যারা আশরাফুলকে নিয়ে হতাশ তাদের হতাশার কারন এই আশরাফুলদের দিয়ে মাঝে মাঝে আনন্দের উদযাপন, কোন একটা দেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম জিতে গেলে মিছিল নিয়ে বের হয়ে যাওয়া পাগলা সমর্থকদের আনন্দ আর আকাশের মত আবেগের মূল্য এরা বোঝেনা। সেটা তাদের দোষ না। দেশকে ভালবেসে খেলতে নামেনা ওরা। মূল্যবোধের শিক্ষার অভাব ওদের কখনই ভাবায়নি।একজন দুইজনের দুর্নীতির কারনে একটা খেলা কখনই দুষ্ট হতে পারেনা। সেটা ফুটবল হোক কিংবা ক্রিকেট। দুর্নীতি বিষয়টি ক্যান্সারের মত সব যায়গায় আছে। কোন একটি খারাপ কাজের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির শিক্ষা, মূল্যবোধের চর্চার অভাবে এই ক্যান্সার বাড়তেই থাকে। হ্যান্সি ক্রনিয়ে, আজাহার উদ্দিনদের ম্যাচ ফিক্সিং প্রমানিত হলে অনেক বন্ধুদেরই বলতে শুনেছি “ধুর আর ক্রিকেট দেখুম না।” আসলেই তাই। ক্রিকেটের দেবতুল্য এই দুই মানুষের দুর্নীতি সারা পৃথিবীতে কত দর্শককে হতাশ করেছে তার হিসেব নেই।
বিষয়টি হল যেকোনো একটি খেলা যদি চরম ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত হয় তাহলে টাকা নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে আসতে থাকে। খেলা হল খেলা। শরীরের সুস্থতার জন্য, আনন্দলাভের জন্য খেলাধুলা হওয়ার কথা অন্যতম বড় মাধ্যম, কিন্তু তা হয়নি। ক্রিকেট হয়েছে ব্যবসার উপাদান। কিছু লোকের টাকা কামাইয়ের উৎস। কিছু খেলোয়াড়দের ধনী হয়ে উঠার প্রধান হাতিয়ার। দেশপ্রেম ওখানে কাজ করেনি। আশরাফুলরাও নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে টাকা কামিয়েছে। আশরাফুলরা নৈতিকতা বিসর্জন দেয়নি। কারন সেটা তাদের ছিলই না। দেশপ্রেম, নৈতিকতা, মূল্যবোধের শিক্ষার অনেক আগেই তারা ক্রিকেট শিখেছে। সেগুলো বাদেই দিব্যি খেলেছে, বহু দেশ সফর করেছে। মূলত পুজিবাদের হাতে সঁপে দিয়েছে নিজেদের।
দুর্নীতি ছাড়া পুঁজিবাদ চলতে পারেনা। এটা অসম্ভব। মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মত পুঁজিবাদের জরুরী অঙ্গ হল দুর্নীতি, ঘুস, পারসেন্টেজ, গাড়ি, বাড়ি, উপঢৌকন। একটা উন্নয়ন মূলক প্রজেক্ট এই উপাদান গুলো ছাড়া হয়েছে এই প্রমান গত ৪২ বছরে কেউ দিতে পারবেনা। ফলে যে খেলাটিই পুঁজিবাদের খপ্পরে পড়বে তাতেই সে পরিমান দুর্নীতি থাকবে, ঘুস থাকবে, পারসেন্টেজ থাকবে। ফলে তাতে অংশগ্রহন করা লোকজনেরা চাইলেও এড়িয়ে চলাটা খুব কঠিন। অনেক সময় তাদের সাথে তাল মেলাতে না পারলে অনেককেই ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয়েছে এমন নজির কম নয়।
বাংলাদেশে আনন্দ করা, আনন্দ দেয়ার বিচারে ফুটবলের ধারে কাছেও ক্রিকেট কোনদিন ছিল না। অথচ স্রেফ ব্যবসা কম হয় বলে বাংলাদেশের ফুটবলে বিনিয়োগ কম, অ্যাকাডেমি নেই, ভাল কোচ পাওয়া যায়না, মাঠ নেই, খেলোয়াড়রা বেতন পায়না। ৭৫ থেকে ৮০/৮৫ সাল পর্যন্তও বাংলাদেশের ফুটবল যে মানে ছিল তা শুধুমাত্র রাষ্ট্রের অবহেলায় আজকের মানে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু যদি যথাযথ বিনিয়োগ ফুটবলে করা হতো তাহলে আনন্দ লাভের হিসাব বাদ দিলেও ক্রিকেটের চেয়ে অনেক বেশী মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করতে পারত, ক্রিকেটের চেয়ে অনেক বেশী মানুষের কর্মসংস্থান হতো এবং ক্রিকেটের চেয়ে অনেকগুন বড় ইন্ডাস্ট্রিতে পরিনত হতো। ক্রিকেটের প্রতি কোন বিদ্বেষ নাই কিন্তু একা ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি দেখলে মনে হয়, বাংলাদেশে কি এই একটা মাত্র খেলা? হাডুডু, ফুটবল, হকি, এথলেটিক্স এরকম সব জায়গাতে মনোযোগ দিলে সবজায়গাতেই ভাল ফল আসতে পারত। শুধু ক্রিকেট নিয়ে এই বাড়তি আহ্ললাদির কারন দুর্নীতির মাধ্যমে বেশী টাকা কামাই ছাড়া আর কিছুনা।
আশরাফুলরা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অন্য অনেক দুর্নীতির বিচারহীনতা ওদেরও সাহসী করে তোলে দেশের ইজ্জত হনন করার জন্য। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে কেউ যদি দেশপ্রেমিক উপাধি পেতে পারে তাহলে আশরাফুলরা অনুপ্রাণিত হবেনা কেন! আশরাফুলরা সাহসী হবে না কেন!! আশরাফুলদের স্পট ফিক্সিং এর ঘটনা উপর থেকে নিচে পর্যন্ত আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকার একটা স্ফুলিঙ্গ মাত্র। পুরো দেশ এইভাবে দুর্নীতির বুলেটে ঝাঁজরা হয়ে আছে। মাঝে মাঝে দুই একটা বুলেট শরীর ভেদ করে বেরিয়ে আসে। সেটা দেখে চারপাশের অনেকে চিৎকার চেঁচামেচি করেন। কিন্তু বুলেট আসা বন্ধ হয়না। তাই একা আশরাফুলদের দুর্নীতিতে দুঃখ পাইনা। যেদেশে সবাই পাগল সেখানে ভাল মানুষের দাম নাই। সেখানে পাগলামিটাই স্বাভাবিক। ভাল থাকাটা সেখানে অন্যায়। সেভাবে বাংলাদেশ এখন দুর্নীতিটাই স্বাভাবিক ঘটনা। তাই আশরাফুল এখানে নির্দোষ। আশরাফুলের উপর অন্যায় হয়রানী বন্ধ করে তাকে দেশপ্রেমিক উপাধি দেয়ার অনুরোধ জানাই ।
(No subject)
:মানেকি: :মানেকি: :মানেকি:
(No subject)
:ঘুমপাইতেছে: :ঘুমপাইতেছে: :ঘুমপাইতেছে: :ঘুমপাইতেছে:
(No subject)
:ঘুমপাইতেছে: :ঘুমপাইতেছে: