধা দিতে গিয়েছিলো। তখন খান সেনারা তাকে প্রচণ্ডভাবে প্রহার করেছে। এ পর্যন্ত বলে সোনা মিয়া কেঁদে ফেলে ঝরঝর করে। গামছা দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সে সে বলে, ঘরের ইজ্জত গেলে আর কি থাকে বলেন?
সোনা মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকে, আমার কর্মের ফল আমি পাইছি। পাপীদের সাথে থেকে আমিও অনেক পাপ করছি। আমার পাপের শাস্তি আমি পাইছি। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাভিক্ষা চাই, প্রান ভিক্ষা চাই। ঐ পাকিস্তানী কুত্তা আর শয়তানের বাচ্চাদের সাথে আর নয়।
এ ঘটনা কিন্তু শুধু সোনারবানের সোনা মিয়ার একার নয়। এমন ঘটনা ঘটেছে সারা বাংলাদেশের অসংখ্য সোনা মিয়াদের সাথে। অতঃপর তারা শূয়রের সাথে সহবাসের ফতোয়াকে অস্বীকার করে জয়বাংলার জন্য কাজ করেছে।
এ ঘটনা কিন্তু শুধু সোনারবানের
অসাধারন । :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ:
ভালোই…
ভালোই… :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ:
ভালো
ভালো
(No subject)
:থাম্বসআপ:
এ ঘটনা কিন্তু শুধু সোনারবানের
এ ঘটনা কিন্তু শুধু সোনারবানের সোনা মিয়ারএকার নয়। এমন ঘটনা ঘটেছে সারা বাংলাদেশের অসংখ্য সোনা মিয়াদের সাথে। অতঃপর তারা শূয়রের সাথে সহবাসের ফতোয়াকে অস্বীকার করে জয়বাংলার জন্য কাজ করেছে
:bow: