খুব বৃষ্টি হচ্ছে। অঝর ধারার বৃষ্টি। যেন ছন্দময় নৃত্যে ঘুঙুর এর শব্দ। টিনের চালে একটানা বৃষ্টির শব্দে দুচোখ বুঝে যেন ঘুম আসছে। কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে ঘুমালেই বুঝি এই ছন্দময় নৃত্যের ঝংকার কে হারিয়ে ফেলব। হয়ত ঘুম ফুরালে এই বৃষ্টি আর থাকবে না। হয়ত তখন রাতের নিঃস্তব্ধতা সকল ছন্দকে গ্রাস করবে। হয়ত তখন শুরু হবে রাত জাগা ঝি ঝি পোকার এক টানা ডাক। হয়ত কালো মেঘ ঢেকে রাখবে রাতের আকাশের চাঁদকে। হয়ত অন্ধকার হয়ে থাকবে চারপাশ। নিশাচর প্রাণি হয়ত ঘুমাবার একটু সুযোগ পাবে। হয়ত তখন সকালও হয়ে যেতে পারে। তাই হয়ত বৃষ্টিকে চাই যেন এমনভাবে ঝরে। যেন তাকে অনুভব করতে পারি আমার মর্মে মর্মে।
কিন্তু আমি বৃষ্টি চাইনা। কারণ আমার ক্ষুদ্র স্বার্থ হয়ত চরিতার্থ হবে এই বৃষ্টির পড়ার নৃত্যময় সংগীতে। আমার এই স্বার্থ বিসর্জিত হলে কোন ক্ষতি নেই। এই দেশের অজস্র ভুখা-নাঙা আছে, যারা আমাদের মতো ভুড়ি ভোজিদের মতো তিন বেলা খাবার তো দূরে থাক, এক বেলাই পেট পুরে খেতে পায় না। অন্য সংস্থানের চিন্তায় তাদের রাতের ঘুমও হারাম হয়ে যায়। আমাদের উচ্চ স্তরের নামধারী ধনীদের ফেলে দেওয়া খাবার ডাস্টবিনের ময়লার স্তুপের নিচ থেকে হয়ত তারা কুড়িয়ে জীবন ধারণ করে। আমাদের মতো নরম গদির বিছানায় শুয়ে, আরামদায়ক তুলার বালিশ মস্তকের তলদেশে ধারণ করে, শয্যাকে আরো একটু আরামদায়ক করার জন্য কাথার চিন্তাতো দূরের কথা, সামান্য মাথা গোজার ঠাইটুকুই তারা করতে পায় না।
হয়ত রাস্তার পাশে কোন এক ফুটপাতে, কিংবা কোন ডাস্টবিনের পাশে, কোন বহুতল বিপনী বিতান এর সামনে খোলা আকাশের নিচেই তারা ঘুমিয়ে পড়েছিল। এই দুর্ভাগা বৃষ্টির ছন্দ তাদের ওই আরামের (?) ঘুমটুকুই মন্দ করে দিল। হয়ত সে ঘুমের মধ্যে আমাদের মতো আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখে না। হয়ত তার ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন হয় কালকের অন্ন সংস্থানের চিন্তা। হয়ত এতক্ষণে তার ওই স্বপ্নটুকুই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ভিজে চুপসে গেছে সব স্বপ্নের বেড়াজাল ।
এই রাতই হবে হয়ত কোন কোন পরিবারের জন্য স্বজন হারানোর রাত। হয়ত প্রিয় সেই স্বজনটিকে আরো কখনও হাসি মুখে দেখার সুযোগ হবে না। পাহাড়ের কোলে জীবনের ঝুকি নিয়ে বসবাসরত সেই সব পরিবারের কথাই বলছি। চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চল গুলোতে মাথা গোঝার ঠাই এর আশায় বাসা বেঁধেছে সহস্রাধিক মানুষ। পাহাড় কেটে তার প্রতিটি খাঁজে খাঁজে বানিয়েছে মৃত্যু কুপ। প্রশাসেনের নজরদারীর অভাবে কিংবা তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতায় গড়ে উঠছে এই সব মৃত্যু কূপ। যা প্রতিবছর এ কয়েকশত মানুষের জীবনকে কেড়ে নেয় অবলীলায়। হয়ত এই লেখাটি যখন লিখছি তখনও ঘটে যাচ্ছে কোন অযাচিত দুর্ঘটনা। যা কখনই আমাদের কাম্য হতে পারে না।
বৃষ্টিকে বন্ধ করা যাবে না, বন্ধ করা যাবে না তার ছন্দময় নৃত্য সংগীত। কিন্তু বন্ধ করতে পারি ভুখা-নাঙা মানুষের খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন। বন্ধ করতে পারি অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা আর অপ্রত্যাশিত মৃত্যু। আমরা সাভারে ঘটে যাওয়া শতাব্দির নিকৃষ্টতম দুর্ঘটনা দিয়ে এবং মৃত্যের সংখ্যা দিয়ে পৃথিবীতে প্রথম হতে চাই না। চাই মুক্তভাবে বাঁচতে। অশান্তির দীর্ঘশ্বাস নিতে চাই না, চাই প্রশান্তির স্বল্প শ্বাস। তবেই এই বৃষ্টির ছন্দকে করতে পারব হৃদয় মমে ধারণ। এই হোক প্রত্যাশা……………..
এই দেশটা আমার-আপনার। তাই এই
এই দেশটা আমার-আপনার। তাই এই দেশটাকে গড়তে আমাদেরই কাজ করে যেতে হবে। দারিদ্র দূর করতে সুস্থ্য রাজনীতির কোন বিকল্প নেই। রাজনীতি শুদ্ধ করতে হলে আমাদেরই সোচ্চার হতে হবে। ভালো লাগল আপনার অনুভূতি দেখে।
এভাবে আমরা শুধু স্বপ্নই দেখে
:থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ:
এভাবে আমরা শুধু স্বপ্নই দেখে যাবো??