এই বাংলার শাসকশ্রেণী কিন্তু খুব ”অনুভূতিপ্রবণ”। ভী ষ ণ সফট মাইন্ডেড !!! তারা ”ধর্মীয় অনুভূতি” রক্ষার ক্ষেত্রেও বীর সিপাহশালার। ব্লগার রাজিবকে ‘শহীদ’ উপাধি দেয়া এই অনুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ, সন্দেহ নাই।
কে বলে এই দেশ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নিমজ্জিত? ৪৩ বছরে রাজাকারদের বিচার না হতে পারে, কিন্তু রাজাকারদের বিচার প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে, ব্লগে স্বাধীন মত প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করতে কোন জটিলতা নাই, নাই কোন আমলাতান্ত্রিকতা। আইন পাস, ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচারক নিয়োগ, তালিকা প্রণয়ন, গ্রেফতার, রিমান্ড চাওয়া ও মঞ্জুর হওয়া—- ইত্যাদি যেন ভোজবাজির ঘটে গেল !!!
এই বাংলার শাসকশ্রেণী কিন্তু খুব ”অনুভূতিপ্রবণ”। ভী ষ ণ সফট মাইন্ডেড !!! তারা ”ধর্মীয় অনুভূতি” রক্ষার ক্ষেত্রেও বীর সিপাহশালার। ব্লগার রাজিবকে ‘শহীদ’ উপাধি দেয়া এই অনুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ, সন্দেহ নাই।
কে বলে এই দেশ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নিমজ্জিত? ৪৩ বছরে রাজাকারদের বিচার না হতে পারে, কিন্তু রাজাকারদের বিচার প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে, ব্লগে স্বাধীন মত প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করতে কোন জটিলতা নাই, নাই কোন আমলাতান্ত্রিকতা। আইন পাস, ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচারক নিয়োগ, তালিকা প্রণয়ন, গ্রেফতার, রিমান্ড চাওয়া ও মঞ্জুর হওয়া—- ইত্যাদি যেন ভোজবাজির ঘটে গেল !!!
এই শাসকশ্রেণী শুধু অনুভূতিপ্রবণই নয়। তারা অন্যের অনুভূতিকে শ্রদ্ধাও করতে জানে বেশ। যেমন ধরেন বিদেশি কূটনীতিকদের কথা । তাদের অনুভূতিকেও ব্যাপক শ্রদ্ধা করেন আমাদের মহান শাসকরা। তারা চা খাওয়ার দাওয়াত দিলে অন্যান্য সব কাজ ফেলে রেখে, এমনকি হিংসা-দ্বেষ ভুলে গিয়ে এক কাতারে শামিল হয়ে যান নিমেষে, যেন ”মাননীয়”রা তাদের বহুজাতিক অনুভূতিতে এক ছটাক আঘাতও না পান !!! তারা (বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত) যেন বোরিং ফিল না করে, সে কারণে তাকে দেশের বিভিন্ন জেলায়, উপজেলায় ঘুরে ঘুরে জ্ঞান দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। যেন তারা কখনই নিজেদের ‘পর’ না ভাবেন !!! তারা যেন আত্মার আত্মীয় !!!
বাংলাদেশের মানুষকে যখন সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে খুন হতে হয়, তখন কিন্তু এই শাসকরা খুব আঘাত পান, কাতর হয়ে পড়েন একদম। সেই কারণেই হত্যাকারী ভারত রাষ্ট্র যখন হত্যাকাণ্ডকে ”স্বাভাবিক মৃত্যু” হিসেবে চিহ্নিত করে, তখন আমাদের অনুভূতিপ্রবণ, কাতর শাসকশ্রেণী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন !!! ”হত্যা” কি নৃশংস শব্দ !!! ”স্বাভাবিক মৃত্যু”ই এটা। স্বাভাবিক মৃত্যু বললে যেন কেমন শান্তি শান্তি লাগে !
সারাদেশ জুড়ে চলমান সহিংসতায় এই সরকার ব্যাপক অনুভূতিপ্রবণ, আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো মানুষের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে গুলি করে ‘জীবণ জ্বালা’ নিভিয়ে ফেলার হুকুমই দিয়ে ফেলেছেন !!! গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে, জেল দিয়ে কষ্ট বাড়ানোর কি দরকার !!! গডফাদারদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থাকলে থাকুক, টর্চার সেল থাকলে থাকুক —”মুক্তিযুদ্ধের চেতনা”র প্রতি আবেগ তো আর বাদ দেয়া যাবে না! এই আবেগ শেষ হলে যে রাজনৈতিক জীবনই শেষ !!!
আরেকগ্রুপ ”আবেগপ্রবণ নেতা পতঙ্গ” জনগণের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে করতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায়। জেলায় জেলায় ঘুরে ঘুরে হরতাল ফেরি করে বেড়াচ্ছেন তারা। ইশ!!! জনগণের জন্যই এই হরতাল-জ্বালাও-পোড়াও, কিন্তু জনগণই বুঝতে চায় না।
সুশীল সমাজের আবেগ টা তো রীতিমত মারভেলাস। মাহমুদুর রহমান মান্নার কথাই ধরেন না— কি তুখোড় আবেগি ছাত্রনেতা, বর্তমানে দুঁদে সাংবাদিক। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার আবেগ … আহ!!! তার বক্তব্য শুনলেই চোখের সামনে ৭১’ দেখা যায়, আর দেখা যায় জামাত- শিবিরের প্রতি ঘৃণার মূর্ত রূপ !!! সে কিনা ইসলামী ব্যাংকের ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে একেবারে মঞ্চে আসীন !!!
বন্ধুরা, এই ‘তুখোড় অনুভূতিপ্রবণ ও ভয়াবহ আবেগপ্রবণ’ শাসকশ্রেণীর হৃদয় নিংড়ানো আবেগ আছড়ে পড়ে, লেপ্টে থাকে গদির কুশনে । তাদের আবেগের সমার্থক শব্দ ভন্ডামী । তারা আবেগ পরিমাপ করে ডিজিট দিয়ে । তাদের কাছে ‘ধর্মীয় অনুভূতি’ মানে ক্ষমতায় যাওয়ার মই । তারা ধর্মের ইনসাফ বোঝে না, তারা বোঝে ধর্মীয় সহিংসতা।
কিন্তু মানুষকে ভালবাসতে প্রথমে প্রয়োজন মানুষ হওয়া। মানুষকে সংখ্যা দিয়ে কিংবা ভোট দিয়ে মাপামাপি করে মহাজন। মানবীয় অনুভূতি সম্পন্ন মানুষই পারে ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করতে। প্রশ্ন হলো— ৪৩ বছর ধরে বাংলাদেশে যে শাসক গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে তারা কতোটা ”মানুষ” আর কতোটা ”মহাজন” ???