১
স্যার গাড়ীতে উঠছেন, আমি পাশে দাঁড়িয়ে। যেহেতু পাশ করে গেছি, এখন নিজেকে কলিগ ভাবা যায়, তারপরেও পারছি না। স্যার এর গাড়ী চলে গেলে আমি বাস ধরার জন্য রওয়ানা দিব। স্যার নিজে থেকেই বললেন,
— তোমার বাসাও তো ওদিকে, উঠে যাও।
কোথায় বাসের গুঁতোগুঁতি আর কোথায় গাড়ীতে বসে এসি বাতাসে আরাম করতে করতে যাওয়া। উঠে গেলাম। স্যারের পিওন ব্যাগ সামনের সিটে রাখল। আমি আর স্যার পিছনের সিটে। গাড়ী ছেড়ে দিল। পিওনটা খুব বিষণ্ণ মুখে সালাম দিল। গাড়ী চলতে শুরু করল।
কি মনে করে স্যার হেসে ফেললেন।
— ‘আমার পিওন বাইরে থেকে দেখাচ্ছে যে মন খুব খারাপ। আসলে কিন্তু মনে মনে খুব খুশী।‘
পুরো ব্যপারটা হচ্ছে, পিওনের স্ত্রীর ক্যান্সার ধরা পড়েছে। টার্মিনাল স্টেজ। খুব বেশী কিছু এখন আর করার নাই। শুনতে খারাপ লাগলেও, স্যারের সঙ্গে একমত হলাম। স্যারের হাতে রয়েছে এসিআরের নম্বর। সো ‘জী হুজুর’ করা এখনও আমার দ্বায়িত্ব, তবে এক্ষেত্রে সততার সঙ্গে বললাম,
— জ্বি স্যার।
বিয়ে, প্রেম এসব নিয়ে রসিকতার অন্ত নাই। সবই ব্যাঙ্গাত্মক। কোথাও মুখ্য বিষয় অবিশ্বাস কোথাও বা দার্শনিকতা। আমরা যারা এসবের পাঠক, পড়বার পরে ঠোঁট বাঁকা করে একটু হেঁসেই বোধহয় দ্বায়িত্ব শেষ। মনে কোন প্রতিফলন রাখা জরুরী না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে থাকেও না। তারপরও পড়ি, এবং মজা পাই।
বিয়ে নিয়ে দার্শনিক সক্রেটিসের কথাটা নেহাত মন্দ না। তিনি বলেছিলেন
‘যে করেই হোক বিয়ে করুন। কপাল ভালো হলে আপনি সুখী হবেন আর কপাল খারাপ হলে হবেন দার্শনিক।’
নো ডাউট, সাবধানবাণীটা শুনে কেউ বিশ্বাস করেনি। এবং যা হবার তা ই হয়েছে। পৃথিবীতে বিবাহিত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। এবং… দার্শনিক তৈরি হয়েছে।
তেমনই এক দার্শনিকের মহান এক বাণী সেদিন পড়লাম। এটাকে দার্শনিক টাইপের রসিকতাও বলতে পারেন। তিনি বলছেন, জীবনে দুটো জিনিস অর্জন করা খুব কঠিন
এক) তোমার চিন্তা অন্য কারো মাথায় ঢোকানো
দুই) কারো টাকা তোমার পকেটে ঢোকানো।
প্রথমটা যে সফল ভাবে পারে সে হচ্ছে একজন শিক্ষক
দ্বিতীয়টা যে সফলভাবে পারে সে হচ্ছে একজন ‘বস’
যে দুটোই সফলভাবে পারে সে হচ্ছে একজন ‘স্ত্রী’
আর যে দুটোতেই ব্যর্থ হয় সে হচ্ছে একজন ‘স্বামী’
মর্মান্তিক এই সত্যটা যদিও এতদিন অনুধাবন করে আসছিলাম, এমন সুন্দরভাবে গুছিয়ে কেউ বলেনি। লেখাটি ফেসবুকে পাওয়া। ফলে এটা কোন প্রবাদ, না কোন দার্শনিকের স্বীকারোক্তি, বলতে পারছি না। রসিকতাটায় লেখকের নাম ছিল না। সম্ভবতঃ আত্মপ্রচারবিমুখ কোন মহানুভব হবেন। তিনি যে ই হোন, সকল দার্শনিক বিবাহিতের পক্ষে, অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে, তাঁকে একটা ধন্যবাদ দিচ্ছি।
কিছুদিন আগের কথা। নারীবাদী কিংবা নারী বিদ্বেষী, যে ই হোক, স্ত্রীদের বেতন ভাতা দেয়া নিয়ে কিছু কথাবার্তা শুরু করেছিলেন। ব্যাপারটায় একটা আইন তাঁরা চাইছিলেন। এখন অনেকদিন এমন কোন লেখা চোখে পড়ছে না। এনিওয়ে, আইন হবে কি না, কিংবা হলে তা প্রয়োগ সম্ভব কি না, এমন গুরুতর আলোচনার যোগ্যতা আমার নাই। আমি বরং চাকরী সম্পর্কিত একটি রসিকতা একটু ‘শেয়ার’ করি।
একবার এক ‘বস’ তাঁর ‘এমপ্লয়ি’ দের সঙ্গে নাস্তা করতে এলেন। সবাই তটস্থ হয়ে গেলে তিনি তাঁদের একটা মজার গল্প শোনালেন। শুনে সবাই হেঁসে কুটিকুটি। শুধু একজন হাসছে না। উদ্বিগ্ন ‘বস’ জানতে চাইলেন, কি ব্যাপার গল্পটা মজার না? গোমড়া মুখো ‘এমপ্লয়ি’ বলল, আমার হাসবার কোন প্রয়োজন নাই। কালকে আমি চাকরী ছেড়ে দিচ্ছি।
‘বিয়ে’ সম্পর্কটাতে ‘বেতন’ ব্যপারাটা প্রবেশ করলে সম্পর্কের শেষ কি দাঁড়াবে জানি না, তবে বেতনের লোভে বিয়ের সুত্রপাত হতে পারে। কিংবা বলা যায় এমন অনেক আগে থেকেই আছে। প্রকাশ্যে হয়তো কেউ স্বীকার করেন না তবে এই নিয়ে আরেকটি গল্প আছে। গল্পটা একজন নারী নালিশ জানাচ্ছেন
— আমার স্বামী আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে!
— কী রকম বিশ্বাসঘাতকতা?
— বিয়ের আগে সে বলেছিল, তার বয়স ৯০, স্বাস্থ্য খারাপ আর সে কোটিপতি।
— সে কি কোটিপতি নয়?
— কোটিপতি, কিন্তু বয়স মাত্র ৬০ আর স্বাস্থ্যও যথেষ্ট ভালো।
এর চেয়েও ভয়ংকর রসিকতাটা স্যার সেদিন গাড়ীতে বলেছিলেন,
— বউ মরলে কে না খুশী হয়। শুধু কষ্ট হয় বাচ্চাদের।
২
তারপরও আমরা বিয়ে করি। এদেশে বিয়ে হয়। কারণ? কারণটা সম্ভবতঃ স্প্যানিশরা ভাল বুঝেছিলেন। উনাদের ওখানে একটা প্রবাদও চালু আছে। প্রবাদটি হচ্ছে, ‘যিনি যুদ্ধে যাচ্ছেন বা বিয়ে করতে যাচ্ছেন, তাঁকে পরামর্শ না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।’ যেদিন আমি বিয়ে করতে যাই, সেদিনও সম্ভবতঃ আমার চারপাশে এমনই সব বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছিলেন, আর তাঁরা বারণ না করে নিজের বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন। অ্যান্ড আই ডিড ইট।
এরপরে? এরপরে কি হবে, সেকথাও কার্ল এম বাউম্যান জানিয়ে গিয়েছিলেন। আমিই লক্ষ্য করিনি। আজকে লক্ষ্য করলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘ভালোবাসা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত বিভ্রম আর এই বিভ্রম সারানোর উপায় হচ্ছে বিয়ে।’ হি ওয়াজ রাইট। বিভ্রম সেরে গেছে। শুধু তথ্যটা দেরীতে পেলাম, এই যা দুঃখ।
দুঃখ থেকে বেরিয়ে আসবার প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু রসিকতা আছে। এমন একটা সেদিন পড়লাম। মন্দ না। একবার এক স্বামী, তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার সাহেব রুগিনির মুখে থার্মোমিটার রেখে বললেন,
— মুখ বন্ধ রাখবেন
স্ত্রীটি মুখ বন্ধ রাখলেন। স্ত্রীকে এতক্ষণ চুপ থাকতে দেখে স্বামীটি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। ডাক্তার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন
— এই জিনিসটার দাম কত?
যারা এই গল্পে কোন সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন, তাঁদের জন্য আরেকটা গল্প আছে। কিছুটা মর্মান্তিক, তবে শিক্ষণীয়।
একবার এক মহিলা একদিন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসকে ফোন করলেন।
মহিলাঃ একটু আমাদের বাসায় আসতে হবে
আম্বুলন্স সার্ভিসঃ কি হয়েছে?
মহিলাঃ কফি টেবিলের সাথে লেগে আমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছি
অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসঃ ব্যাস? এজন্য এ্যাম্বুলেন্স লাগবে?
মহিলাঃ আমার ব্যাথা পাওয়া দেখে ওর হাসাটা তো উচিত হয়নি, না?
বিয়ে নিয়ে আরেক ধরনের রসিকতা আছে। এতোটা মর্মান্তিক না। কিছুটা নরম গোছের। এমন একটা গল্প সেদিন পড়লাম।
স্বামী স্ত্রীর কথোপকথন।
স্ত্রীঃ আমি তোমার উপর রেগে আছি
স্বামীঃ কেন? এখনই তো সরি বললাম।
স্ত্রীঃ সেটাই তো, আমার ঝগড়া করার মুডটাই নষ্ট করে দিলা
সো, সরি বলাটাও সবসময় সমাধান না। একটা সমাধান হতে পারে, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা। তেমনটা নিয়েও একজন গল্প বানিয়েছেন। সেই গল্পটাও মন্দ না। ওটা পড়ে আপনিও বলবেন, ব্যাটা গাধা।
তো, গল্পটা হচ্ছে, একবার এক গাধা প্রতিদিন এক মন্দিরের জানালার সামনে বসে ঈশ্বরের পূজা করত। ঈশ্বর খুশি হয়ে জানতে চাইলেন
ঈশ্বরঃ বল, কি চাই?
গাধাঃ পরের জনমেও যেন আমি গাধা হয়ে জন্মাই।
ঈশ্বরঃ এটা পারা যাবে না, একজনকে দুবার গাধা করা যায় না। অন্য কিছু চাও
গাধাঃ ঠিক আছে, তাহলে আমাকে স্বামী করে জন্ম দিয়েন।
ঈশ্বরঃ কোন চালাকি না…। বললাম না, দুইবার গাধা বানাবার অপশান নাই।
লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, বিবাহিত মানুষের আক্ষেপ কোনদিনই শেষ হবে না। সব আক্ষেপগুলো সামারাইজ করা একটা গল্প সেদিন পড়লাম। মনটা হু হু করে উঠল।
একজন বিবাহিত লোককে একজন জিজ্ঞেস করল, ‘বিয়ের আগে আপনি কি করতেন?’
বিবাহিত লোকটির চোখ ছলছল করে উঠল, বলল, ‘যা মন চাইত!!!’
লেখাটা পড়ে কি আমাকে মারতে উদ্যত হচ্ছেন? কিংবা প্রেম, ভালবাসা এসবের ওপর থেকে কি বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে? কারো কারো, তবে সবার না। দিল্লি কা লাড্ডু খেতে আগ্রহী জনতার সংখ্যা এখনও নেহাত কম না। এসব জনতার মনের ভেতর একটা কবি লুকিয়ে আছে, যার নাম নির্মলেন্দু গুণ। সে বলছে
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।
বেস্ট অফ লাক।