আমি নিশ্চিত, কাজী নজরুল ইসলাম নামে আমাদের দেশে কোনও কবি ,গীতিকার, সুরকার, সাহিত্যিক কোনোদিন জন্মান নি। নজরুলগীতি বা নজরুলের কবিতা বলে আমরা আজকাল যা শুনি, তা লোকমুখে সৃষ্ট সাহিত্য। কিছু প্রবাদ, কিছু গুজব। সম্ভবতঃ নজরুল ছিল একটি ঝড়ের নাম, যা আইলা-র মতো বাংলার জল মাটি মানুষদের তোলপাড় করে দিয়েছিল কয়েক বছরের জন্য।
নজরুল কোনও রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন না, তার বড় প্রমাণ হল এই, যে ভাবনার এতো বৈচিত্র, ভাষা ছন্দ ও আবেগের অমন মিশেল কোনো রক্তমাংসের মস্তিষ্কে আসবে না। আসতে পারে না। যে বিদ্রোহী কবি বলছেন,
‘আমি মানিনাকো কোনও আইন, আমি ভরা তরী করি ভরাডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন’,
আমি নিশ্চিত, কাজী নজরুল ইসলাম নামে আমাদের দেশে কোনও কবি ,গীতিকার, সুরকার, সাহিত্যিক কোনোদিন জন্মান নি। নজরুলগীতি বা নজরুলের কবিতা বলে আমরা আজকাল যা শুনি, তা লোকমুখে সৃষ্ট সাহিত্য। কিছু প্রবাদ, কিছু গুজব। সম্ভবতঃ নজরুল ছিল একটি ঝড়ের নাম, যা আইলা-র মতো বাংলার জল মাটি মানুষদের তোলপাড় করে দিয়েছিল কয়েক বছরের জন্য।
নজরুল কোনও রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন না, তার বড় প্রমাণ হল এই, যে ভাবনার এতো বৈচিত্র, ভাষা ছন্দ ও আবেগের অমন মিশেল কোনো রক্তমাংসের মস্তিষ্কে আসবে না। আসতে পারে না। যে বিদ্রোহী কবি বলছেন,
‘আমি মানিনাকো কোনও আইন, আমি ভরা তরী করি ভরাডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন’,
আবার তিনিই প্রেমিক হয়ে বলছেন ‘
তোমার অধরে আঁখি পড়ে যবে, অধীর তৃষ্ণা জাগে, মোর কবিতায় রস হয়ে সেই তৃষ্ণার রঙ লাগে।’
বহু জনপ্রিয় রাধাকৃষ্ণের গান বেঁধেছেন তিনি “গোঠের রাখাল বলে দে রে কোথায় বৃন্দাবন” বা “গগনে কৃষ্ণমেঘ দোলে”, লিখেছেন কালিকীর্তন “বল রে জবা বল”, আবার একই সঙ্গে লিখেছেন “আর কতকাল থাকবি দেবী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল? স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।” ইনি কি ভক্ত, নাকি ভণ্ড? শিশুসাহিত্যে যাঁর অনবদ্য অবদান ‘লিচু চোর’ বা ‘কাঠবিড়ালি’, তিনিই কি কখনো ‘নিদ্রিত শিবে লাথি মেরে জাগা’ বলে হুংকার দিয়ে উঠতে পারেন? কোনও কাজী কোনোদিন লিখতে পারেন “আল্লার আজ ছাল তুলে দেব, মেরে তাগ দেগে কোঁড়া”?
আবার তিনিই বলেছেন “মম চরণের তলে মরণের মার খেয়ে মরে ভগবান!”
আপাদমস্তক ব্যাতিক্রমী। যেমন অসাম্প্রদায়িক, তেমন বেহিসেবী। অর্থোপার্জনের জন্য মাস্টারি করেছেন, মসজিদের ইমামতি করেছেন, চা-রুটির দোকানে কাজ করেছেন, যুদ্ধেও গেছেন।গান লিখেছেন, সুর দিয়েছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে জেল খেটেছেন, ‘ধুমকেতু’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তাতেই পূর্ণ স্বরাজের প্রথম দাবী। সাহস, সত্যবচন, মানবিকতা, এই তিনেরই পরাকাষ্ঠা ছিলেন তিনি। তাঁর শত্রুর সংখ্যা কম ছিল না, কিন্তু তিনি কোনও কিছুরই পরোয়া করতেন না। নিজেরা যা বলি, তা ব্যক্তিগত জীবনে কতজন পালন করতে পারি? ইনি করেছেন, সমস্তটুকু।
খাঁটি মানুষ। উচ্চমানের গীতিকার ও সঙ্গীতকার। গান গাইতেন সুন্দর, বাঁশিও বাজাতেন ততোধিক সুন্দর। কবিতায় কখনো আগুন জ্বেলেছেন, কখনো প্রেমের সুবাতাস বইয়েছেন, কখনো ছুটিয়েছেন হাসির ফোয়ারা। ইচ্ছামতোন। এ কি কোনও রক্তমাংসের মানুষের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব?
তাছাড়া, যদি এমন মানুষ সত্যিই আমাদের দেশে জন্মাতেন, আমরা কি তাঁর কাছে থেকে কিছুই শিখতাম না? এত সাম্প্রদায়িক মনোভাব, এত সংকীর্ণতা, এইসব কি এতদিনে দূর হয়ে যেত না? নজরুলের দেশে এত মিথ্যাচার, স্বার্থপরতা ভণ্ডামি কিভাবে হতে পারে?
নাহ, কাজী নজরুল ইসলাম নামে কখনোই রক্তমাংসের কবি সাহিত্যিক ছিলেন না। উনি আমাদের মনগড়া এক প্রবাদপ্রতিম চরিত্র ।
#তথ্যসূত্র- প্রকল্প ভট্টাচার্য
হুম ভালো লাগলো
হুম ভালো লাগলো