কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কি সেটা আমরা সবাই মোটামুটি জানি। সাধারণত প্রোগ্রামিং লেখার মাধ্যম বা ভাষা হল ইংরেজি। আমরা সচরাচর যেসব ল্যাংগুয়েজে(এই ল্যাংগুয়েজ হল প্রোগ্রামিং-এর বিভিন্ন প্রকারভেদ যেমন- সি, পাইথন, জাভা ইত্যাদি) প্রোগ্রামিং করি সেগুলোর বলতে গেলে সবগুলোই ইংরেজি ভাষায় লিখতে হয়। History of Programming Languages (HOPL) এর তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৮৫০০ এর উপরে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজগুলোর মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরই লেখার ভাষা হিসেবে ইংরেজি ব্যবহৃত। এর কারণ হতে পারে বেশির ভাগ প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজগুলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় নির্মিত, অথবা শুধুমাত্র বেশীরভাগ(যেহেতু ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা) মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য। তথাপি ১৯৬৮ সালে প্রথম Non-English-based programming language হিসেবে ALGOL’68 কে পাঁচটি বিভিন্ন ভাষায় রূপান্তরের অনুমোদন দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে চাইনিজ, কোরিয়ান, আরবি, লাটভিয়ান প্রভৃতি ভাষায় প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ নির্মিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর(২০১৪) এর জুলাইতে বাংলাদেশের নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মেধাবী ছাত্র এগিয়ে এসেছেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ নতুন একটি মাত্রা যোগ করতে। “চা Script” নামে নির্মিত তাদের নতুন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজটি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়! বাংলা ভাষাভাষী সবাই যেন কমপক্ষে প্রোগ্রামিং-এর অ আ ক খ টুকু জানতে পারে তারই জন্য এ উদ্যোগ। ক্লাস প্রজেক্ট হিসাবে শুরু হওয়া এই প্রজেক্টি নিয়ে খুব আশাবাদী চা স্ক্রিপ্টের সুপারভাইজার ডঃ নোভা আহমেদ। প্রোগ্রামিংকে ভাষাগত বাধা অতিক্রম করে বাংলায় প্রোগ্রামিং শুরু করার জন্য একটি মাইলফলক চা স্ক্রিপ্ট। প্রশ্ন আসতে পারে ইংরেজিতে এতো প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ থাকতে কি বাংলাতে ফিরে যাবার প্রয়োজনীয়তা কি আছে? আসলে এটি প্রোগ্রামিংকে বাংলা ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত ছাত্রদের মাঝে পরিচয়ের সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করবে। পরিচিত হওয়ার পর কেউ চাইলেই নিজের প্রয়োজনে পরবর্তীতে অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের ব্যাবহার সহজেই আয়ত্ত করতে পারবে। ডঃ নোভা আহমেদের মতে, এটার লক্ষ্য হল অষ্টম শ্রেণির বা সমমানের নবীন ছাত্ররা যারা মাত্র এলজেব্রার সাথে পরিচিত হচ্ছে, চা স্ক্রিপ্ট ব্যাবহার করে তারা যেমন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে, তেমনি পরিচিত হতে পারবে নতুন সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্রের সাথে।
এবার চা স্ক্রিপ্ট নিয়ে কিছু বলি। www.chascript.com এই ঠিকানায় গেলে চা স্ক্রিপ্টের হোম পেজ আসবে। চা স্ক্রিপ্ট মূলত সম্পূর্ণই Jison(JavaScript parser generator) ব্যবহার করে পার্সড করা যা ECMA স্ক্রিপ্ট এর কাঠামোর উপর নির্ভরশীল। জাভাস্ক্রিপ্টের ফ্লেভারে তৈরি এই স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজটির নির্মাতারা সকলের সুবিধার্তে একটি কোড এডিটার সংযোজন করে দিয়েছেন এর ওয়েবসাইটেই। একই সাথে ল্যাংগুয়েজটিকে সকলের কাছে সহজ করে তোলার একটি প্রয়াস হিসেবে ডাইনামিক ভ্যারিয়েবল কাস্টিং এর ব্যবহার করেছেন। ডাইনামিক ভ্যারিয়েবল কাস্টিং হল কোন ভ্যারিয়েবলকে ল্যাংগুয়েজে একই সাথে ইন্টিজার, ক্যারেক্টার, স্ট্রিং অথবা অন্য যে কোন টাইপ হিসেবে ব্যবহার করা! আলাদা করে ডিক্লেরেশনের ব্যাপার নেই। বাংলা লেখার ক্ষেত্রে বাংলা ইউনিকোড ব্যবহার করতে হবে; যেমন- অভ্র কিবোর্ড। যারা একদম নতুন তাদের জন্য প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ বাংলাতে ভিডিও টিউটোরিয়ালের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও কিছু সাধারন উদাহরণও রয়েছে সেখানে। চা স্ক্রিপ্টের সব থেকে ভাল দিকটি হল এতে ইন্সটল করার কোন ঝামেলা নেই। অনলাইনে বসেই এডিটরে কোড করা সম্ভব। পাশে ফলাফল দেখানোর জন্য আরেকটি অংশ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। অফলাইনে কোড করতে আগ্রহীদের জন্য ডাউনলোডেবল ভার্সনও আছে।
মজার ব্যাপার হল, এখানে কোন ‘রেডি স্টেডি গো’ বলে কিছু নেই! কোডের শুরুতে-শেষে কিছুই লেখার দরকার নেই। নেই প্রয়োজন ডাটা টাইপ ডিক্লের করার। এখানে স্মার্ট কোড এডিটর কোডারের দেওয়া কম্যান্ডকে নিজেই অনুধাবন করে তাকে সম্পন্ন করার চেষ্টা করে। সময় বাঁচানোর জন্য চাইলেই কিওয়ার্ড বক্স থেকে দরকারী কিওয়ার্ডটি বেছে নেওয়া যাবে। কিওয়ার্ডে চাপ দিয়েই পেস্ট করে নেওয়া যাবে প্রয়োজন মতো ফাংশন। কোড সেভ করে রাখা যাবে সহজে। আবার ইউনিকোড বাংলায় কোড লিখে(.txt ফরম্যাটে) রেখে তাকে অনলাইন এডিটরে লোড করেও রান করানো যাবে।
অন্যান্য ভাষায় প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের থেকে চা স্ক্রিপ্টসের ভিন্নতা হল এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি প্লাটফর্ম। চাইনিজ বা কোরিয়ান বেশীরভাগ ল্যাংগুয়েজগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেগুলো সি, জাভা বা পাইথন এই ধরনের ল্যাংগুয়েজের রুপান্তর মাত্র। এক্ষেত্রে চা স্ক্রিপ্ট নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবীদার। যদিও একদম প্রাথমিক অবস্থায় আছে চা স্ক্রিপ্ট, আমাদের বিশ্বাস ও কামনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর উন্নয়নে আরও অবদান রেখে যাবেন। চা-স্ক্রিপ্ট বাঙালিদের জন্য খুলে দিক নতুন সম্ভাবনার দ্বার। শুভকামনা রইল নির্মাতা দল এবং চা স্ক্রিপ্টের জন্য।
চা স্ক্রিপ্টের ফেইসবুক পেজঃ চা স্ক্রিপ্ট
তথ্যসূত্রঃ
১) http://www.chascript.com/
২) http://en.wikipedia.org/wiki/Non-English-based_programming_languages
৩) http://en.wikipedia.org/wiki/Non-English-based_programming_languages
৪) http://www.prothom-alo.com/technology/article/265684/
এ. এইচ. এম. আজিমুল হক রিফাত
দ্বিতীয় বর্ষ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং
আইআইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
দারুণ উদ্যোগ। বাংলা ভাষার জয়
দারুণ উদ্যোগ। বাংলা ভাষার জয় হোক।
অবশ্যই। জয় হোক বাংলা ভাষার।
🙂 অবশ্যই। জয় হোক বাংলা ভাষার।
ওয়েবসাইটিতে ঢুকেছিলাম। দীর্ঘ
ওয়েবসাইটিতে ঢুকেছিলাম। দীর্ঘ দিন ইংরেজি ভাষায় প্রোগ্রাম করায় একটু আন ফ্যামিলিয়ার লাগছে। তারপর ও নুতুন কিছু করার জন্য উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন।
আনফ্যামিলিয়ার লাগার পেছনে
আনফ্যামিলিয়ার লাগার পেছনে সম্ভবত আরেকটা কারণ আছে, এইখানে সরাসরি এক্সেকিউটিং কোড লিখতে হয়, কোন বিসমিল্লাহ্ নাই… 😛
[প্রসঙ্গত, আপনি যেহেতু রুয়েটের একজন সাবেক ছাত্র, লেখাটা আমি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অব রুয়েট-এর ত্রৈমাসিক বিজ্ঞান পত্রিকা ধ্রুবতারা’র জন্য লিখেছিলাম। ভালো থাকবেন। 🙂 ]
চমৎকার একটা সংবাদ… দেশে
চমৎকার একটা সংবাদ… দেশে প্রোগ্রামারের সংখ্যা এবার বাড়বেই। চা স্ক্রীপ্ট এগিয়ে যাক দূর্দান্ত গতিতে। লোগোটাও আকর্ষণীয়।
আপনার মত আমিও সে স্বপ্নই
আপনার মত আমিও সে স্বপ্নই দেখি… 🙂 এগিয়ে যাক বাংলাদেশ
দারুণ উদ্যোগ। অভিনন্দন।
দারুণ উদ্যোগ। অভিনন্দন।