আমি তখন ক্লাস এইট এর বৃত্তির মডেল টেস্ট দিয়েছি। এর পর পরই ঈদের ছুটিতে পুরো চৌদ্দগুস্টিকে নিয়ে সিলেট যাওয়া হয়। সেবার ঈদের পরপরই দূর্গাপূজা ছিল বলে বিশাল ছুটি। সিলেট এ গিয়ে বিচিত্র ঘটনা ঘটলো। আমরা স্টে করেছিলাম সার্কিট হাউস এ- সেটার পাশেই সুরমা নদী আর ব্রিজ। যেদিন যাই সেদিন সন্ধ্যায় আমার চাচা আর ভাই আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। ব্রিজ এর পাশে এক হিন্দু দম্পতি, মহিলার সিঁদুর দেখে চেনা গেল, সাথে পাঁচটি কন্যাশিশু দেখতে পেয়ে কৌতুহলি হয়ে এগিয়ে যাই। আমার ভাই কথা শুরু করে,” এখানে কি করতে আসছেন? এভাবে বসে আছেন কেন বাসা কই?”।” পুরুষটির জবাব-“শাহজালাল এর মাজারে আসছি, ছেলে হওয়ার আশায়।” আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম। আমার ভাই আমাকে নিয়ে আসে সেখান থেকে। পরেরদিন আমরা সবাই শাহজালাল এর মাজার দেখতে যাই। বিরাট মাজাএর এর একপাশে গেরুয়া পরা সন্যাসী একতারা হাতে গান গাচ্ছে।মাজার এ আমাকে উপরে যেতে দেয়া হল না। মহিলা প্রবেশ নিষিদ্ধ। ক্যামেরা জুম করে উপরের কান্ডকারখানা দেখতে লাগলাম। একটি উঁচু ঢিপি যে প্রধান কবর, এর উপর সবুজ সিল্কের চাদর দেয়া, তার উপর পয়সা দিয়ে সাজানো! আমার বাবা চাচারা ভক্তির সাথে দানবাক্সে টাকা ফেলতে লাগলেন। এরপর গেলাম শাহপরান এর মাজারে। পুরাই সেইম কেস সেখানেও। সন্যাসী, খাদেম, দানবাক্স। আর হ্যা, মাজারে ওঠার আগে জুতা খুলে ঢুকতে হয়। আসার পথে আমার বাবা আমার বই পড়ার শখের কারনে সেখান থেকে এই দুই মাজারের ঐতিহাসিক গপ্পের বই কিনে দিলেন। সেই বই অনুসারে- মাজার দুটি অত্যন্ত গরম মাজার। কেন গরম সেই কাহিনী নিম্নরুপ-
শাহপ্রানের মাজারে একবার এক ফিল্ম আর্টিস্ট, ডিরেকটার আরও মুভি ক্রু শুটিং শেষে মাজারে উঠতে যান। সেই সময়ে ডিরেকটার জুতা না খুলে মাজারে প্রবেশ করায় খাদেম বলেন জুতা খুলে এসে পীরকে সম্মান প্রদর্শন করতে।ডিরেকটর ভদ্রলোক রসিকতা করে বলেন, “এরপর থেকে তাহলে পা ই খুলে রেখে আসবো”। এরপর নাকি তারা ফেরত যাওয়ার পথে সি.এন্.জি. তে করে যাওয়ার সময়ে এক্সিডেন্ট করে ডিরেকটর এর পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়!! ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব দেখে আমার মনে হল, এগুলা শুনলে অনেক মানুষ এর ইসলাম এর উপর ই বিশ্বাস উঠে যাবে। একজন ধর্মপ্রচারকের কবরে মানত করলে সন্তান ছেলে হবে কিভাবে, তার কবরে মাজার বানানোর দরকার কি, আর কবরের ঘরে যাওয়ার জন্য সিড়ির দরকার কি, আর তাতে জুতা খোলার দরকার কি? তিনি তো আল্লাহ এর বান্দা বই আর কিছু নন।তিনি রাসুল বা নবী ও নন তবে তার কবরস্থানে যাওয়ার জন্য জুতা খুলে যেতে হবে কেন! সাধারন মানুষের কবর জিয়ারত করতে তো কেউ জুতা খোলে না! পা ছিন্ন হওয়ার ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে শাহপরান জীবিত অবস্থায় খুব ডাটিয়াল ছিলেন এবং মৃত্যুও তার অহংকারকে দমাতে পারেনি। এরকম মানুষকে তাহলে সম্মানই বা কিভাবে করা যায়? সত্যি কথা হল এরকম কিছুই ঘটেনি। আর যারা বই লিখে এসব গুজব ছড়ান তার পেছনে একটা চক্র কাজ করে। চক্রের আয় করা টাকা এর ভাগ পায় বই এর প্রকাশক, গুজব এর কারনে বই এর কাটতি যেমন বাড়ে তেমন মাজারের নাম ছড়ায়। আর বাকি ভাগ পায় মাজারের খাদেম- মাজারের আয় দিয়ে তার বিলাসবহুল জীবন যায়। যে মৃত মানুষটিকে নিয়ে ব্যবসা তার কাছে এগুলোর কিছুই যায় না। বরং ইসলাম ধর্মে কবরে হইচই নিষিদ্ধ। অনেকে বলেন- মাজার দুটিতে যে দানবাক্স দেয়া আছে তাতে লেখা- “মসজিদ সম্প্রসারনের জন্য মুক্তহস্তে দান করুন”।
তাহলে টাকা দিতে দোষ কোথায়? আরে- এই দুই ধর্মপ্রচারক তো প্রায় ছয়শ বছর আগে মারা গেছেন! এত বছর ধরে একটা মসজিদ তৈরির টাকা উঠলো না!! আর একটা ব্যাপার, আমাকে সেই মাজারে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি মেয়ে বলে। অথচ প্রত্যেক নির্বাচনের আগে হাসিনা ম্যাডাম আর খালেদা ম্যাডাম এই মাজার জিয়ারতে আসেন আর “গরম পীর” এর আশির্বাদ নিয়ে যান।আল্লাহ ইরশাদ করেন- এই মহাবিশ্বের সব তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য নিদর্শন হিসেবে। মহানবীর পর ইসলাম এর জন্য তো তার মোজেজা দেখানোর দরকার নেই। কারন ইসলাম পুর্ণাঙ্গ। মহানবীকে জীবিত অবস্থায় কাফিররা পাথর মেরে ক্ষতবিক্ষত করে দিল, তাদের কিছু হল না, যেই হাত দিয়ে মারলো সেই হাত খসে পড়ে গেল না আর এই পোড়া বাংলাদেশ এ দুই ধর্মপ্রচারকের এমন কি ডাঁট যে জুতো নিয়ে ঢোকাঢ়ঃ পা কেটে পড়ে গেল!আসলে, ধর্মপ্রান কুসংস্কারী এই দেশের মানুষের অলৌকিক ঘটনায় আস্থা এত বেশি যে তাদের নিয়ে ব্যবসা, রাজনীতি করে গুটিকয়েক মানুষ বিলাসব্যাসন করে। তাই হেফাজতের সমাবেশ এ শফি না আসলেও সাধারন মাদ্রাসা ছাত্ররা ধর্ম রক্ষার নামে না বুঝে কোরআন পোড়ায়, সাইদীর মত কুত্তাকে আলেম বলে স্বীকৃতি দেয়। কেই যদি মনে করে গনতন্ত্র দিয়ে দেশ কে উদ্ধার করা যাবে তবে সে বোকার স্বর্গে বাস করছে। গনতন্ত্রের নামেই এত বছর বাঙ্গালী ধরা খেয়েছে। যেই দেশে মাজারের মত এত বড় টাল্টিবাজি দিনের পর দিন টিকে আছে সেই দেশের মানুষের গনতন্ত্র চর্চার অধিকার নেই। শিক্ষা দিয়ে যেমন সচেতনতা আসে না তেমনই সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে মিথ্যা সত্যি হয় না।সাইদীর হাজার ভক্ত দিয়ে এই সত্য ধ্বংস্ব করা যাবে না যে সে রাজাকার- আর সত্য মানুষের বিশ্বাস এর উপর সত্যি হয়না। পীর কে নিয়ে বাংলাদেশ এ যেরকম ব্যবসা তৈরি হতে পেরেছে তা আমাদের জাতের অন্ধবিশ্বাস এ পারদর্শিতার ফলেই। ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা করা খুব সহজ চিরদিন থাকবে, গুজব ছড়ানোও সহজ চিরদিন ই থাকবে। জনসমর্থনে আসা প্রতিনিধি সঠিক হবে না তার সম্ভাবনা ৯৯% থাকবে, কারন একজনকে বোকা বানানোর চেয়ে গনহারে বোকা বানানো বেশি সোজা।বিশ্বাস না হলে বাংলাদেশ এর আজ পর্যন্ত এর ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখেন। চ্যালেঞ্জ দিলাম।
পোস্টটা পড়ে দু’টো বইয়ের কথা
পোস্টটা পড়ে দু’টো বইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। লালসালু আর একজন আলী কেনানের উত্থান পতন। লালসালু তো আশা করি পড়া আছে। আর আহমদ ছফার একজন আলী কেনানের উত্থান পতও পড়ে দেখতে পারেন।
পড়েছি বটে কিন্তু বইয়ের লেখা
পড়েছি বটে কিন্তু বইয়ের লেখা পড়তেও এখন ভয় হয়।
কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা আলাদা করা দায়।
“শয়তান মানুষকে প্ররোচনা দেয়
এই ভাইয়া এইটা আমার সাইন।.
এই ভাইয়া এইটা আমার সাইন।. :p
ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা করা খুব
:ভাবতেছি: :ভাবতেছি: হুম অপ্রত্যাশিত হলেও কথা সত্য :দীর্ঘশ্বাস: :দীর্ঘশ্বাস: :দীর্ঘশ্বাস:
গত মাস ছয়েক আগে সিলেটে যাওয়া
গত মাস ছয়েক আগে সিলেটে যাওয়া হয়েছিল। আমার সাথে এক চাকমা ছোট ভাই ছিল। ও আর আমি যখন মাজার পূজা(!) দেখতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম সবাই ওর দিকে তাকিয়ে ছিল! ও দেখি সুবার দৃষ্টি ওর প্রতি পড়ায় অস্বস্তি বোধ করছে। কয়েকটি ছবি তুলে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলাম।
এইবার ভাবেন ওদের মানসিকতা?
আমার মতে সিলেটের এই মাজার
আমার মতে সিলেটের এই মাজার দুইটা বাংলাদেশের ধর্মান্ধ মানুষের আখড়া। সবচেয়ে আজাইরা জায়গা। যে পরিমান জায়গা দখল করে এই মাজার এর পরিধি তা দিয়ে অনেক কিছু করা যেত। কিন্তু এখন সেটা খরচার খাতায় গেছে।
বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে
বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদুর।
একজনকে বোকা বানানোর চেয়ে
ইতিহাস দেখা লাগবে না। সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতিদের লাশ নিয়েই যা দেখছি,তাই বহুত!
লাল সালুর ব্যবসা এই দেশে কখনও
লাল সালুর ব্যবসা এই দেশে কখনও মন্দায় পড়েনি। চমৎকার লিখেছেন।
আমি তো এইসব দেখে ভাবতেসি আমি
আমি তো এইসব দেখে ভাবতেসি আমি ই একটা মাজার খুলবো। আর চাকরি বাকরি করা লাগবে না, পায়ের উপর পা তুলে খাবো।
মাজারের ব্যাবসা করার খায়েশ
মাজারের ব্যাবসা করার খায়েশ হইলো! লিখছেন দারুন! :থাম্বসআপ:
রাইন, আপনার মাজারে আমি খাদেম
রাইন, আপনার মাজারে আমি খাদেম হমু :p
বাহ জুইটা গেসে বিসনেস
বাহ জুইটা গেসে বিসনেস পার্টনার দেখি! আসলে আল্ট্রা যুগ, সব কিসু ফাস্ট।
…… সমাজের বুকে যত দুষ্ট
…… সমাজের বুকে যত দুষ্ট ক্ষত,
গাঁইতি শাবল চালিয়ে উড়াব সেথায় বিজয়ের রথ…
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
চমৎকার লিখেছেন
চমৎকার লিখেছেন
ব্রহ্মপুত্র এত বড় মন্তব্য
ব্রহ্মপুত্র এত বড় মন্তব্য দিলেন!! বাহ আমি কত ভাগ্যবান।
হুম
হুম
ইসলামে কবরকে সাজানোর বা
ইসলামে কবরকে সাজানোর বা ধান্ধা করার কোন তরিকা নাই।এটা শাহজালাল শাহপরানের দোষ না।আর মাজারীরা মুসলিম নয় সংখ্যালঘু কাফের।যদি কবরকে চিন্হিত করে রাখতে হয় তবে এক খন্ড পাথর রাখা যেতে পারে আর এরাতো একটা পুরো ঘর বানিয়ে পেলেছে।মুসলমানরা চাইলে মাজারী ও ভান্ডারী সম্প্রদায়ের কিছু করতে পারবে না।এরা আজীবন এসব করে যাবে।এরা অনেক বড় বড় মাফিয়া ডনদের সাথে যুক্ত।এদের কমিশন সরকার থেকে শুরু করে প্রায় রুই কাতলা সবাই খায়।এদের প্রধান ব্যবসা হল ড্রাগস এন্ড গান।মাজারতো জাস্ট লেবাস হিসেবে কাজ করে।
আমি সহমত। চিন্তা করেন ধর্মকে
আমি সহমত। চিন্তা করেন ধর্মকে নিয়ে যারা এই ব্যাবসা করে তাদের অনেককেই আমরা আবার ধর্মের নসিহত দিতে দেখি। যেমন দেখেন ইদানিং বিভিন্ন পীরদের দৌরাত্ম্য খুব বেশি দেখা যায় এবং তারা ধর্মকর্ম বাদ দিয়া নোংরা রাজনীতিতে বেশি অবদান রাখতে সচেষ্ট।
‘মাজারীরা মুসলিম নয় সংখ্যালঘু
‘মাজারীরা মুসলিম নয় সংখ্যালঘু কাফের’ এই কথার সাথে একমত না
আমি তো পুরা সহমত। সংখ্যালঘু
আমি তো পুরা সহমত। সংখ্যালঘু না এরা **** কাফের। বুঝছেন? আপনার একমত হওয়া না হওয়াতে কিছু যায় আসে না।