খুব সহজ! না, আপনাকে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হবে না বোঝার জন্য যে আপনি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পোষক। শতাব্দি ধরে চলে আসা পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার সোজাসাপ্টা কয়েকটা উদাহরণ দেইঃ
১. বছর কয়েক হল নারী দিবস দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। শহুরে বুটিকগুলোতে, সংবাদপত্রের পাতায় পাতায়, কর্পোরেট অফিসগুলোতে বেশ ঢাক ঢোল পেটানো হয়। পার্পল শাড়ি, সালোয়ার কামিজে সেজেগুজে অফিস যায় কর্মজীবী মেয়েরা। পুরুষ সহকর্মীরা এদিনটিতে তাদের হাতে গুঁজে দেয় শুভেচ্ছা স্মারক ফুল। কেক কাটা হয়, গল্পগুজব হয়, ফেসবুক জুড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়, ছবি আপলোড করা হয়। টিভি চ্যানেলগুলো আরোও একধাপ এগিয়ে- কে কার চেয়ে ইউনিক আইডিয়া নিয়ে নারী দিবসের রিপোর্ট করতে পারে, ভিন্নতর বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে সবাই যেন সেই প্রতিযোগিতায় নামে।
সেদিন ফেসবুকে এক ভদ্রমহিলার শেয়ার করা একটা ছোট্ট ঘটনা পড়ছিলাম। ভদ্রমহিলার বাসায় কাজ করে মধ্য বিশের এক মেয়ে, প্রচলিত শব্দে যাকে বলে বাসার বুয়া। প্রথম স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর মেয়েটি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছে। এই বর্তমান স্বামীটি বেকার, ভবঘুরে আবার নেশাও করে।এক সকালে মেয়েটি ওই ভদ্রমহিলার বাড়িতে কাজে এসেছে কালশিটে পড়া চেহারা নিয়ে- সহজে অনুমেয় গতরাতে মাতাল স্বামী আবারো মেরেছে। ভদ্রমহিলা কিছুটা বিরক্ত হয়ে মেয়েটিকে প্রশ্ন করল, এই যে রোজ রোজ মার খাও ওই লোকটার হাতে, তোমার রোজগারের সব টাকা-পয়সা নিয়ে যায় সে, সংসারে যার বিন্দুমাত্র কোন অংশগ্রহণ নেই, কেন তাহলে আবারো বিয়ে করা?
কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা আ্যপলিকেশন ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে দুটো প্রশ্ন এবং তার সম্ভাব্য উত্তর আমার নজর কেড়েছে। জেন্ডার বা আর জেন্ডার ওরিয়েন্টেশনের প্রশ্নে সম্ভ্যাব্য সকল অপশনের সাথে একটা চমৎকার অপশন ছিলঃ আই ডু নট ওয়ান্ট টু ডিসক্লোজ মাই জেন্ডার অর জেন্ডার ওরিয়েন্টেশন । এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে আমার সবসময়ের পছন্দ- আমার জেন্ডার আর জেন্ডার ওরিয়েন্টেশন আমি অপ্রকাশ্য রাখতে চাই।
সাহানা বাজপেয়ী আমার খুব প্রিয় একজন সংগীত শিল্পী। কয়েকদিন আগে তার ফেইসবুকের পাতায় পোস্ট করা একটা ছবি নজর কাড়লো বলেই আজ লিখতে বসলাম। সাহানা প্রফেশনাল শিল্পী, অনেক স্টেজ প্রোগ্রাম করেন। সাম্প্রতিক একটি অনুষ্ঠানে তিনি গাইছেন, এর মাঝেই তার তিন-চার বছরের মেয়েটি তাকে জড়িয়ে ধরে আছে- এমন একটি ছবি সবার সাথে তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। এ ছবিটি একজন কর্মজীবি মায়ের ছবি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আরেকটি ছবি সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে ভারতের এক মহিলা ব্যাংক কর্মকতর্া অফিসের চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করে চলেছে, পিছনে মেঝেতে দুধের বোতলমুখে শুয়ে আছে তারছোট্ট জ্বরাক্রান্ত শিশু সন্তানটি। এটিও একটি কমর্জীবী মায়েরই ছবি।
মাত্র আঠারো ঘণ্টার নোটিশে বিয়ে হল শামার (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যে পড়ুয়া চটপটে মেয়ে সে। পাত্র পাওয়া গেল মনের মতন। তাই পরিবার থেকে শেষ মুহূর্তে ওকে জানানো হলো-ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে। বাসর ঘরে বসে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে করতে শামা মনে মনে ঠিক করছিল কীভাবে শুরু হবে দু‘জনের বন্ধুত্ব, সারাজীবনের পথচলা।
কিন্তু বর্তমান সময়ের বেশ কিছু রিসার্চারেরা তথ্য আর যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে সমকামিতার জন্য ইসলামে যে ধরণের শাস্তির কথা আমরা শুনে থাকি, তার কোন ভিত্তি কুরআন বা সুন্নাহতে পাওয়া যায় না। ।
“Progressive Muslims: On Justice, Gender, and Pluralism” গ্রন্থে যুক্তরাষ্ট্রের এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Scott Kugle দেখিয়েছেন যে জেন্ডার ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যের ব্যাপারে ইসলাম অনেক উদার। Kugle তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ইসলাম সমকামী মানুষদের পরিত্যাগ করে না। বরং ইসলামে তাদের জায়গা আছে।
মানুষ সামাজিক জীব, অথচ তার আচরন মূলত অসামাজিক- আমার এক বন্ধুর এই বাণী আমাদের আজকের জীবন ব্যবস্থাকে খুব নিখাদভাবে বর্ননা করে। আমরা অন্য সবার সাথে পাশাপাশি বসবাস করি বটে, তবে সে সহাবস্থান আমাদেরকে কাছাকাছি আনতে পারে না তেমন। বড় শহরের পাশের বাড়ি তো দূরের কথা, পাশের ফ্ল্যাটে কে বা কারা থাকে তাই জানা হয়ে ওঠে না আমাদের। এই যান্ত্রিক জীবনে যন্ত্র হয়ে উঠতে পারার স্বান্তনা কিংবা যন্ত্র-মানব না হতে পারার যন্ত্রনা - এ দুয়ের সম্মিলনই শহুরে কেতাদুরস্ত দৈনন্দিন যাপিত জীবনের সংগা।
সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আজ থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। আমাদের দেশে রোজার শুরু আগামীকাল থেকে। রোজা বা রমজান হল আরবী নবম মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে বলে মুসলমানেরা বিশ্বাস করে। পুরো এক মাস জুড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা।
বছর পনের আগের কথা। আমাদের মহল্লার এক ছটফটে তরুনীর বিয়ে হল খুব ঘটা করে। মেয়ে দেখার দিনে ছেলে অনুপস্থিত কিন্তু ছেলেপক্ষ ডায়মন্ডের আংটি নিয়ে এসেছিল সাথে করে, মেয়ের আঙুলের মাপ না জেনেই। ঢ্যাঙা গোছের শ্যামলা মেয়ের হাতের চা খেয়ে দামী গাড়িতে চড়ে আসা ছেলের মা, মিসেস চৌধুরি এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে নিজের হাতের বেশ চওড়া বালাগুলো তৎক্ষনাৎ খুলে মেয়েটির হাতে পরিয়ে দিতেও এক মুহূর্ত দেরি করেননি। শুকনো দুহাতে ঢলঢলে বালাদুটো পরে মেয়েটা যখন বিকেলে পাড়ার আর সব মহিলা আর সমবয়সী মেয়েদের সাথে আড্ডা দিতে আসত, আমার কেন যেন হাতে বেড়ি পরা জেলখানার কয়েদী মনে হত ওকে। টানাপোড়েনের সংসারে বেড়ে ওঠা মেয়ে