প্রজন্ম মঞ্চ থেকে যেদিন প্রথম মহাসমাবেশ এর ডাক দিল, একবারের জন্য চোখ সরাইনি টিভি’র পর্দা থেকে। বাড়ী তে মেহমান। সেতু একটু রাগ করেই বললো, “শাম্মী/লিমারা আসছে আর তুমি টিভি দেখছ?” কিন্তু কিভাবে বুঝাই তাকে শাহবাগ মঞ্চের প্রতি আমার আবেগের কথা। হঠাত আমার চোখ পড়ে গেল মঞ্চের উপর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মি. নাজমুল সাহেবের উপর। কেন জানিনা মুহূর্তেই আমার সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষা চুপছে গেল। যে ছাত্রলীগের হাত কয়েক দিন আগেই রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বিস্বজিতের রক্তে, যে ছাত্রলীগের হাতে মাত্র কিছু দিন পূর্বে বাংলাদেশ কৃষি বিস্ববিদ্যালয়ে ছোট্ট একটি বাচ্চা নিহত হয়েছে তারাই কিনা আজ গনজাগরন মঞ্চে!!!!! হায়রে আমার স্বপ্ন!!!! স্বপ্নই বুঝি থেকে যাবে……কেন জানিনা ঐ দিন বুকের ভেতর খুব শূন্যতা অনুভব করছিলাম। এতো বড় একটা জাগরন, এতো বড় একটা আন্দোলনের করুন মৃত্যু হবে… এই আশংকা মনের মাঝে বার বার উঁকি দিচ্ছিল।
কিন্তু তারপরো বিশ্বাস হারাইনি। এক মুহূর্তের জন্য চোখ সরাইনি টিভি পর্দা থেকে।
শুনছিলাম সবার বক্তব্য। কেন জানিনা অন্য রকম একটা ভালো লাগছিল। সত্যি সময় এসেছে জাতিকে কলংক মুক্ত করতে। শাহবাগ আন্দোলনের শুরুতে আমি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ঠিক এরকমঃ
“বন্ধুদের লেখা গুলো পড়ে চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারছি না। বাইক দুর্ঘটনায় পা এ ব্যাথা না পেলে অবশ্যই শাহবাগ এ যেতাম। একাত্মতা প্রকাশ করতাম। এখনো করছি। কিন্তু ঘরে বসে। খুব কোস্ট হচ্ছে। এটা নংরা রাজনিতির রায়। যুদ্ধোপরাধীদের বিচার নিয়ে যারা রাজনীতি করছে, তারাই এখন সবচেয়ে বড় যুদ্ধোপরাধী। এদের কাছে বিচার টিচার কিছু না। এদের কাছে রাজনীতিটাই বড়। এজন্য স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর মুখে আজ জামাতের সুনাম শুনা যায়।
সুতরাং আমি বিচার চাচ্ছি না। আমি ফাসী চাচ্ছি না। আমি চাই ৭১ এর প্রতিটি শহীদের আত্মা যেন এই জঘন্য খেলা যারা খেলছে, তাদের যেন অভিশাপ না দেয়। আমাদের অভিশাপ হয়ত বিধাতা অগ্রায্য করতে পারেন, কিন্তু শহীদদের আত্মার অভিশাপ কখনই বিধাতা ফেলতে পারবে না। আমি চাই না শহীদের আত্মার অভিশাপ যেন এই জাতির উপর ভর না করে ”
কিন্তু পরবর্তীতে গনজাগরন মঞ্চের কমিটিতে ছাত্রলীগের নাম দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। ঐ সময় আমার মনের অভিব্যক্তি ছিল ঠিক এরকমঃ
“সত্যি এটা আমাদের আবেগের ব্যাপার ছিল। কিন্তু এইটা একটা সুযোগ ছিল দেশের রাজনীতি পলিসি কে পরিবর্তনের। কিন্তু সত্যি অবাক লাগে অসহায় এর মতো আত্মসমর্পণ দেখে। কমিটি তে ছাত্রলীগের নাম দেখে যাদের হাত এখনো বিশ্বজিতের রক্তে রঙিন, যাদের হাত থেকে এখনো শুকায়নি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহিত সেই অবুঝ শিশুটির রক্ত। আজ তারাই কিনা এতো বড় আন্দোলনের নেতৃত্বে। সত্যি অবাক ব্যপার”
সত্যি এটা ছিল অবাক করার মতো। রসায়ন পরীক্ষা চলছে ঠিকি, তবে নকল করে পরীক্ষা দেওয়ার তো কোন মানে হয় না। এতো বড় একটা আন্দোলনের সাথে ইমেজ ক্রাইসিসে ভুগা ছাত্রলীগ/ ছাত্রদল কে জড়ানো মানে হল নকল করে পরীক্ষা দেয়ার মতোই ব্যাপারটা। (চলবে)