বাঙালী মুসলমান পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে- ঈদ, বিবাহ, খৎনা, আকিকা, কুলখানি, চল্লিশা, শবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে কদর-সহ বিশেষ বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান ছাড়া আমাদের আর কোন উৎসব পালনের রেওয়াজ ছিল না। আমাদের পরিবার প্রথাগত ধার্মিক হওয়ার কারণে- পহেলা বৈশাখ, নিউ ইয়ার, কেক কেটে জন্মদিন পালনকে বিধর্মীর অনুকরণ বলে, এইসব পালন করা থেকে আমাদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হত।
বাঙালী মুসলমান পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে- ঈদ, বিবাহ, খৎনা, আকিকা, কুলখানি, চল্লিশা, শবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে কদর-সহ বিশেষ বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান ছাড়া আমাদের আর কোন উৎসব পালনের রেওয়াজ ছিল না। আমাদের পরিবার প্রথাগত ধার্মিক হওয়ার কারণে- পহেলা বৈশাখ, নিউ ইয়ার, কেক কেটে জন্মদিন পালনকে বিধর্মীর অনুকরণ বলে, এইসব পালন করা থেকে আমাদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হত।
ছোটবেলা দেখতাম- স্থানীয় মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিনকে দাওয়াত দিতে এনে কোরআন খতম, মিলাদ মাহফিল, শিরনী বিতরণ করা হত। সে উপলক্ষে কাছের, দূরের আত্মীয়দের বিপুল সমাগম হত। এই ছিল আমাদের জন্মদিন পালন। এই নিয়ম বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। কয়েকবছর পর আমি ছাড়া আর কারো মনেই রইলো না- কবে আমার জন্মদিন, কবে আমি জন্মেছিলাম!
একটু বড় হবার পর আমি আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে কেক, মোমবাতি, বেলুন কিনতাম। তারপর চাচাতো-ফুফাতো ভাই-বোনদের নিয়ে লুকিয়ে কেক কেটে জন্মদিন পালন করতাম।
কয়েকবছর পর ফুফুরা বাসা পরিবর্তন করে দূরে চলে গেল। ভাই-বন্ধুরা চলে যাওয়ার ফলে আমি একা হয়ে পড়লাম। একা একা জন্মদিন পালন করা যায়? জন্মদিন এখন অন্তর্জালে শুধুমাত্র শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাঝে সীমাবদ্ধ।
এরপর সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। “মাছ-মাংস খাই না” এই অজুহাতে বিবাহ, খৎনা, আকিকা, কুলখানি, চল্লিশাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। এখনও যাই না। (না যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। স্থান ও সময়ের অভাবে পরে লিখব।)
পরিবারের আর সবার মতো হয়ত আমিও দিনটি ভুলে যেতাম। কিন্তু ভুলতে পারিনি।
তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়তাম। আম্মু বললেন- আজ স্কুলে যেতে হবে না। হাজাম আসবে, তোমাদের (আমি আর চাচাতো-ফুফাতো দুই ভাই) মুসলমানি (খৎনা) করা হবে।
আমি আগেই ধারণা পেয়েছিলাম মুসলমানি (খৎনা) হচ্ছে লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়ার বাড়তি অংশ কেটে ফেলা। আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম- মুসলমানি করা হবে কেন? আমি কি হিন্দু নাকি?
আম্মু বললেন- মুসলমানি হচ্ছে মুসলমানদের পরিচয়। মুসলমানি করলে হিন্দু এবং মুসলমানের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি হয়। তাই করতে হবে।
আমি বললাম- সবাই বলে আমাদের স্কুলের বাদল স্যার হিন্দু, আশরাফ স্যার মুসলমান। কিন্তু আমি তো তাদের মাঝে কোন অমিল বা পার্থক্য খুঁজে পাই না। তাদের মাঝে পার্থক্য দেখার জন্য কি বলব- স্যার আপনার প্যান্ট খুলুন, আপনি হিন্দু না মুসলমান দেখবো!
আম্মু বললেন- তোমাকে এতো বেশি বুঝতে হবে না। যাও, গোসল করে লুঙ্গী পড়ে বসে থাকো।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বাধ্য ছেলের মতো গোসল করে লুঙ্গী পড়ে চাচাতো-ফুফাতো ভাইদের কাছে গেলাম। ওরা আমার কয়েক বছরের বড়। ওদের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারছিলাম ওরা ভয় পাচ্ছে। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছিলাম না, তবে অস্থির ছিলাম। প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ায় আমার মাঝে সংশয় কাজ করছিল।
চিন্তা করছিলাম- আমাদের পরিচয় যদি হয় আমরা মানুষ। তারপর ধর্ম অনুযায়ী কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান। নাম শুনেও হিন্দু-মুসলমান চেনা যায় না। তবে কেন আমাদের মাঝে এতো পার্থক্য? কাপড়ের নিচে থাকা লিঙ্গ কিভাবে আমাদের পরিচয় হবে?
হাজাম বিকেলে আসলো। সবার ছোট হওয়ার কারণে আগে আমার মুসলমানি করা হল। আমি ঐ বিষয়ে চিন্তিত থাকায়, সামান্য জ্বলুনি ছাড়া কিছু টের পাইনি। কিন্তু চাচাতো-ফুফাতো দুই ভাইয়ের চিৎকার শুনে মনে হচ্ছিল- বাড়তি চামড়ার অংশ নয়, তাদের লিঙ্গই কেটে ফেলা হয়েছে।
দিনটি ছিল ২৩শে মার্চ (সে বার জন্মদিন পালন করা হয়নি)। এইদিনটি আমাকে পরবর্তীতে প্রথাবিরোধী হতে শিখিয়েছে।
অন্তর্জালের কল্যাণে অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে। জাতি-গোত্র-বর্ণ ভিন্ন হলেও, কেউ ভাই, কেউ বোন, কেউ বা বন্ধুরূপে… তাদের কারণেই এই লেখা।
সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি- ২৩শে মার্চ দিনটি মনে রাখার জন্য; মনে রাখানোর জন্য।
এই দিন তো আপনার জন্য আসলেই
এই দিন তো আপনার জন্য আসলেই বিশেষ দিন। 😀
বিলম্বিত শুভ জন্মদিন। :ফুল:
সে আর বলতে…
অনেক ধন্যবাদ।
সে আর বলতে… :ভেংচি:
অনেক ধন্যবাদ। :ফুল: