আমার সেই বন্ধুকে আজও ফেসবুকে সার্চ করে পেলাম না। আমার অন্য একটা আইডি যেটার কথা সে জানে না, সেটা দিয়েও সার্চ করে পেলাম না। সুতরাং আমাকে সে ব্লক করে নি, তার আইডিই ডিএক্টিভেট করা। একাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে ফেলার ব্যাপারটা কখনো যেন একটা আশ্রয়ের মতো, হাঁফ ছেড়ে বাঁচা, অবশ্য কিছুদিন পরেই আবার আপস্ এন্ড ডাউন, স্ক্রলিং।
তো সেই বন্ধুটির সাথেই বিকেলের ধূলোর ভেতরে দেখা হয়ে গেল। চায়ের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে এক হাতে মোবাইলে, অন্য হাতে চায়ের কাপ নিয়ে ব্যস্ত আছে। একটু হিংসা লাগলো অবশ্য। আইডি ডিএক্টিভেট থাকায় তার একটা কাল্পনিক ছবি মনে ছিল যা বিষণ্ণ, অন্তত তার এই মুহূর্তের প্রফুল্লতার সাথে যায় না। ফেসবুক তার খুবই প্রিয় জায়গা। সারাদিন নানা সময়ে, নানাভাবে সে তার সরব উপস্থিতি জানান দিয়ে থাকে। ফ্রম গার্লিশ সেলফি টু প্রটেস্ট এগেইনস্ট ইটারনাল করাপশন। তো সে এখন কি নিয়ে আছে?
জানতে এগিয়ে গেলাম কাছে। কুশলাদি বিনিময় হলো। আমাকে সে চা, সিগারেট খাওয়ালো। এরপর কাজের কথায় আসলাম। ফেসবুকে কেন আসছে না জানতে চাইলাম। সে বললো, এমনিই। সুতরাং, মেয়েদের “ওকে” রিপ্লাইয়ের মতোই তা দিয়ে কিছুই বোঝা গেল না। আমি আসলে উদঘাটন করতে চাইছিলাম এই বিচ্ছিন্নতা দিয়ে সে কি কোন আনন্দ পেয়েছে? আমি এটা সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারি না, ঠিক যেমন জিজ্ঞেস করতে পারি না আমার গার্লিফ্রেন্ডকে সে কখনো প্রেমিকের চোখে দেখেছে কিনা। অথচ ঐ মুহূর্তে আমার খুবই জানার দরকার ছিল সে কি করেছে তার এই নিষ্ক্রিয়তার দিনগুলোতে?
বিভিন্ন উপায়ে তাকে প্রশ্ন করতে থাকলাম। এক পর্যায়ে সে বিরক্ত এবং সন্দেহযুক্ত হলো। এই সামান্য ঘটনা নিয়ে আমি তাকে এতো খোঁচাচ্ছি কেন?
‘ সামান্য না? তুই কখনো ফেসবুক ছাড়া থাকিস? ‘
‘দ্যাখ, এমনিই ডিএক্টিভেট করেছিলাম। ক্রাউড ভালো লাগছিল না। দ্যাটস অল। ‘
‘কিন্তু এই কয়েকদিনে কি কি করলি? ‘
‘যা নর্মালি করি, সেগুলোই। ‘
‘ আর কিছু না? ‘
‘মানে? ‘
আমি তখন নিশ্চিত হয়ে গেছি আমার বন্ধুটির সাথে আমার সম্পর্ক চা সিগারেটের আড্ডার বেশি আর কখনো গড়াবে না যা আগে ভালোভাবেই ছিল। পূর্বের সখ্যতা শেষ হয়ে গেছে।
বাসায় ফিরে আসার মাঝপথেই আমি বন্ধুর কথা একটু বিস্মৃত হলাম। মোবাইলে নেট প্যাকেজ নিয়ে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, হাউ টু রিডিউজ এডিকশন ইন সোশ্যাল মিডিয়া। এরপর আগ্রহ নিয়ে নানা রকমের দিক নির্দেশনা বুঝে নিতে থাকলাম।
কয়েকবারের চেষ্টায় আমি আমার ফেসবুক আইডি প্রায় মাসখানেকের মতো নিষ্ক্রিয় রাখতে সক্ষম হলাম। যদিও মাথার ভেতর থেকে ফেসবুক সরছিল না, আমার অনুপুস্থিতিতে একটা কাল্পনিক নিউজ ফিডের ছবিও দাঁড় করালাম। ব্যাপারটা বেশ মজার, সুখের। আপনার যদি লাইফে কোন স্পেস দরকার হয়ে পড়ে খুব, কিছুদিন আপনি ভার্চুয়াল জগত থেকে দূরে থাকতে পারেন। এই সময়ের ইউজার হিসেবে নিশ্চয়ই আপনি অনেক মিমিজ দেখে থাকবেন। আচ্ছা এই মিমিটা কি আপনি দেখেছেন যে, সুইসাইড ইজ ফর কিডস, হোয়েন আ লিজেন্ড ইজ ডিপ্রেশড, হি রিমুভজ হিজ হোয়াটসএপ ডিপি? মজার না?
ওকে। মাস দেড়েক পরে ফেসবুকে ফিরতেই সেই বন্ধু দেখি এখন খুব রেগুলার। সম্ভবত আমি নিষ্ক্রিয় থাকার সময়ে সে ফিরে এসেছে। মেসেজ দিলাম, কথা হলো। আমি তো জানি আসলে তার নিষ্ক্রিয় দিনগুলো হয়তো আমার মতোই কেটেছে। তবু দূরত্ব অনুভব করায় কথা চালাতে তৎপর হই। তবু তো এটা সত্যি যে, বেশ কিছুদিন আমরা একই সাথে স্ক্রিনে সক্রিয় ছিলাম না ।
এরপরে অনেক বন্ধুর সাথে সখ্যতা হলেও সেই বন্ধু আলাদা হয়েই ছিল। যদিও আড্ডা তো দূরের কথা বছরে দুই তিনবারের বেশি চ্যাট হতো না, যা একটু বার্থডে উপলক্ষ্যে ।
যে বন্ধু আমাকে নিষ্ক্রিয়তার ইন্ধন যুগিয়েছিল, সে তো খুব ভালো বন্ধু।গুড ফ্রেন্ড।